দূরে দেখা গেল র্যাঞ্চ হাউসের উজ্জ্বল আলো।
লস্ট ভ্যালির সামনে এসে গাড়ি রাখল উনি।
সবাই নামল।
গরম পানি দিয়ে গোসল সেরে, মাখন মেশানো এক কাপ গরম চকলেট ড্রিংক খেয়ে শুয়ে পড়ল কিশোর।
পরদিন বেলা করে ঘুম ভাঙল তার। বাইরে চমৎকার সকাল, ঝকঝকে রোদ। দেখে মনেই হয় না আগের রাতে ভয়াবহ ঝড় বয়ে গেছে।
রহস্যের সমাধানে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে কিশোর। আর কত? কয়েকবার তার জীবনের ওপর হামলা হয়ে গেল। প্রায় প্রতিটি বারেই ভাগ্যগুণে বেঁচেছে। কোন সূত্র, কোন কূলকিনারা পাচ্ছে না সে। এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। ধারেকাছেই রয়েছে শত্রু, তার ওপর চোখ রাখছে, আঘাতের পর আঘাত হানছে, অথচ সে কিছুই করতে পারছে না। কাকে সন্দেহ করবে?
সেই নালাটার কাছে আবার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সে। হয়তো কোন সূত্র পাওয়া যেতে পারে, যদিও এ-ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে তার। তবু
জিনা, কিশোর বলল, পিন্টো ঘোড়াটার খোঁজ নাও। দেখো, আর কোন্ র্যাঞ্চে আছে সাদা-কালো রঙের ওই ঘোড়া। আমি আবার নালাটার কাছে যাব।…তোমরা যাবে? দুই সহকারীর দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল।
নিশ্চয় যাব, দু-জনের একই জবাব।
তবে, মুসা যোগ করল, র্যাটলস্নেক আর ঝড় থেকে দূরে থাকতে চাই।
আকাশ পরিষ্কার, বলল কিশোর। ঝড় আসবে না। আর, বেশি ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে না-ই বা গেলাম, তাহলেই সাপের কামড় খেতে হবে না।
না গেলেই কি, কেউ ছুঁড়ে তো দিতে পারে। যাকগে, চলো, যাই আগে, যা হয় হবে।
হ্যাঁ। চলো।
দিনের বেলা উজ্জ্বল সূর্যালোকে অন্যরকম লাগল প্রকৃতি, পরিবেশ গত রাতের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তাজা বাতাস। মরুভূমির বুনো প্রাণীরা সবাই কাজে ব্যস্ত, ঝড়ে সবারই কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে, মেরামত করে নিচ্ছে সে-সব।
নালায় পানি প্রবাহের চিহ্ন স্পষ্ট, কোথাও কোথাও এখনও নরম কাদা। পলি জমেছে, কিছু জায়গায়। খড়কুটো, আগাছা, জঞ্জাল জমে রয়েছে এখানে-সেখানে। পানিতে ভেসে এসেছে, কিন্তু শেষ দিকে স্রোত কম থাকায় আর সরতে পারেনি, আটকে গেছে।
মোড় ঘুরে নালার মাথার কাছে চলে এর ওরা। বাঁয়ে তাকাল কিশোর, ছোট ছোট হয়ে এল চোখ। হু, রহস্যময় ঘোড়সওয়ারের রহস্যজনক অন্তর্ধানের জবাবটা বোধহয় মিলল, আঙুল তুলে দেখাল। সে। নালার পাড় থেকে কিছু দূরে পাহাড়ের গায়ে খুব সরু একটা গিরিপথ মত চলে গেছে। ঝড়বৃষ্টির মধ্যে…আর এত উত্তেজিত ছিলাম, কাল রাতে চোখে পড়েনি। তাই তো বলি, ব্যাটা গেল কই?,
যাবে নাকি? জিজ্ঞেস করল রবিন।
এতদূর যখন এলাম, যাওয়াই তো উচিত।
