- বইয়ের নামঃ হারানো উপত্যকা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প
হারানো উপত্যকা
এক
কিশোর, তোর চিঠি, ডেকে বললেন মেরিচাচী, অ্যারিজোনা থেকে।
বারান্দায় ছিল কিশোর, স্যালভিজ ইয়ার্ডের কাঁচেঘেরা ছোট্ট অফিস ঘরটায় ঢুকল। কই, দেখি?
কার চিঠি রে? ওখানে কাকে চিনিস?
কি জানি, বুঝতে পারছি না, খাম ছিঁড়ে চিঠিটা খুলল কিশোর। আরে, ভিকিখালা।
ভিকি? কোন ভিকি? একজন তো আছে বলেছিলি টুইন লেকসে।
জবাব না দিয়ে নীরবে পড়তে শুরু করল কিশোর:
কিশোর,
নিশ্চয় অবাক হচ্ছ, এতদিন পর লিখলাম। সেই যে খনির রহস্য ভেদ করে দিয়ে এসেছিলে, তারপর টুইন লেকসে তো আর একবারও এলে না। সত্যি, রহস্য ভেদ করার ক্ষমতা আছে বটে তোমার।
চিঠি থেকে মুখ তুলে বলল কিশোর, হ্যাঁ, চাচী, সেই ভিকিখালাই।
ভাল আছে তো ও? আর মিস্টার উইলসন?
দেখি পড়ে।
আবার পড়তে লাগল কিশোর,
আমরা এখন টুইন লেকসে নেই। মিস্টার উইলসন ওখানকার সব কিছু বেচে দিয়েছেন, উন্নতি হচ্ছিল না তেমন, তাই। তারপর ফিনিক্সের পুবে এসে সুপারস্টশন মাউনটেইনের কাছে লস্ট ভ্যালিতে পুরানো এক র্যাঞ্চ কিনেছেন। ফিটনেস হেলথ রিসোর্ট করবেন। কাজ চলছে, খুব কাজের চাপ আমাদের। আগামী শীতের গোড়ায় টুরিস্ট সীজনের শুরুতেই স্টার্ট করার ইচ্ছে। কিন্তু সে-আশা পূরণ হবে কিনা সন্দেহ।
র্যাঞ্চটার প্রধান আকর্ষণ একটা পুরানো বিল্ডিঙ। ওটাকেই মেরামত-টেরামত করে আধুনিক একটা হোটেল করা হবে। জায়গার নামের সঙ্গে মিলিয়ে বাড়িটার নামও রাখা হয়েছে লস্ট ভ্যালি। এটা নতুন নাম। আগে নাম ছিল ইনডিয়ান হাউস। মাঝখানের বড় একটা হলরুমে ইনডিয়ানদের তৈরি অসংখ্য পুতুল সাজিয়ে রাখা হয়েছে, কাচিনা পুতুল। খুব সুন্দর। আগের মালিক জোগাড় করেছিল। মিস্টার উইলসনের কাছে বিক্রি করে গেছে সব।
বাড়ির ভেতরটা সারিয়ে নিয়ে গত বড়দিনেই এখানে উঠেছি আমরা। তারপর শুনলাম কাচিনার অভিশাপের কথাটা। আমরা বাড়িতে ওঠার পর থেকেই অদ্ভুত কিছু কাণ্ড ঘটতে শুরু করেছে এখানে, নানারকম গোলমাল হচ্ছে। জিনা মানতে চায় না-এখানেই আছে ও–কিন্তু টনির দৃঢ় বিশ্বাস বাড়িতে ভূত আছে। আরও অনেকেই একথা বিশ্বাস করে, ভয় পায়। ভূতের কথা কিছুতেই পুলিশকে বোঝানো যাচ্ছে না। তুমি যদি সাহায্য না করো, লস্ট ভ্যালি হেলথ রিসোর্টের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
অনেক কামরা আছে বাড়িতে, জায়গার অভাব নেই। স্কুল নিশ্চয় ছুটি এখন তোমাদের, মুসা আর রবিনকে নিয়ে চলে এসো না। বসন্তে মরুভূমি কিন্তু খুব সুন্দর হয়, এলেই দেখতে পারবে। ভালই লাগবে তোমাদের।
তোমাদের আশায় রইলাম। কাচিনার অভিশাপ থেকে মুক্ত করো লস্ট ভ্যালিকে, প্লীজ।
শুভেচ্ছা,
– ভিকিখালা।
কিশোরের পড়া শেষ হলে মেরিচাচী জানতে চাইলেন, কি লিখেছে?
