দারুণ ভো! জিনা বলল।
হউ! তার সঙ্গে একমত হলো রাফিয়ান, চোখে কৌতূহল।
বা-বা, আলোচনায় যোগ দিতে চাস মনে হয়? আরও শুনবি? হেসে বলল ক্যাসাডো। পুরানো কিংবদন্তী, অথচ অনেক চেষ্টা করেও এতদিন গুপ্তধন খুঁজে পায়নি কেউ। এখন আর উৎসাহ নেই কারও। তাছাড়া গুপ্তধন দিয়ে করবেটাই বা কি তারা? কেউ আর খুজতে যায় না। ওসব ধনরত কিংবা সোনাদানার চেয়ে। শিকার খোঁজাই অনেক বেশি জরুরী প্রয়োজন ওদের।
হ্যাঁ, তা ঠিক, মাথা দোলাল কিশোর। তারমানে, গুপ্তধনের ব্যাপারে তাদের আগ্রহী করতে চাইলে, এমন কিছু বলতে হবে, যাতে স্বার্থ থাকবে জিভারোদের।
হ্যাঁ। এটাই তোমাদের সুযোগ। ওদের বোঝানো সহজ হবে, কারণ… নাটকীয় ভঙ্গিতে চুপ হয়ে গেল সে, চোখ টিপল। আগ্রহ বাড়াচ্ছে ছেলেদের।
কারণ! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। জলদি বলুন?
কারণ, কিংবদন্তী আরও বলে, ওই গুপ্তধন খুঁজে পাবে কয়েকটা ছেলেমেয়ে।
বলেন কি? উত্তেজনায় গলা কাঁপছে রবিনের। তাহলে তো মস্ত সুযোগ। আজই গিয়ে বলুন না সর্দারকে, আমরা গুপ্তধন খুজতে যেতে চাই। বলবেন ওই গুপ্তধনের মধ্যে রয়েছে ওদের সৌভাগ্য।
রবিন ঠিকই বলেছে, কিশোর বলল। অন্যভাবেও বলতে পারেন। বলবেন, ওই গুপ্তধনে রয়েছে কালুম-কালুমের আশীর্বাদ। আমরা থাকলে যতখানি সৌভাগ্য আসবে, গুপ্তধনগুলো তার চেয়ে বেশি সৌভাগ্য বয়ে আনবে। তাছাড়া ওগুলো অমর। দর কষাকষি করবেন, আমরা ওগুলো খুঁজে বের করে দেব, বিনিময়ে। আমাদের মুক্তি দিতে হবে।
আস্তে, এত উত্তেজিত হয়ো না, হাত তুলল ক্যাসাডো। গুপ্তধন খুঁজে পাবেই, এত শিওর হচ্ছ কেন? মন্দিরটার কাছে হয়তো নিয়ে যেতে পারবে। জিভারো গাইড, কিন্তু গুপ্তধন বের করবে কি ভাবে? কোথায় খুঁজবে?
কোন নির্দেশ নেই?
