র্যাঞ্চে ফিরে গুডনাইট জানিয়ে চলে গেল মেহমানরা। জিনা আর টনি আস্তাবলে রাখতে গেল ঘোড়াগুলোকে।
হলরুমে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। নীরবে বসে রইল অনেকক্ষণ। নিচের ঠোঁটে ঘন ঘন চিমটি কাটছে কিশোর। এখন তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করলেও ঠিক মত জবাব পাওয়া যাবে না।
কিন্তু অবশেষে আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেলল মুসা, ইচ্ছে করেই ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে, তাই না, কিশোর?
উঁ!..হ্যাঁ। পাহাড়ের চূড়ায় ছিল লোকটা। আমি যখন পিছিয়ে পড়লাম, দল থেকে আলাদা হয়ে গেলাম, তখন. ছুঁড়েছে। এর অর্থ পরিষ্কার।
ক্যাচিনা ভূতের কাজ নয় তো?
দূর! হাত নাড়ল রবিন, যেন থাবা মারল বাতাসে। এখনও ভূতটুতের ওপর থেকে বিশ্বাস গেল না তোমার…
থাকে তো অনেক সময়… মিনমিন করল মুসা।
মুচকি হাসল কিশোর। ভূত যদি হয়েই থাকে, এই ক্যাচিনাটা ভাল জাতের। কাল রাতে খালি একটু নাচ দেখিয়েছে, গান শুনিয়েছে। ঘাড় মটকাতে আসা তো দূরের কথা, ভয় পাওয়ানোরও চেষ্টা করেনি।
ঠিকই বলেছ, পেছনের দরজার কাছ থেকে বলে উঠল জিনা, ফিরে এসেছে। আমি আর টনিও তাই বলছিলাম।
তোমাদের কি ধারণা? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ভূতটা ভাল, টনি বলল, কিন্তু মানুষটা খারাপ, যে তোমাকে খুন করতে চায়। বাঁচতে চাইলে তোমার তদন্ত এবার বন্ধ করো।
বন্ধ করব কি, শুরুই তো করিনি এখনও।
হ্যাঁ, কিশোর, টনি ঠিকই বলেছে, জিনা বলল। আমার ভাল লাগছে না এসব। চিঠিটাকে গুরুত্ব দাওনি, দাওনি। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টের চেষ্টার পর পরই থেমে যাওয়া উচিত ছিল। তারপর বিছেটা বেরোনোর পর আমাদেরই বাধা দেয়া উচিত ছিল তোমাকে। তারপর পড়ল পোড়া গাছ, আর আজ তো একটুর জন্যে বেঁচে এলে। অনেক হয়েছে, আর এগোতে দেব না। বেড়াতে এসেছ, বেড়াও, চুটিয়ে আনন্দ করো। রহস্য-টহস্য বাদ। ছুটি শেষ হলে একসঙ্গেই ফিরে যাব আমরা রকি। বীচে।
হ্যাঁ, জিনার কথার পিঠে বলল টনি, বাদ দাও ওসব তদন্ত ফদন্ত। রিসোর্টের যা হবার হবে। তুমি ভাল থাকো।
ভুল আমারই হয়েছে, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছি, ঝুঁকি তো থাকবেই। আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল আমার। তা না করে একেবারে হাত-পা ছড়িয়ে গা ঢেলে দিয়ে বসে আছি। বিপদে পড়ব না তো কি হবে? ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে এই কাজই ছেড়ে দিতে হবে।
এই না হলে পুরুষ, তর্জনী নাচাল মুসা। মরব, সে-ও ভাল, কিন্তু গোয়েন্দাগিরি নেহি ছোড়েঙ্গা…
মুসার কথায় কান দিল না কিশোর, জিনা আর টনির দিকে চেয়ে বলল, তারমানে, বোঝা যাচ্ছে ঠিক পথেই এগোচ্ছি আমি। নইলে এত ভয় কেন? আমাকে সরাতে চায় কেন?
