শুধু বলল, রবিন জানাল, রাতে নাকি হলরুমে কি দেখেছ তুমি। রান্নাঘরে বসে চা খেয়েছ, ভিকিখালার সঙ্গে অনেক আলাপ-আলোচনা করেছ।
ভূত দেখেছ নাকি? জিজ্ঞেস করল জিনা।
চারটে ডিমের ওমলেট আর বড় এক গেলাস কমলালেবুর রস নিয়ে হাজির হলো ভিকি, কিশোরের জন্যে। দিয়ে চলে গেল।
খেতে খেতে গতরাতের কথা সব জানাল কিশোর। শেষে বলল, প্রথমে ভেবেছিলাম চোর। তারপর দেখলাম ওটাকে। বিচিত্র আওয়াজ। হেঁড়ে গলায় ইনডিয়ানদের গান গাইল, কিছুই বুঝলাম না।
ইনডিয়ান গান? রবিনের চোখে বিস্ময়।
তা-ই তো মনে হলো।
তোমার সাহস আছে কিশোর, মুসা বলল। আমি হলে যেতাম। আর ভূত দেখার পর দাঁড়িয়ে থাকা তো অসম্ভব ছিল।
কি বুঝলে? জিজ্ঞেস করল জিনা।
ভিকির কাছে শোনা গল্পটা আবার শোনাল কিশোর।
মাথা নোয়াল জিনা। ক্যাচিনার অভিশাপের কথা আমিও শুনেছি। সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হলো, ওই ভূত তাড়াতে হবে বাড়ি থেকে। নইলে উইলসন চাচার লালবাতি জ্বলবে। তিক্ত শোনাল জিনার কণ্ঠ, গতবছর বেচে না দিয়ে ভুলই করেছে। ডাক্তার জিংম্যান কিনতে চেয়েছিল।
তাই নাকি? চিবানো থামিয়ে জিনার দিকে তাকাল কিশোর। আগে বলোনি তো! সবাই যেখানে ভূতের ভয়ে কাবু, সেখানে কিনতে চায় কোন সাহসে?
বলার মত কিছু না। বাড়িটা চায় না, শুধু খেতখামার! অনেক গরু আছে তার, আরও বাড়াতে চায়। চেয়েছিল, তবে এখন চাচা বেচতে চাইলেও ডাক্তার কিনবে কিনা সন্দেহ। আর কিনলেও অনেক কম দাম দিতে চাইবে। তার মানে, রিসোর্ট চালাতে না পারলে চাচার অবস্থা কাহিল। টুইন লেকসের সব কিছু বেচে দিয়ে এসেছে, সেই টাকা আর জমানো যা ছিল সবই খরচ করেছে এই রিসোর্টের পেছনে। বেশির ভাগ টাকাই গেছে বাড়িটা সারাতে। ওটাই যদি কেউ কিনতে না চায়, শুধু জমিনের জন্যে আর কত দাম পাবে?
ভারি পরিবেশ হালকা করার জন্যে হাসল মুসা। তোমার চাচার কিচ্ছু হবে না, দেখো। আমরা তিন গোয়েন্দা এসে পড়েছি না? পালাতে দিশে পাবে না ক্যাচিনা ভূতের বাচ্চা।
শুধু রবিন হাসল।
নীরবে খেয়ে চলেছে কিশোর। ভূত-টুতে বিশ্বাস করে না সে। কিন্তু গতরাতে যা দেখেছে, সেটাকে চোখের ভুল বলেও উড়িয়ে দিতে পারছে না।
তো, আজ সকালটা কি করে কাটাতে চাও? জিজ্ঞেস করল জিনা। মেহমানরা আসবে বিকেলে। তারপর সুপারস্টিশনে রওনা হব আমরা। ভিকিখালা আর ডিউক আঙ্কেলও সঙ্গে যাবে বলেছে।
হুম্। ভালই জমবে।…আচ্ছা, শোনো, জুলিয়ান কোথায়? ওর সঙ্গে কথা বলা দরকার।
ও তো নেই। সেই ভোরেই বেরিয়ে গেছে। আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই। ভেবেছিলাম, বিকেলে ওকেও সঙ্গে নেব।
শূন্য প্লেটটা ঠেলে দিয়ে গেলাস তুলে নিল কিশোর। জিনার দিকে তাকাল। কোথায় গেছে?
