না! হঠাৎ উঠে দাঁড়াল ভিকি। মুখে বেদনার ছাপ। আমিও বিশ্বাস করি না। এ কাজ জুলিয়ান করতেই পারে না। আগুন যখন লাগল, জুলিয়ান তখন বিছানায়। না, সে করেনি…
সবাই আমরা খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছি, পরিস্থিতি সহজ করার জন্যে বলল বিল। এখনও ওখাতে ভীষণ গরম, পোড়া বাড়িটা দেখাল। কাছে যাওয়া যাবে না। বিকেলে এসে খুঁজে দেখব। কিভাবে আগুন লাগল, হয়তো বোঝা যাবে।
জুলিয়ান-প্রসঙ্গ তখনকার মত ওখানেই থেমে গেল।
কফি আর স্যাণ্ডউইচ শেষ করে, জিনিসপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেল দমকল বাহিনী।
পোড়া জঞ্জাল যতখানি সম্ভব সাফ করায়, মন দিল টনি, তাকে সাহায্য করলেন ডিউক। তিন গোয়েন্দা আর জিনাও চুপ করে বসে রইল না।
দিগন্তে দেখা দিল সূর্য। রোদ এসে পড়ল, সোনালি চাদর দিয়ে যেন ঢেকে দিল সব কিছু।
ঘরের দিকে রওনা হলো ক্লান্ত কিশোর। তার সঙ্গে রবিন আর, মুসা।
গোলমালটা কোথায়? চলতে চলতে আপনমনে বিড়বিড় করল কিশোর।
কিসের গোলমাল? জিজ্ঞেস করল মুসা।
জানো, খুব খারাপ লাগছে, বন্ধুর দিকে ফিরে বলল কিশোর। আমি ভাবছি ওর দুর্নামটা ঘোচাব, আর জুলিয়ান ভাবছে উল্টো। ও ভেবেছে বাংলোয় আগুন লাগানোর জন্য দোষ দিচ্ছি ওকে আমি।
তাই কি দিচ্ছ? জিজ্ঞেস করল রবিন।
এক মুহূর্ত চুপ থেকে জবাব দিল কিশোর, না। ওর দোষ একটাই, বাড়িতে না থাকা। কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায় সে-ই জানে। লোকের মনে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক।
আমারও দুঃখ হয় ছেলেটার জন্যে, গম্ভীর হয়ে বলল মুসা। বাপ নেই বেচারার, মা থেকেও নেই। ফুপুর কাছে এসে পড়ে আছে…পরের দয়ায় মানুষ হওয়ার যে কি যন্ত্রণা… হঠাৎ বদলে গেল কণ্ঠস্বর, ঝাঁঝাল গলায় বলল, কিন্তু ওকে দোষী বানিয়ে কার কি লাভ? শয়তানিগুলো করছে ওর ঘাড়ে দোষ চাপানোর জন্যে।
কে যে করছে সেটাই যদি জানতাম, বহুদূর থেকে যেন শোনা। গেল কিশোরের কণ্ঠ। তারপর ফিরে এল বাস্তবে, ঠাণ্ডা হোক, তারপর যাব। পোড়া জায়গায় হয়তো কোন সূত্র মিলবে।
যদি সূত্র থাকে, রবিন যোগ করল।
হ্যাঁ, যদি থাকে।
ঘরে এসেই বাথরুমে ঢুকল তিনজনে। ভালমত সাবান মেখে সাফ করল শরীরের কালি, ময়লা আর ঘাম। নতুন কাপড় পরে বেরোল। ভিকি আর জিনার খোঁজে চলল রান্নাঘরে।
রান্নাঘরে নয়, লবিতে পাওয়া গেল জিনাকে।
টনি কোথায়? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
শহরে গেছে, হাসপাতালে। চাচাকে জানাবে সব কথা।
জুলিয়ান ফিরেছে?
