জানা গেল শিগগিরই।
তবে, হাত তুলল চ্যাকো, গুঞ্জন থামানোর জন্যে নিজেদের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে আমাদের। তাই, অন্তত একজন জিম্মি রাখতে হবে।
জিম্মি শব্দটা শুনেই ফ্যাকাসে হয়ে গেল যাত্রীদের মুখ। কার পালা?
জিনা, হুশিয়ার! ফিসফিস করে বলল কিশোর। তোমার দিকে তাকাচ্ছে।
কালো হয়ে গেল জিনার মুখ। চোখের পাতা কাছাকাছি হয়ে যাচ্ছে।
সরাসরি জিনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে চ্যাকো। হাসল। তারপর এগিয়ে এল। ধীরে পায়ে।
এই, তুমি উঠে এসো, ডাকল চ্যাকো।
নড়ল না জিনা।
কি হলো? আসছ না কেন? জলদি এসো।
উঠল না জিনা।
এগোল চ্যাকো।
হাত তুলল মুসা। দাঁড়ান। জিম্মি হলেই তো হয় আপনাদের। আমি, আসছি।
পেছন থেকে বলে উঠল রবিন, ওরা থাক। আমাকে নিন।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। গভীর চিন্তা চলছে মাথায়।
উঠে দাঁড়াল জিনা, না না, কারও দরকার নেই। আমিই আসছি।
ভুরু কুঁচকে গেছে চ্যাকোর। হ্যাঁ, তুমিই এসো। ছেলেদের দরকার নেই। আমার। জিম্মি হিসেবে সুন্দরী কিশোরী খুব ভাল হবে। ছবি আর খবর ছাপা হলে নাড়া দেবে সবাইকে।
এক মিনিট, হাত তুলল কিশোর, ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়াল। মিস্টার চ্যাকো, আরেক কাজ করলে তো পারেন। আমরা চারজন এক জায়গা থেকে একই সঙ্গে বেরিয়েছি, আমাদের চারজনকেই নিন। জিম্মি বেশি হলেই তো বরং আপনাদের সুবিধে।
দ্বিধায় পড়ে গেল চ্যাকো। কি করবে বুঝতে পারছে না। সিদ্ধান্ত নিতে পারছে দেখে শেষে রেগে গেল নিজের ওপরই। ধমক দিয়ে বলল, বড় বেশি ফ্যাচফ্যাচ করছ তোমরা। এটা কি সিনেমা পেয়েছ নাকি? বেশি জিম্মি রাখলে ঝামেলা বেশি, একজনকেই রাখব। যাকে নেব ঠিক করেছি, তাকেই শুধু। এই মেয়ে, এসো।
মুসার সামনে দিয়ে গলিতে বেরিয়ে এল জিনা।
তার হাত ধরতে গেল চ্যাকো।
ঝটকা দিয়ে হাত সরিয়ে নিল জিনা। খবরদার, ষাঁড়, গায়ে হাত দেবে না। চলো, কোথায় যেতে হবে।
পিস্তলের ইশারায় ককপিট দেখাল চ্যাকো। ওখানে। জিমের পাশে চুপ করে বসে থাকবে।
ককপিটের দরজা খুলে দিল ওরটেগা। জিনা ভেতরে ঢুকতেই আবার বন্ধ করে দিল।
শোনো তোমরা, যাত্রীদের বলল চ্যাকো, সীট-বেল্ট বেঁধে নাও। একটু পরেই ল্যাণ্ড করব। কোন চেঁচামেচি নয়, ধাক্কাধাক্কি নয়। সিঁড়ি দিয়ে একজনের পেছনে একজন নেমে যাবে, শান্তভাবে। আমি আর ওরটেগা পিস্তল নিয়ে পেছনে থাকব। কেউ শয়তানী করলেই গুলি খাবে। পুলিশকে বলবে, ওরা কিছু করার চেষ্টা করলে জিম্মি মেয়েটা মরবে। বুঝেছ? আই রিপীট, মরবে!
০৩.
