বাইরে কাউকে দেখা গেল না, কিছুটা অবাকই হলো ওরা।
রান্নাঘরে ঢুকল। কাজ করছে ভিকি আর জিনা। জিনা একবার মুখ তুলে চেয়েই আবার নামিয়ে নিল, ভিকি তাকালই না। দু-জনেরই মুখ থমথমে।
থমথম্ভেব ব্যাপার ত ডেকে লটা যে জ
অ্যাই যে, জিনা, ডেকে বলল মুসা, সাংঘাতিক একখান সূত্র পেয়েছে কিশোর। গতরাতের লোকটা যে জুলিয়ান নয়, প্রমাণ করা যাবে।
এদিকে তাকাল ভিকি। হাসি ফুটল না মুখে। গালে পানির দাগ, অনেক কেঁদেছে বোঝা যায়।
কি ব্যাপার? জানতে চাইল কিশোর।
পেয়েছ, ভাল। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে, আবার ফুঁপিয়ে। উঠল ভিকি। ছুটে চলে গেল রান্নাঘর থেকে।
তেরো
কি হয়েছে? জিনাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
শেরিফ এসেছিল, জিনারও চোখ ছলছল করে উঠল। ঘণ্টাখানেক আগে, জুলিয়ানকে খুঁজতে। বলল, গতকাল নাকি কিছু অলঙ্কার চুরি গেছে। আর পিন্টো ঘোড়ায় চড়ে একটা ছেলেকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে ওই এলাকায়।
তাতেই কি প্রমাণ হয়ে গেল জুলিয়ান চুরি করেছে? শোনো, কাল রাতে আমিও একজনকে পিন্টো ঘোড়ায় চড়তে দেখেছি। আর সেটা যে জুলিয়ান নয়, তা-ও প্রমাণ করতে পারব।
হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল জিনা। কেউ বিশ্বাস করবে না তোমার কথা।
করবে না মানে? এমন একটা ভঙ্গি করল মুসা, যেন যে বিশ্বাস করবে না তাকে এখনি ধরে ধোলাই দেবে। প্রমাণ আছে আমাদের কাছে।
সেটা অন্য কেস। জুলিয়ানকে বাঁচাতে পারবে না।
কেন? ভুরু নাচাল রবিন।
চোরাই একটা বেল্টের বাকলস পাওয়া গেছে আমাদের আস্তাবলে। জুলিয়ানের স্যাডল ব্যাগে।
শুধু বাকলস? আর কিছু? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না, আর কিছু না। শেরিফ বলল, জুলিয়ানকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। ওকে বলতে বাধ্য করবে, চোরাই মাল কোথায় লুকিয়েছে।
বোকা নাকি সব এ দেশে? বিরক্তিতে নাক কুঁচকাল কিশোর। চিলে কান নিল বলল একজন, আর সবাই ছুটল চিলের পেছনে। শেরিফেরও তো মাথামোটা মনে হচ্ছে। কি কি অলঙ্কার চুরি গেছে?
অনেক। বেশি দামীগুলোর মধ্যে আছে দুটো হার, পাথর বসানো, একই রকম দেখতে। গোটা তিনটে ব্রেসলেট আর দুটো আঙটি।
চুরি হয়েছে কোত্থেকে?
এখান থেকে কয়েক মাইল দূরে, একটা ক্যারাভান থেকে। টুরিস্ট। ক্যারাভান নিয়ে বেড়াতে এসেছে।
কিন্তু বারো বছরের একটা ছেলে এত দামী জিনিস দিয়ে কি করবে? ওই জিনিস বিক্রি করতেও তো পারবে না। কেন করতে যাবে অহেতুক?
কিছু বলার জন্যে মুখ খুলে চুপ হয়ে গেল জিনা, বলল না।
শেরিফের কাছে বোধহয় আমাদের একবার যাওয়া দরকার, আবার বলল কিশোর। হয়তো বোঝাতে পারব গতরাতে কি ঘটছে…
টনি না ফিরলে যেতে পারছি না,. স্টেশন ওয়াগনটা নিয়ে গেছে, জিনা বলল। শেরিফ আসার আগেই গেছে শহরে।
জীপটা?