চিঠিটা তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে কিশোর বলল, নাও, পড়ো। একটা চেয়ার টেনে বসল সে।
চাচীও পড়লেন। চিঠির কোনায় হাতে আঁকা একটা ছবি দেখালেন, এটা কি? ক্যাচিনা?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। অনেক দিন আগে পড়েছিলাম, কাঠ কুঁদে পুতুল বানায় দক্ষিণ-পশ্চিমের ইনডিয়ান উপজাতিরা। ওগুলোর ছবিও দেখেছি। যেমন সুন্দর, তেমনি দামী।
এটা তেমন সুন্দর লাগছে না, মুখ বাঁকালেন মেরিচাচী। চিঠিটা ফিরিয়ে দিতে দিতে বললেন, তা কি করবি?
যাব। অ্যারিজোনায় যাওয়ার এমন সুযোগ হাতছাড়া করব নাকি? তাছাড়া ভিকিখালা এত করে অনুরোধ করেছে।…দেখি, চাচাকে জিজ্ঞেস করে, কি বলে। রবিন আর মুসাও যেতে পারবে কিনা জানা দরকার।
টেলিফোনের দিকে হাত বাড়াল কিশোর, এই সময় দেখা গেল মুসাকে। স্ট্যাণ্ডে সাইকেল তুলে অফিসের দরজায় উঁকি দিল।
এই যে, একেবারে সময়মত এসে পড়েছ, হাত নেড়ে ডাকল। কিশোর। এসো।
কি ব্যাপার? কোন খবর আছে নাকি?
খবর মানে? হাসলেন মেরিচাচী। ক্যাচিনা ভূতের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছ এবার। যাই দেখি, বোরিস কি করছে।
বিস্মিত মুসাকে চিঠিটা দেখাল কিশোর। পড়ো।
যাচ্ছ তাহলে? চিঠি পড়ে জিজ্ঞেস করল মুসা।
মেরিচাচী যখন আপত্তি করেনি, আর ঠেকায় কে? তুমি যাবে? ইচ্ছে আছে?
বলে কি লোকটা? অ্যারিজোনা র্যাঞ্চে ছুটি কাটানো…
তোমার আম্মা যদি রাজি না হন…
রাজি না হলে বাড়ি থেকে পালাব না! বাবাকে আগে বলব। বাবা মাকে রাজি করাগে। কিন্তু, ভাই, ওই ভূতটুতের ব্যাপারটাই ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।
আগেই এত ভাবছ কেন? দেখিই না গিয়ে।
বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে রবিনের বাবা-মায়ের আপত্তি কোন সময়ই খুব একটা থাকে না।
শুক্রবার সকালের প্লেনে সীট বুক করা হলো। ছুটির সময়, ভিড় বেশি, আগে থেকে টিকেট কেটে না রাখলে পরে সীট পাওয়া যায় না। ভিকিখালাকে খবর পাঠিয়ে দিল কিশোর, ওরা যাচ্ছে।
টুকিটাকি কিছু জিনিসপত্র কেনা দরকার। বাজারে গিয়ে কিনে নিল তিন গোয়েন্দা।
রকি বীচ পাবলিক লাইব্রেরিতে পার্টটাইম চাকরি করে রবিন, বুধবারে গিয়ে ছুটি নিল ওখান থেকে। রেফারেন্স বই ঘেঁটে ক্যাচিনার ওপর কিছু তথ্য জোগাড় করে লিখে নিল নোটবইতে।
অদ্ভুত সব কাঠের পুতুলের অসংখ্য ছবি রয়েছে বইটাতে।