নীরবে সীট-বেল্ট বেঁধে নিল যাত্রীরা।
এঞ্জিনের শব্দ ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই, টু শব্দ করল না কেউ। নিজেদের কথা ভাবছে ওরা, জিনাকে নিয়ে চিন্তিত নয়–তিন গোয়েন্দার কথা অবশ্য আলাদা। বিপদ যে সামান্যতম কমেনি, এটা বোঝার বুদ্ধি আছে। ছেলেমেয়েদের। জিম যদি ঠিকমত প্লেন ল্যাণ্ড করাতে না পারে? যদি ক্র্যাশ করে? যদি নামার সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ?
নিচে রানওয়ে আর বিমান বন্দরের বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে।
নামতে শুরু করল প্লেন। সবাই চুপ। প্রচণ্ড উত্তেজনা। ঠাণ্ডা এয়ারকুলড কেবিনেও দরদর করে ঘামছে অনেকে।
অবশেষে নিরাপদেই নামল বিমান। চারপাশ থেকে ছুটে এল অসংখ্য মূর্তি। তাদের মাঝে ইউনির্ফম পরা পুলিশও রয়েছে।
রেডিওতেই সমস্ত নির্দেশ দিয়ে রেখেছে হাইজ্যাকাররা। প্লেনের ধারেকাছে যাতে কোন গাড়ি না আসে, বলে দিয়েছে। গাড়ি এল না। পুলিশদের হাতেও কোন অস্ত্র নেই। একটা বিশেষ দূরতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল ওরা।
পরিকল্পনা মাফিকই হচ্ছে সব কিছু। একে একে নেমে গেল ছেলেমেয়েরা, খালি হাতে। তাদের মালপত্র সব রয়ে গেল বিমানে।
বিমানের কর্মচারীদের মুক্তি দেয়া হলো। তারাও নেমে গেল একে একে। কেউ কোন গোলমাল করল না। চ্যাকোর হাতে পিস্তল। ওরটেগা একটা সাব-মেশিনগান। বের করে নিয়েছে। তার ওপর ককপিটে জিম্মি রাখা হয়েছে এক কিশোরীকে। কাজেই কিছু করার চেষ্টা করল না কেউ।
.
খুব ধীরে ধীরে কাটছে জিনার সময়। দুঃস্বপ্নের মাঝে রয়েছে যেন সে। জিমের পাশে বসে ভাবছে, এরকম বিশ্রী অবস্থায় জীবনে কখনও পড়েনি। এখন পর্যন্ত খারাপ কিছু করেনি হাইজ্যাকাররা, কিন্তু চাপে পড়লে করবে না এর নিশ্চয়তা কোথায়?
জিনাকে অবাক করে দিয়ে তার কাঁধে হাত রাখল জিম। আলতো চাপ দিয়ে। বলল, মন খারাপ কোরো না। কোন ক্ষতি হবে না তোমার। দিন কয়েকের মধ্যেই মুক্তি দেয়া হবে। হাসল সে। আমরা অমানুষ নই। বেআইনী কাজ হয়তো করছি, কিন্তু খারাপ লোক নই।
জেনেশুনে তাহলে করছেন কেন?
একবার খারাপ পথে পা দিলে, ফেরার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। একটা প্রাইভেট অ্যাভিয়েশন ক্লাবের ইনস্ট্রাকটর ছিলাম। গাধার মত একদিন ওখানকার ক্যাশ চুরি। করে বসলাম। তারপর থেকে জড়িয়ে পড়লাম নানারকম অপরাধের সঙ্গে, আর ফিরতে পারলাম না। এখন তো অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে।
কে বলল? আমার তা মনে হয় না। ইচ্ছে করলে এখনও ফিরতে পারেন, সময় আছে, নরম গলায় বলল জিনা। সত্যি বলছি, যদি হাইজ্যাকার না হতেন, চোরাচালান না করতেন, আপনাকে আমি পছন্দই করতাম।
হাসল শুধু জিম, জবাব দিল না। সামনে ঝুঁকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। কি হচ্ছে, দেখল।
একটু বাদেই উড়ব আবার, বলল সে। আমাজনে প্লেন নিয়ে যেতে পারব আশা করছি। ওখানে ল্যাণ্ড করব। অস্থায়ী একটা রানওয়ে তৈরি করা হয়েছে ওখানে। একটু থেমে যোগ করল, আমাদের বন্ধুরা কাছেই থাকবে। অনেকদিন, থেকেই ওরা স্মাগলিঙের সঙ্গে জড়িত।