দুপুরের পর জীপের শব্দ শোনা গেল। ডিউক এসেছেন। বসার ঘরে ছুটে গেল সবাই।
জুলিয়ান কই? নিয়ে এলে না কেন? স্বামীকে ঢুকতে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল ভিকি।
বিষণ্ণ, থমথমে হয়ে আছে শিক্ষকের মুখ। শুধু কালো চোখদুটোয় বেদনা। শেরিফ নিয়ে আসবে। আমাকে চলে আসতে বলল, তোমাকে বোঝাতে।
সামান্য স্বস্তি যা ফিরে এসেছিল, দূর হয়ে গেল আবার ভিকির মুখ থেকে। ককিয়ে উঠল, বিশ্বাস করো, ডিউক, ও চুরি করেনি! করেনি!
আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাসে কি এসে যায়, বলো? ওরা ওকে চিনতে পেরেছে। ক্যারাভানের কাছে নাকি ঘুরঘুর করছিল, তার কিছুক্ষণ পরেই চুরি যায় গহনাগুলো।
ঘুরঘুর করেনি, প্রতিবাদ করল ভিকি। আমাকে তো বলেছে রানুষ কিছু মুখে থালাবাসনগুগেড়িয়ে চলেছে কালই, ওপথে পাহাড়ে গিয়েছিল। আর ঘুরঘুর করলেই কি প্রমাণ হয়ে গেল সে-ই চুরি করেছে? কেউ নিতে দেখেছে?
ওর স্যাডল ব্যাগে বাকলস পাওয়া গেছে।
ছিটকে সরে এল ভিকি। কড়া চোখে তাকাল স্বামীর দিকে।
তুমিও বিশ্বাস করো এসব? জুলিয়ান গহনা চুরি করেছে?
দীর্ঘ এক মুহূর্ত স্ত্রীর চোখে চোখে তাকিয়ে রইলেন শিক্ষক। করতে তো চাই না, ভিকি। কি বলব, বলো?
কেউ আর কিছু বলার আগেই বাইরে গাড়ির শব্দ হলো। জুলিয়ানকে নিয়ে ঘরে ঢুকল শেরিফ।
ছুটে এল ছেলেটা। ফুপুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। তাকে থামানো দূরে থাক, তার সঙ্গে যোগ দিল আরও ভিকি।
কঠোর দৃষ্টিতে তাকাল শেরিফ। জিনিসগুলো কোথায় লুকিয়ে রেখেছে বলল না, এত চেষ্টা করলাম। ওরা বলেছে, গহনাগুলো ফেরত পেলেই খুশি। চার্জ তুলে নেবে। কালই চলে যাচ্ছে ওরা। এর মাঝে বের করে দিলে বেঁচে যাবে জুলিয়ান।
কসম খোদার, ফুপু, কাঁদতে কাঁদতে বলল জুলিয়ান, আমি চুরি করিনি। কোথায় আছে জানি না।
কি করিসনি যে সে তো জানিই আমি, আরও জোরে ভাইপোকে জড়িয়ে ধরল ভিকি। চিবুক ধরে মুখটা তুলে জিজ্ঞেস করল, খিদে পেয়েছে? খেয়েছিস কিছু?
মাথা নাড়ল জুলিয়ান।
ভাল মানুষকে চোর বলে ধরে নিয়ে যায়, আর খাওয়া দেবে ওরা, শেরিফের দিকে তির্যক দৃষ্টি হেনে জুলিয়ানকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল ভিকি।
এগিয়ে গেল কিশোর। নিজের পরিচয় দিল।
গোয়েন্দা, হাহ! বিদ্রূপ ছড়িয়ে পড়ল শেরিফের মুখে।
গম্ভীর হয়ে গেল কিশোর। পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে। দিল। এই যে এটা দেখুন। তাহলেই বুঝবেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারের লেখা সার্টিফিকেট দেখে নরম হয়ে গেল শেরিফ।
ডোন্ট মাইণ্ড। চোর-ছ্যাচড়দের নিয়ে থাকতে থাকতে বদমেজাজী হয়ে গেছি।
শেরিফকে সব খুলে বলল কিশোর। মাঝে মাঝে কথা ধরিয়ে দিল মুসা আর রবিন। রহস্যময় চিঠিটা দেখাল কিশোর।
হুম, গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়ল শেরিফ। তো, তুমি বলছ। ছেলেটাকে কেউ ফাঁদে ফেলেছে?
