এগোতে যাবে ওরা, ডেকে থামাল ক্যাসাডো।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর, কি?
ওই যে, দেখো।
তিনটে ব্যাগ। প্রায় নতুন। মন্দিরের দরজার কাছেই মাটিতে পড়ে আছে।
ইয়াল্লা! চোখ বড় বড় করে ফেলল মুসা। এ-তো সভ্য মানুষ! এখানে এসে ঢুকল কারা?
কি জানি? হাত নাড়ল ক্যাসাডো। আমাদের হুশিয়ার থাকতে হবে…
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই ঘাউ করে উঠে দৌড় দিল রাফিয়ান। এক ছুটে ঢুকে গেল গোল দরজা দিয়ে। স্তম্ভিত ভাবটা কাটতে সময় লাগল জিনার। ডাকতে দেরি হয়ে গেল।
রাফির হলো কি? মুসা অবাক।
অবাক ক্যাসাডোও হয়েছে। ভয় পেল বলে তো মনে হলো না।
না, পায়নি, জিনা বলল। চেনা কারও গন্ধ পেয়েছে।
অসম্ভব। রবিন মাথা নাড়ল। হতেই পারে না। এখানে চেনা-জানা কে আসতে যাবে?
আন্দাজে কথা না বলে চলো না দেখি, কিশোর বলল।
হাত তুলে জিভারোদের ডাকল ক্যাসাডো। ওরা কাছে এলে বলল, কাছাকাছি থেকো। আমরা ভেতরে যাচ্ছি। দরকার হলেই ডাকব। সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে পড়বে। ভয় পেয়ে পালিও না যেন।
এবার নেতৃত্ব নিল ক্যাসাডো। খুব সাবধানে আগে আগে চলল সে, ছেলেরা পেছনে। দরজার কাছে পৌঁছে মুখোশটা খুলে হাতে নিল, একবার দ্বিধা করেই পা রাখল ভেতরে। অদৃশ্য হয়ে গেল।
দ্বিধা করল কিশোরও। চলো, আমরাও যাই। ওঁকে একা যেতে দেয়া ঠিক হবে না।
ছেলেরাও ঢুকল মন্দিরে।
আলো খুব কম। ক্যাসাডোর গায়ে ধাক্কা লাগল মুসার। চোখে আলো সইয়ে নেয়ার জন্যে দরজার সামান্য ভেতরেই দাঁড়িয়ে গেছে বৈমানিক।
মন্দিরের দেয়ালের অসংখ্য ফুটো দিয়ে ম্লান আলো আসছে। আবছা আলো চোখে সয়ে এলে দেখল ওরা, বিশাল এক হলরুমে ঢুকেছে। অনেকটা জাহাজের খোলের মত লাগছে ঘরটা। এক সারি বিভিন্ন আকারের শুভ : ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে, ঠিক মাঝের স্তম্ভটার পর থেকে আবার ছোট হওয়া শুরু হয়েছে। কাস্তের মত বাকা মেঝেতে দাঁড়িয়ে ছাত ঠেকা দিয়েছে স্তম্ভগুলো। দু-দিকে দুটো। সিঁড়ি। একটা উঠে গেছে চাঁদের বাঁ প্রান্তের কাছে, আরেকটা ডান প্রান্তে। দুটো সিঁড়ির শেষ ধাপের ওপরে হাতে গোল দুটো ফোকর।
বাঁ সিঁড়িটা দিয়ে ওপরে উঠে বাইরে মাথা বের করে দেখল কিশোর, ফোকরের বাইরে মস্ত বড় একটা চ্যাপ্টা পাথর ফেলে রাখা হয়েছে বলির পাথর। নিশ্চয় নরবলি দেয়া হত ওখানে। পাশেই একটা মঞ্চ, পুরোহিত কিংবা ওঝা। দাঁড়াতো হয়তো।
শশশ! হুঁশিয়ার করল ক্যাসাডো। ডান সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাচ্ছিল, নেমে এল তাড়াতাড়ি। ওপরে শব্দ।
লুকিয়ে পড়ার আগেই উজ্জ্বল আলো এসে পড়ল নিচে। ইংরেজিতে বলল। কেউ, হলো তাহলে ঠিক। আমি তো ভাবলাম গেল টর্চটা।
.