ঘোড়াটা শান্ত, কথা শোনে। সরু গিরিপথে ওটাকে ঢোকার নির্দেশ দিল কিশোর। পেছনে সারি দিয়ে চলল অন্য দুটো ঘোড়া।
ধীরে ধীরে ওপরে উঠেছে গিরিপথ। ঘোড়ার নালে লেগে ঝরে পড়ছে আলগা ছোট পাথর, মাটি। গড়িয়ে গিয়ে জমা হচ্ছে নালায়।
যে কাল রাতে এখান দিয়ে গেছে, এই এলাকা তার নখদর্পণে, আশপাশের পাহাড় দেখছে কিশোর। ইচ্ছে করেই টেনে এনেছে আমাকে নালার মুখের কাছে। তারপর মারাত্মক বিপদে ঠেলে দিয়ে নির্বিঘ্নে সরে পড়েছে।
যাচ্ছি কোথায় আমরা? জিজ্ঞেস করল মুসা।
সামনে গিরিপথ শেষ। উল্টোদিকে পাহাড়ের আরেক ঢাল। গিরিপথের মুখ থেকে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পায়েচলা আরেকটা পাহাড়ী পথ। পথের ধারে এক জায়গায় কয়েকটা চারাগাছের ছোট্ট ঝাড়। ঘন পাতা গায়ে গায়ে লেগে ছাতার মত হয়ে আছে।
সেগুলো দেখল কিশোর। আনমনে বলল, আমি যদি ঝড়ের সময় এ পথে যেতাম, বৃষ্টি নামলে অবশ্যই আশ্রয় নিতাম ওটার তলায়।
লোকটা আশ্রয় নিয়েছিল বলতে চাও? রবিন বলল।
মাথা নেড়ে বলল কিশোর, হ্যাঁ।
গাছের গোড়ায় এসে থামল ওরা। কড়া রোদেও পাতার নিচে বেশ ছায়া। গোড়ার মাটি ভেজা, কোথাও কাদা। রোদ পৌঁছতে পারেনি ওখানে। তাই শুকায়নি।
ঘোড়া থেকে নেমে রাশটা মুসার হাতে ধরিয়ে দিল কিশোর। একজোড়া পায়ের ছাপের দিকে চোখ।
ঠিকই আন্দাজ করেছ, মাটির দিকে চেয়ে আছে মুসাও।
ওদিকে দেখো, সামনে দেখাল কিশোর, পাথুরে। গেছে ওদিকেই, কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ছাপ পাওয়া যাবে না। শক্ত মাটি, পড়বেই না ছাপ।
গাছগুলোর চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখল সে। একটা ডালের দিকে চোখ পড়তেই স্থির হয়ে গেল। মেসকিট ঝাড়ের কাঁটায় আটকে রয়েছে লাল এক টুকরো কাপড়।
এগিয়ে গিয়ে কাপড়টা খুলে নিল কিশোর, হাসল। যাক, এদ্দিন পরে সলিড কিছু পাওয়া গেল, কণ্ঠে খুশির আমেজ। লাল শার্ট পরেছিল লোকটা। ছিঁড়ে রয়ে গেছে, ঝড়ের মধ্যে বোধহয় খেয়ালই করেনি।
দারুণ! নিজের উরুতে চাপড় দিল মুসা। এটা প্রমাণ করবে অনেক কিছু।
এত খুশি হয়ো না, হাত নাড়ল কিশোর। যত সহজ ভাবছ তত না। ঝামেলা আছে। কার শার্ট ওটা খুঁজে বের করতে হবে আগে। ছেঁড়া শার্ট তো আর দেখিয়ে বেড়াবে না।
চুপসে গেল আবার মুসা। তাই তো, এটা ভাবিনি।
ওখানে আর কিছু পাওয়া গেল না।
চলো, বলল কিশোর, আর থেকে লাভ নেই।
রিসোর্টে ফিরে এল ওরা। কোরালে ছেড়ে দিল ঘোড়াগুলো।
জুলিয়ানের রহস্যটার সমাধান হলে বাঁচি, পেছনের বাগানের, দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল রবিন। আসল রহস্য তো বাকিই রয়েছে।
হ্যাঁ, ক্যাচিনা ভূত, মুসা বলল।
জুলিয়ানের রহস্যের সঙ্গে ভূত রহস্যের কোন সম্পর্ক আছে কিনা, তাই বা কি করে বলি? দেখা যাক কি হয়? বলল কিশোর।