তাতে কোন সন্দেহ নেই। কাল রাতে পিন্টো ঘোড়া নিয়ে এসেছিল যে লোকটা, সে-ই স্যাডল ব্যাগে বাকলস রেখে গেছে, আমি শিওর। এসেছিলই এজন্যে।
কিন্তু জুলিয়ানকে বিপদে ফেলে কার কি লাভ?
সেটাই তো বুঝতে পারছি না। তাহলে তো রহস্যেরই সমাধান হয়ে যেত এতক্ষণে।
তা ঠিক। তোমার কথায় যুক্তি আছে, কিশোর পাশা, কিন্তু ছেলেটাকে তো ছাড়তে পারি না। সন্দেহের অভিযোগে আটক করতে হয়েছে। ওরা গহনা ফেরত না পেলে, চার্জ না তুললে কিছুই করতে পারছি না।
শেরিফকে অনুরোধ করে লাভ নেই, বুঝতে পারল কিশোর। ভাবনায় পড়ে গেল। হাতে সময় আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা, এর মাঝে রহস্যের সমাধান না করতে পারলে খুব অসুবিধে হবে জুলিয়ানের।
আপনার মিসেসকে একটু ডাকুন তো, প্লীজ, ডিউকের দিকে চেয়ে বলল শেরিফ। কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করি।
উঠতে যাচ্ছিলেন শিক্ষক, হাত তুলে বাধা দিল মুসা। আপনি বসুন। আমিই যাই।
ভিকিকে ডেকে আনল মুসা।
তুমি গিয়ে রান্নাঘরে বসো, মুসাকে অনুরোধ করল শেরিফ। কেন, বুঝতে পারল মুসা। জুলিয়ানকে পাহারা দিতে বলছে।
আবার এসে রান্নাঘরে ঢুকল সে। আরে, জুলিয়ান কই? অর্ধেকটা স্যাণ্ডউইচ পড়ে আছে প্লেটে, দুধের গেলাসটায় তিন ভাগের এক ভাগ দুধ। শেষ করেনি।
ছুটে জানালার কাছে চলে এল মুসা। বাগানের শেষ মাথায় পৌঁছে গেছে জুলিয়ান, আস্তাবলের দিকে ছুটছে।
পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে মুসাও দৌড় দিল।
সে আস্তাবলের কাছে যাওয়ার আগেই ঘোড়ায় চেপে বেরিয়ে গেল জুলিয়ান।
ছুটে আস্তাবলে ঢুকল মুসা। সামনে যে ঘোড়াটা পেল সেটাতেই জিন পরিয়ে এক লাফে চড়ে বসল।
অনেক এগিয়ে গেছে পিন্টো। ওটাকে ধরা সহজ হবে না। যতটা জোরে সম্ভব ঘোড়া ছোটাল মুসা।
চলতে চলতে একটা প্রশ্ন জাগল মনে। কোথায় যাচ্ছে জুলিয়ান? দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল মুসা। জুলিয়ানকে ধরার চেষ্টা করবে না, পিছে পিছে গিয়ে দেখবে ছেলেটা কোথায় যায়।
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অনুসরণ করে চলল মুসা। ইতিমধ্যে দু একবার পেছনে ফিরে তাকিয়েছে জুলিয়ান। একই গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। মা ছোট ছোট পাহাড়ের সারি পেরিয়ে এল ওরা। রিসোর্টের সীমানার খুঁটি দেখা যাচ্ছে। আর কিছুদূর গেলেই শুরু হবে সুপারস্টিশন মাউন্টেইন।
পর্বতের ছায়ায় পৌঁছে ঘোড়া থেকে নামল জুলিয়ান। চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা গোল একটা উপত্যকায় টেনে নামাল ঘোড়াটাকে। প্রচুর সবুজ ঘাস আছে ওখানে। তারপর পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করল ওপরে।