১০.
ওরটেগা! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। কণ্ঠস্বর চিনে ফেলেছে।
দ্রুত নড়ল আলোটা। একে একে পড়ল পাঁচজনের ওপর।
আরি, কাণ্ড দেখো! বিশ্বাস করতে পারছে না ওরটেগা, ছেলেগুলো। সঙ্গে আরেকজন লোকও আছে।
ডানের সিঁড়ি দিয়ে আরও দু-জন নেমে এল, চ্যাকো এবং জিম।
ক্যাসাডোই ওঝা বিটলাঙগোরগা শুনে হেসেই বাঁচে না তিন হাইজ্যাকার।
ভাল আছ, জিনা? জিজ্ঞেস করল জিম। এসেছ, ভালই হলো। এক সঙ্গে যেতে পারব।
তারমানে যাননি আপনারা এখনও? মুসা বলল। আমি তো ভাবছিলাম, আপনারা আমাদের উদ্ধার করতে ফিরে এসেছেন।
না, যেতেই পারিনি এখনও. বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল জিম। জিভারোদের গা থেকে পালিয়ে প্লেনে ফিরে গিয়েছিলাম। তাড়াহুড়ো করে তিনটে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। পথ হারিয়েছি পরের দিনই। চলে এসেছি এদিকে। মন্দিরটা দেখে ঢুকলাম। জানো, কি আবিষ্কার করেছি? এসো, দেখাই।
ডানের ফোকর দিয়ে ছাতে বেরিয়ে এল ছেলেরা।
খাইছে! চিৎকার করে উঠল মুসা।
একটা বেদীর ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বিরাট দেবী-মূর্তি, নিরেট সোনায় তৈরি। মাথায় সোনার মুকুটের সামনের দিকে রূপালী বাকা চাঁদ, রূপা দিয়ে বানিয়ে পরে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে মুকুটে। কাঁধে রূপার চাঁদরের শাল জড়ানো। আশ্চর্য দুটো চোখ, সবুজ দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
পান্না, ওরটেগা বলল। খুলে নেব। ভাল দাম পাওয়া যাবে রিওতে।
একটা ছুরি বের করে মুর্তিটার দিকে এগোল সে।
আর তাকে থামাল কাসাডো। এক মিনিট। আমরা এখানে কি করে এলাম, জিজ্ঞেস করেননি। আগে শুনুন, তারপর পান্না খুলবেন।
খুলে বলল সব ক্যাসাডো। মূর্তিটা হামুকে দিয়ে দিলে, কথা শেষ করল সে, আমাদের মুক্তি দেবে। সবাই আমরা দেশে ফিরে যেতে পারব।
হেসে উঠল চ্যাকো, বিশ্রী শোনাল হাসিটা। জিভারোরা জানছে কি করে মৃতিটা ছিল এখানে? পেছনে আরেকটা ছোট দরজা আছে, চোখ দুটো নিয়ে বেরিয়ে যাব আমরা, ঢুকে পড়ব জঙ্গলে। ওরা দেখবেও না, জানবেও না কিছু।
কিন্তু দরজার বাইরে যে ব্যাগ পড়ে আছে? রবিন প্রশ্ন তুলল।
জাহান্নামে যাক ব্যাগ। ওগুলোর মধ্যে তেমন কিছু নেই। ওরটেগা, জলদি খোলা।
ওরটেগার হাত চেপে ধরল ক্যাসাডো। পাগল হয়েছেন। শুনুন, মূর্তিটা অক্ষত। অবস্থায় হামুকে দিতে হবে। নইলে সে কোনদিনই আমাদের যেতে দেবে না।
আপনাদের কথা কে ভাবছে? ঘোঁৎ-ঘোঁৎ করে উঠল চ্যাকো। আমি চাই টাকা।
চুপ করে ছিল জিম। বলল, চ্যাকো, জিভারোদের হাত থেকে পালাতে পারবে না। সহজেই ওরা ধরে ফেলবে। এই জঙ্গল থেকে বেরোতেই যদি না পারো, টাকা পাবে কিভাবে? তার চেয়ে ক্যাসাডো যা বলছে শোনো। আমাদের সবারই মঙ্গল তাতে।