না।
গেল কই? অযথা মানুষের কথা শুনছে ছেলেটা।
হ্যাঁ, রাগে জ্বলে উঠল জিনার চোখ। শয়তানিটা করছে জানি কোন্ হারামজাদা ধরতে পারলে.. দাতে দাঁত চাপল সে।
দশ
অর্ধেক রাত ঘুম নষ্ট হয়েছে। তাই সকাল সকাল দুপুরের খাবার দিল ভিকি, যাতে খেয়েদেয়ে সবাই খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে, রাতের ঘুমটা পুষিয়ে নিতে পারে।
বিকেলে যখন ঘুম থেকে উঠল তিন গোয়েন্দা, বাইরে তখনও কড়া রোদ। ভীষণ গরম। সুইমিং পুলে এসে নামল তিনজনেই।
মুসা সাঁতার কাটছে, রবিন পানিতে একবার ডুবছে, একবার ভাসছে। কিশোর দাঁড়িয়ে আছে কোমর পানিতে। সাঁতারের ইচ্ছে বিশেষ নেই, বার বার তাকাচ্ছে পাহাড়ের দিকে। সাদা-কালো পিন্টো ঘোড়া আর ওটার সওয়ারীকে খুঁজছে তার চোখ।
মুসা আর রবিনের আগেই উঠে পড়ল পানি থেকে। তোয়ালে দিয়ে গা মুছে, কাপড় পরে এগোল পোড়া বাংলোর দিকে।
অনেক খোঁজাখুঁজি করল, কিন্তু কোন সূত্র পাওয়া গেল না। খানিক পরে বিল এল, সে-ও কিছু পেল না। নাহ্, কিছু নেই। আর কাঠ যা শুকনো, আগুন লাগলে থাকে নাকি কিছু?…কিন্তু…নাহ, শিওর হওয়া যাচ্ছে না।
ওর সঙ্গেই রয়েছে টনি। অ্যাক্সিডেন্ট কিনা জানতে চাইছ তো? মোটেই না। কোন সম্ভাবনাই নেই। উইলসন আঙ্কেলও তা-ই বলেছে। কেউ থাকে না ওখানে, সিগারেটের আগুন ফেলা হয়নি। আকাশ পরিষ্কার ছিল, বাজও পড়েনি। আর ইলেকট্রিকের তারই নেই যে ওখান থেকে আগুন লাগবে। ব্যাপার একটাই ঘটেছে, লাগিয়ে দিয়েছে কেউ।
কেন লাগাল? মিস্টার উইলসনের সঙ্গে তার কি শত্রুতা?
হয়তো সে-লোক চায় না, কিশোর জবাব দিল, এখানে রিসোর্ট গড়ে উঠুক। এছাড়া আর তো কোন কারণ দেখি না।
ঝট করে কিশোরের দিকে ফিরল টনি।
অন্য দিকে তাকাল কিশোর, পাহাড় আর মরুভূমির দিকে। দূরে দেখা গেল ঘোড়াটা। খুরৈর ঘায়ে ধুলোর মেঘ উড়িয়ে ছুটে আসছে।
কাছে এলে বোঝা গেল, পিন্টো ঘোড়াটাই।
আসছি, বলে সোজা আস্তাবলের দিকে রওনা হলো কিশোর। ভেতরে ঢুকে জখমী ঘোড়াটার স্টলে এসে দাঁড়াল। হাত বুলিয়ে দিল। ওটার আহত পায়ে; বিড়বিড় করে বলল, এখনও ব্যথা করছে?
আস্তাবলে ঢুকল জুলিয়ান। ঘোড়া বাঁধল।
স্টলের ওপর দিয়ে মুখ বাড়াল কিশোর। কেমন বেড়ালে? ভাল?
একবার চেয়েই মুখ ফেরাল জুলিয়ান, মাথা ঝাঁকাল শুধু।
নতুন কোন ট্র্যাক চোখে পড়েছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
গাড়িতে, কিংবা ঘোড়ায় চড়ে এখান থেকে ছুটে পালাচ্ছে, এমন কারও চিহ্ন?
বড় বড় চোখ দুটো ফিরল এদিকে। কেন? কণ্ঠে সন্দেহ।
বাংলোতে আগুন আপনাআপনি লাগেনি, লাগানো হয়েছে। ভাবলাম, লোকটাকে দেখে থাকতে পারো তুমি।
চুপ করে ভাবল জুলিয়ান। পাহাড়ে গিয়েছিলাম আমি। ওদিকে, কেউ থাকে না।
কিন্তু ট্র্যাক তো চোখে পড়তে পারে? পায়ের ছাপ অনুসরণ করতে ভাল লাগে না তোমার?