কিন্তু চ্যাকো তখন অন্ধ। তার পক্ষ নিল ওরটেগা। মহামূল্যবান পান্না দুটো তাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। কতখানি বিপদে রয়েছে, আরও কতখানি। বাড়বে, বুঝতেই চাইছে না।
ক্যাসাডোও নাছোড়বান্দা। কিছুতেই পান্না খুলতে দেবে না।
কথা কাটাকাটি, শেষে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেল। ক্যালাডোকে ঘুসি মেরে বসল চ্যাকো।
ওকে এমনিতেই পছন্দ করে না রাফিয়ান। তার ওপর ক্যাসাডোকে মারায়। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তার। ঝাঁপিয়ে পড়ল চ্যাকোর ওপর। টুটি কামড়ে ধরতে গেল।
বিকট চিৎকার করে মাটিতে পড়ে গেল চ্যাকো। কুকুরটা উঠে এল তার বুকের ওপর।
চেঁচিয়ে থামতে বলছে জিনা, কিন্তু কানেও ঢুকছে না রাফিয়ানের। রোখ চেপে গেছে তার। চ্যাকোর রক্ত না দেখে ছাড়বে না।
চেঁচামেচি শুনে জিভারোরা ভাবল, তাদেরকে ডাকা হচ্ছে। হুড়মুড় করে এসে ঢুকল ভেতরে। দুপদাপ করে উঠে এল ছাতে।
হামু বোকা নয়। কুসংস্কারে বিশ্বাসী বটে, কিন্তু মগজটা তার পরিষ্কার। সোনার দেবী-মূর্তি, ওরটেগার হাতে ছুরি, দেবীর চোখের কাছে আঁচড়, কিছুই চোখ এড়াল না তার। বুঝে ফেলল, কি হচ্ছে।
সর্দারের নির্দেশে নিমেষে তিন হাইজ্যাকারকে কাবু করে ফেলল জিভারোরা। হাত পিছমোড়া করে শক্ত করে বাধল বুনো লতা দিয়ে।
জিমকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে অনুরোধ করেও লাভ হলো না। এত রেগে গেছে। হামু, কারও কথাই শুনল না, এমনকি ওঝার কথাও নয়। সাংঘাতিক অপরাধ করেছে তিন বন্দী। গ্রাম থেকে পালিয়েছে, তারপর এখানে এসে দেবীর চোখ চুরি করতে চেয়েছে। ওদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। সেখানেই ঘোষণা করল হামু গায়ে নিয়ে গিয়ে আগামী পূর্ণিমাতেই তিনজনকে দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হবে। এটাই ওদের যোগ্য শাস্তি।
যে জিনিসের জন্যে এসেছিল, পাওয়া গেছে, গায়ে ফেরার জন্যে তৈরি হলো দলটা। ছেলেদেরকে আর ক্যাসাডোকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, কথা রেখেছে হামু। বলল, যখন যেখান থেকে খুশি স্বর্গে ফিরে যেতে পারে। বাধা দেয়া হবে না।
কিন্তু তিন হাইজ্যাকার আবার ধরা পড়ায় আনন্দ মাটি হলো ছেলেদের। তিনজনকে জিভারোদের হাতে রেখে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারল না ওরা।
আমাদেরও গাঁয়ে ফিরে যেতে হবে, বলল ক্যাসাডো। কিছু দিন বিশ্রাম দরকার। নইলে আবার জঙ্গল পাড়ি দিতে পারব না। তাছাড়া সমস্যায় ফেলে দিয়েছে ওই তিন ব্যাটা। ছাড়ানোর কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী পূর্ণিমার দিন বলি দেবে ওদেরকে হামু, মাঝে বেশ কিছুদিন সময় আছে। আশা করি একটা উপায় করে ফেলতে পারব।
গাঁয়ে ফিরে চলল সবাই।
সোনার মূর্তিটা পালা করে বইল দুজন যোদ্ধা, মহা-সম্মানের কাজ মনে করল এটাকে ওরা।
গাঁয়ে ফিরে তিন হাইজ্যাকারকে কুঁড়েতে ভরল জিভারোরা। অনেক পাহারাদার রাখা হলো, আর যাতে পালাতে না পারে। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখার ব্যবস্থা হলো।
ছেলেদের ওপর কেউ আর চোখ রাখছে না এখন। যখন যেখানে খুশি যেতে পারে তারা। ক্যাসাডো ও মুক্ত। আলাদা আলাদা কুঁড়েতে না শুয়ে একই কুঁড়েতে। রাত কাটায় এখন। ফলে আলাপ-আলোচনার সুবিধে হলো।
কিন্তু উপায়টা কি এখন? প্রশ্ন করল জিনা।
আমারও তাই জিজ্ঞাসা, জবাব দিল বৈমানিক। ভাবতে ভাবতে তো মগজ ঘোলা করে ফেললাম, কোন উপায় দেখছি না। ব্যাটাদের ছাড়াই কি করে?