বলে যায়নি। ভিকিখালা বলল, সকালে উঠে পিন্টো ঘোড়াটা নিয়ে বেরিয়ে গেছে, মরুভূমিতেই বোধহয়। জন্তু-জানোয়ারের প্রতি ভীষণ আগ্রহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেয় ওসব দেখে দেখে। আগে এসে আমাকে বলত কি কি দেখেছে… থামল জিনা। ইদানীং আর বলে না, আগুন লাগানোর পর থেকে। এড়িয়ে চলে।
কোন্ কোন্ জায়গায় আগুন লেগেছে, দেখা যাবে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
যাবে না কেন? ওই পাহাড়টা, হাত তুলে দেখাল জিনা। ওই যে, আস্তাবল থেকে মাইলখানেক পুবে, টিলাটক্কর দেখা যাচ্ছে না পাহাড়ের ওপরে? ওখানে। স্মোক সিগন্যাল প্র্যাকটিস করছিল।
আর বাকিগুলো?
প্রথমটার আধা মাইল দক্ষিণে দুটো পাহাড়ের ঢাল নিচে একসঙ্গে মিশেছে। পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে তারপর দেখতে পাবে। পোড়া স্যাগুয়ারো গাছ।
তারমানে দুটো জায়গায়ই হেঁটে যাওয়া যাবে? রবিন বলল।
মাথা ঝাঁকাল জিনা। আমিই নিয়ে যেতাম, কিন্তু আজ পারছি না। মেহমানরা আসবে, খাবার লাগবে। ভিকিখালাকে সাহায্য করব। টনি জীপ নিয়ে গেছে ওদের দাওয়াত করতে। নইলে সে যেতে পারত।
আমরা একাই পারব, মুসা বলল।
কিভাবে যেতে হবে ভালমত জেনে নিয়ে রওনা হলো তিন গোয়েন্দা। আস্তাবলের দিকে হাঁটতে শুরু করল। সঙ্গে নিয়েছে কুকুরটাকে। কিছুদূর এগিয়েই দেখতে পেল, মরুভূমি মোটেই মরু নয়, তাতে প্রাণের ছড়াছড়ি। দিন কয়েক আগে বৃষ্টি হয়েছে, তরতর করে বেড়ে উঠেছে লম্বা ঘাসের গুচ্ছ, সবুজ হয়েছে। ঢেউ খেলানো পাহাড়ী ঢালে জন্মে রয়েছে নানা রকম গাছ, ফুল ফুটেছে। হলুদ, লাল, নীল, সাদা ফুলের ছড়াছড়ি, আর কি তার রঙ!
ওউফ, চোখ জুড়িয়ে যায়, চলতে চলতে বলল রবিন।: মরুভূমি যে এত সুন্দর, বইয়েই পড়েছি শুধু এতদিন। পড়ে বিশ্বাস হয়নি।
বিশাল এক খরগোশ দেখে থমকে দাঁড়াল টাইগার। তাড়া করবে কিনা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই দুই লাফে গিয়ে পিপের মত মোটা দুটো ব্যারেল ক্যাকটাসের আড়ালে লুকাল খরগোশটা।
ঘেউ ঘেউ করে উঠল টাইগার, তাড়া করতে চাইল। গৃলার বেল্ট টেনে ধরে ধমক দিল মুসা।
কুকুরের ডাকে চমকে গিয়ে ঝোঁপ থেকে বেরোল একটা পাখি। দৌড় দিল। ঘাসের গুচ্ছের পাশ কাটিয়ে ছুটে চলল তীব্র গতিতে।
রোড রানার, বলল রবিন।
দূরে গিয়ে থামল পাখিটা। কালো পালকে ঢাকা মাথা তুলে ফিরে তাকাল এদিকে। লম্বা কালো লেজে আঁকুনি তুলে আবার ছুটল। একটা আজব ক্যাকটাসের আড়ালে গিয়ে লুকাল। বানরের লেজের মত বাকা। উদ্ভিদটা, তাতে লাল ফুল ফুটেছে।
উড়তে পারে না ওই পাখি? জিজ্ঞেস করল মুসা।