আছে। কিন্তু শত শত বছর ধরে মুখে মুখে ফিরেছে কথাগুলো, কিছু বাদ। পড়েছে, কিছু রঙ চড়েছে, বিকৃত হয়েছে। আসল সত্য বের করে নেয়া খুব কঠিন। প্রায় অসম্ভবই বলা চলে।
তবু, চেষ্টা করতে দোষ কি? রহস্যের গন্ধ পেয়েছে কিশোর পাশা, তাকে থামানো এখন আরও অসম্ভব কিন্তু সেকথা জানে না ক্যাসাডো। জায়গাটা নিশ্চয়। এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়, তাহলে জিভারোদের কানে আসত না। মিস্টার ক্যাসাডো, আপনি গিয়ে বলুন সর্দারকে। চেষ্টা করে দেখি, তারপর যা হয় হবে।
হাসল বৈমানিক। তা নাহয় বলব। কিন্তু লাভ কতখানি হবে জানি না। এমনও হতে পারে, বলতে পারে, হাতে যা আছে তা-ই ভাল, যেটা নেই সেটার পেছনে ছুটোছুটি করার দরকার নেই।
কিন্তু ওগুলো পাওয়ার পর তো আর ‘নেই’ থাকবে না।
হুঁ, নাছোড়বান্দা ছেলে। ছেলেমী হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ঠিকই বলেছ, চেষ্টা করতে দোষ কি? কথায় আছে : ফরচুন ফেভারস দা ব্রেভ। হাহ।
পর দিনই হামুর সঙ্গে দেখা করতে গেল বিটলাঙগোরগা।
অধীর হয়ে কুঁড়ের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল ছেলেরা।
অনেকক্ষণ পর বেরিয়ে এল ওঝা। মুখোশের জন্যে তার মুখ দেখা গেল না, দীর্ঘ আলোচনার ফল কি হয়েছে, আন্দাজ করা গেল না।
ইশারায় ডাকল ওঝা। ছেলেদের নিয়ে আবার কুঁড়েতে ঢুকল।
মাদুরে বসে রয়েছে সর্দার। পাশে তার ছেলে পুমকা, জ্বলজ্বলে চোখে তাকাল বিদেশী বন্ধুদের দিকে।
উঠে এসে এক এক করে চারজনের গায়েই এক আঙুল রাখল সর্দার, কয়েকবার করে মাথা নাড়ল, সম্মান দেখাল দেবতার বাচ্চাদের।
পুমকাও উঠে এসে হাত মেলাল ইউরোপীয়ান কায়দায়, বন্ধুদের কাছে। শিখেছে।
ব্যাপার দেখে হাঁ হয়ে গেল তার বাবার মুখ, চোখ বড় বড়। স্বর্গের রীতি শিখে ফেলছে তার ছেলে। ছেলের এত বড় সম্মানে গর্বে আধ হাত ফুলে উঠল হামুর। বুক। সরল হাসিতে ভরে গেল মুখ।
মনে হয় খবর ভাল, ফিসফিস করে বলল জিনা।
অভ্যর্থনার পালা শেষ হলে ছেলেদের নিয়ে তার কুঁড়েতে চলে এল। ক্যাসাডো। মুখোশ খুলে হাসল।
সর্দারের সঙ্গে কি কথা হয়েছে শোনার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছে ছেলেরা, রাফিয়ানও যেন খুব উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। সে-ও বসল ছেলেদের পাশে, গম্ভীর ভাবভঙ্গি।
হামুকে বুঝিয়ে বললাম, ক্যাসাডো বলল। বললাম, তোমরা স্বর্গ থেকে এসেছ কালুম-কালুমের নির্দেশ নিয়ে। কিংবদন্তীর গুপ্তধন খুঁজে বের করার জন্যে। প্রথমে বিশেষ গায়ে মাখল না হামু। তার কাছে গুপ্তধনের কোন মূল্য নেই। শেষে। বললাম, কাল রাতে কালুম-কালুমের আদেশ পেয়েছি আমি।
আল্লাহরে, কি কাণ্ড! এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ল মূলা। এক আমেরিকায়ই মানুষে মানুষে কী ফারাক। এক অঞ্চলের মানুষ পাড়ি দিচ্ছে মহাশূন্য, আরেক অঞ্চলের মানুষ এখনও পড়ে আছে সেই গুহামানবের যুগে।
তা কি আদেশ এল কালুম-কালুমের কাছ থেকে? হেসে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কালুম-কালুম তো বাতাসের দেবতা, নাকি? ক্যাসাডোও হাসছে। গত রাতে, ঝড়ো হাওয়া বয়েছে, টের পেয়েছ? সেটাই বললাম হামুকে : বাতাসের মধ্যে রয়েছে জিভারোদের সব চেয়ে বড় সৌভাগ্য। ওগুলো একবার এনে তুলতে পারলে, শিকারের আর কোন দিন অভাব পড়বে না, দীর্ঘজীবী হবে জিভারোরা, শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ে প্রতিবারেই জিতবে-কখনও হারবে না।
তারমানে আমরা এখন খুব দামী বস্তু হয়ে গেলাম ওদের কাছে, রবিন মন্তব্য করল। এজন্যেই এত সম্মান দেখিয়েছে মিস্টার হামু।
হ্যাঁ।
আসল কথা কি বলল? আর তর সইছে না কিশোরের। যেতে দেবে?