ওটা নিয়ে বাজারে গিয়েছিল ডিউক আঙ্কেল আর ভিকিখালা। শেরিফ এসে জুলিয়ানকে ধরে নিয়ে গেল। ফিরে এসে সব শুনে খালাকে নামিয়ে দিয়েই জীপ নিয়ে ছুটেছে আঙ্কেল। শেরিফের পিছু পিছু।
অফিসে ফোন করি তাহলে?
পাওয়া যাবে না, মাথা নাড়ল জিনা। অফিসে যাবে না। ক্যারাভানে যাবে শেরিফ। জুলিয়ানকে চিনতে পারে কিনা ওরা, দেখবে। বাকলসটাও দেখাবে।
ওরা চিনবে না জুলিয়ানকে, দরজার কাছ থেকে বলল ভিকি খালা। আগে কখনও দেখলে তো। সাফ বলে দেবে, জুলিয়ান চোর নয়।
নিশ্চয়ই বলবে, সান্ত্বনা দিল কিশোর, যদিও দ্বিধা আছে তার মনে। জুলিয়ান চোর হতেই পারে না।
আবার কাঁদতে শুরু করল ভিকি। ডিউকের সঙ্গে আমারও যাওয়া উচিত ছিল। কি ভুলটাই না করলাম। জোরে কেঁদে উঠল সে। বাচ্চা ছেলে, কি যে ভয় পাবে…ধমক দিলে, উল্টো-পাল্টা কি বলে বসেহায়। হায়, ছেলেটাকে বুঝি আর বাঁচাতে পারলাম না।
অযথা অস্থির হচ্ছেন, বোঝানোর চেষ্টা করল কিশোর। দেখবেন, কিছুই হবে না ওর।
একটা চেয়ারে নেতিয়ে পড়ল ভিকি।
রবিন গিয়ে চায়ের পানি বসাল। ভিকির কাছ থেকে শেখা সুগন্ধী দেয়া চা বানিয়ে আনল। আগে ভিকিকে দিল এক কাপ।
হায় হায়, আমি কি করব রে! কপাল চাপড়াল ভিকি। ওর মায়ের কাছে আমি কি জবাব দেব?
কিছুই জবাব দিতে হবে না, জোর দিয়ে বলল কিশোর। ওকে ছাড়িয়ে নেবই আমরা। শেরিফ তো আসবে আবার। না এলে আমরাই যাব ওর কাছে। আশা করি, বোঝাতে পারব।
কান্না থামাল ভিকি। চা খেয়ে শান্ত হলো অনেকখানি। তারপর উঠে গিয়ে লাঞ্চের জোগাড় শুরু করল।
পিন্টো ঘোড়াটার খোঁজ নিয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করল কিশোর।
নিয়েছিলাম, জানাল জিনা। ধারেকাছে যে কটা র্যাঞ্চ আছে, সবারই আছে পিন্টো। কাল রাতে কেউ নাকি বেরোয়নি।
বেরোলেও কি আর স্বীকার করবে? হতাশার হাসি হাসল মুসা।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ঘোড়া বেশি থাকায় কাজ জটিল হয়ে গেল আরও, আন্দাজে কাকে সন্দেহ করব?
কিছু ঢুকছে না আমার মাথায়! মাথা ঝাড়া দিল জিনা। কে বেচারাকে ফাসাতে চায়? কেন?
আজ হোক কাল হোক, জেনে যাবই সেটা, বলল কিশোর।
টেবিলে খাবার দিল ভিকি। টনি, ডিউক আর জুলিয়ানের জন্যে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল ওরা। কেউ এল না। শেষে খেতে বসে গেল। রান্না ভাল, খাবারও ভাল, কিন্তু রুচি মরে গেছে সবারই। এমনকি মুসাও বিশেষ কিছু মুখে তুলতে পারল না। ভিকি আরেক কাপ চা খেল, ব্যস।
খাওয়ার পর থালাবাসনগুলো ছেলেমেয়েরাই ধুয়ে রাখল।
আবার অপেক্ষার পালা। গড়িয়ে চলেছে মিনিটগুলো, সময় যেন। কাটতেই চায় না।