চুপ করে রইল সবাই।
দেখি, কি করা যায়। আবার বলল ক্যাসাডো। তবে আগে প্লেনে যেতে হবে একবার। এস ও এস পাঠাতে। জবাব না পাওয়া পর্যন্ত পাঠিয়েই যাব। এখন। আর ভয় নেই, আমি দিনের পর দিন না থাকলেও কেউ খোঁজ করবে না।
ভাগ্য যখন ভাল হতে শুরু করে, সব দিক থেকেই হয়। সেদিন দ্বিতীয়বারের চেষ্টায়ই জবাব পেয়ে গেল ক্যাসাডো। খুশিতে লাফাতে লাফাতে গায়ে ফিরে এল সে।
ঘুম থেকে ছেলেদের ডেকে তুলে জানাল খবরটা। পেয়েছি। কাঠ-ব্যবসায়ী। কোম্পানির এক দল লোক কাজ করছে বনে। তারাই ধরেছে সিগন্যাল। বলেছে, ব্রাজিল পুলিশকে জানাবে, যত তাড়াতাড়ি পারে। দশ-বারো ঘন্টা পরে আবার যাব প্লেনে। খবর নেব, কদর কি হলো। যাক, দুঃস্বপ্ন শেষ হতে চলেছে এতদিনে।
সময় মত সাহায্য এলেই হয় এখন, কিশোর বলল। পূণির্মার আর মাত্র ছয় দিন বাকি।
সে-কথা ক্যাসাডোর মনে আছে কিন্তু উপায় এখনও বের করতে পারেনি।
ভাল ঘুম হলো সে রাতে। ঝরঝরে শরীর মন নিয়ে পরদিন সকালে উঠল অভিযাত্রীরা।
নাস্তা সেরেই প্লেনে চলে গেল ক্যাসাডো।
ছ-দিনের মধ্যে কি সাহায্য আসবে? রবিনের প্রশ্ন। কিশোর?
জানি না।
না এলে লোকগুলোকে বাঁচানো যাবে না, মুসা বলল।
অনেক মাথা ঘামাল ওরা, কিন্তু কোন উপায় বেরোল না। তিন হাইজ্যাকারের। কপালে বলিই লেখা আছে বোধহয়।
সন্ধ্যায় ফিরে এল ক্যাসাডো। মুখ উজ্জ্বল। এতক্ষণে সারা দুনিয়া জেনে গেছে আমাদের খবর।
চকচকে চোখে সমস্ত, শুনল ছেলেরা।
চার দিনের মধ্যেই আর্মি হেলিকপ্টার আসবে আমাদের নিতে, বলল। ক্যাসাডো। কপ্টার নামার জন্যে একটা ল্যাণ্ডিং প্যাড বানিয়ে ফেলতে হবে। আমাদের। সেটা কোন ব্যাপারই না। জিভারোদের দেখিয়ে দিলেই বানিয়ে ফেলতে পারবে। দেবতার ক্যান নামবে শুনলে খুব আগ্রহ করে কাজ করবে।,,
তা-তো হলো, জিনা বলল। তিন হাইজ্যাকারের কি হবে?
হাসি হাসি মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল ক্যাসাডোর। সরি, জিনা, ওদের জন্যে কিছু করতে পারছি না। মিলিটারিকে বললে বল প্রয়োগ করবে, তাতে জিভারোদের সঙ্গে লড়াই অনিবার্য। তখন তোমরাও আহত হতে পারো। তিনটে আসামীর। জন্যে সে রিস্ক আমি নিতে পারব না।