ঠোঁট বাঁকিয়ে, ভুরু নাচিয়ে, হাত নেড়ে বিচিত্র ভঙ্গি করল টনি। তারপর আর কিছু না বলে চলে গেল।
ভিকির তৈরি গরম চকলেট ড্রিংক খেয়ে অস্বস্তি অনেকখানি দূর হয়ে গেল কিশোরের। নিজের ঘরে এসে কাপড়-চোপড় ছেড়ে শুয়ে উঠে বসল লাগল। শব্দওল আর সঙ্গে সঙ্গেই গতরাতের সেই পড়ল। কিন্তু ঘুম এল না। মনে নানা ভাবনা, খচখচ করছে কয়েকটা প্রশ্ন। এপাশ-ওপাশ গড়াগড়ি করল কিছুক্ষণ, শেষে ধ্যাত্তোরি বলে উঠে পড়ল। বাথরুমে ঢুকে শাওয়ারের ঠাণ্ডা পানির তলায় ভিজল পুরো দশ মিনিট। গা মুছে নাইট ড্রেস পরে আবার এসে শুল বিছানায়। গায়ের ওপর কম্বল টেনে নিল।
কয়েক ঘণ্টা পর ভেঙে গেল ঘুম। কানে আসছে গতরাতের সেই অদ্ভুত কণ্ঠের দুর্বোধ্য গান। আজ আর সঙ্গে সঙ্গেই উঠল না, চুপচাপ শুয়ে গান শুনতে লাগল। শব্দগুলো বোঝার চেষ্টা করল। একটাও বুঝল না। উঠে বসল। খালি পায়েই নিঃশব্দে এগোল দরজার দিকে।
আগের দিনের জায়গায়ই ভূটাকে দেখা গেল। কিশোর অনুমান করল, ওটা মেঘ-ক্যাচিনা। কিংবা বলা যায় ধোয়া-ক্যাচিনা, রঙিন।
একই জায়গায় ভাসল কিছুক্ষণ ক্যাচিনাটা, তারপর ভেসে ভেসে এগোল দেয়ালের দিকে। আগের দিন যেখানে মিলিয়েছিল, ঠিক সেখানে পৌঁছেই অদৃশ্য হয়ে গেল। আজ ভালমত খেয়াল রাখল কিশোর-ঠিক কোথায় মিলায় ওটা।
সুইচ টিপে আলো জ্বালল। এগোল পায়ে পায়ে। বেশ বড় একটা মেঘ-ক্যাচিনা-র কাছে মিলিয়েছে ভূতটা।
আরও কাছে থেকে ছবিটাকে দেখল সে। বোঝার চেষ্টা করল। কোথাও খুঁত, কিংবা চোখে লাগে এমন কিছু দেখতে পেল না। টর্চ আর ম্যাগনিফাইং গ্লাসের সাহায্যে খুঁটিয়ে দেখলে কিছু পাওয়া যেতে পারে ভেবে, নিজের ঘরে ফিরে এল কিশোর।
হঠাৎ শোনা গেল জিনার উত্তেজিত চিত্তার, আগুন! আগুন! বাংলোয় আগুন লেগেছে!
নয়
পাজামা খোলার সময় নেই, তাড়াহুড়ো করে তার ওপরই প্যান্টি পরল কিশোর। টান দিয়ে আলনা থেকে একটা সোয়েটার নিয়ে তাতে মাথা গলাল। জুতো পরে দৌড়ে বেরোল ঘর থেকে। রবিন আর মুসাও হলে বেরিয়ে এসেছে।
কি-ক্কি হয়েছে? কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল মুসা।
চলল, দেখি, বলেই পেছনের দরজার দিকে ছুটল কিশোর।
বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা।
থমকে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা।
বাড়ির সবচেয়ে কাছের বাংলোটায় আগুন লেগেছে। দাউদাউ করে জ্বলছে ছোট্ট বাড়িটা। বাগানের দুটো হোস পাইপ দিয়ে। একনাগাড়ে পানি ছিটিয়ে চলেছে টনি আর, ডিউক। কিন্তু কোন কাজই। হচ্ছে না।
দ্রুত এপাশ-ওপাশ তাকাল কিশোর। আগুনের গর্জন ছাপিয়ে · চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, দমকলকে ফোন করা হয়েছে?