হ্যাঁ, বলল লিলি। অনেকটা তাই। ছুঁলে ওগুলোর মধ্যে রোগ সংক্রমণ ঘটতে পারে, খুব সহজে। ইনফেকশন প্রতিরোধের ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে এখন ওদের।
হুঁ, মাথা দোলাল মুসা। তারমানে রোগে ধরলেই মরবে?
কয়েকটা ইতিমধ্যেই মরেছে, লিলি জানাল। জীবদেহে একধরনের বিশেষ কোষ তৈরি হতে থাকে, যেগুলো রোগজীবাণু খেয়ে ফেলে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ওই কোষই দেহের ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। ওই ইমিউন রিঅ্যাকশন থেকেই তখন বাতে ধরে মানুষকে, পাকস্থলীতে ঘা হয়, এমন কি কোন কোন ক্ষেত্রে পাগলামি রোগেও ধরে।
খাইছে! আঁতকে উঠল মুসা। আল্লারে! কি সাংঘাতিক!
ইমিউনিটি না থাকলে বসন্ত রোগ ঠেকাতে পারব না আমরা, রবিন বলল, হাম হবে…
জানি, বলল লিলি। সেজন্যেই ইমিউনিটি নিয়ে গবেষ করছেন ডাক্তার রেডম্যান, যাতে ইচ্ছেমত ইমিউন কন্ট্রোল করতে পারি আমরা, রিঅ্যাকশন না হয়, অন্য রোগে আক্রান্ত না হই…
চমৎকার আইডিয়া! কিশোর বলল। বই-টই লিখছেন নাকি?
এখনও না। তবে ইচ্ছে আছে। ডাক্তার রুডলফ লিখছেন, ডাক্তার হ্যারিসনও লখছেন তার ঘরে কেবিনেটে বন্দি মানুষটাকে নিয়ে।
কেবিনেটে বন্দি? ভুরু কোঁচকাল রবিন।
মানুষের ফসিল, বুঝিয়ে বলল লিলি। আফ্রিকায় পেয়েছিলেন হাড়গুলো। জোড়া লাগিয়ে লাগিয়ে আস্ত কঙ্কাল বানিয়ে ফেলেছেন।
এখানকার গুহায় পাওয়া গুহামানবকে নিয়েও তাই করতে চান বোধহয়? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ, লিলির কণ্ঠে অস্বস্তি, কিন্তু ম্যাকম্বার আংকেল দিতে রাজি না।
উঁদুরগুলোকে খাওয়ানো শেষ হলে আবার ওয়াশরুমে ফিরে এল ওরা। মাস্ক-গ্লাভস খুলে সিংকের পাশে একটা ঢাকনাওয়ালা পাত্রে ফেলল লিলি। তিন গোয়েন্দাও তাদের মাস্ক খুলে রাখল। তারপর এসে ঢুকল আবার হলরুমটায়।
এবার শিম্পাঞ্জীগুলো দেখবে, চলো, লিলি বলল।
একটা করিডরের শেষ মাথায় ডাক্তার ক্লডিয়াসের ল্যাবরেটরি। রেডম্যানের ঘরটার চেয়ে বড়। জানালার কাছে একটা খুঁচায় দুটো শিম্পাঞ্জী গম্ভীর হয়ে বসে আছে। খাঁচার ভেতরে নানারকমের খেলনা রয়েছে। ছোট একটা ব্ল্যাকবোর্ড আছে, রঙিন চক দিয়ে ওটাতে লেখে ওরা।
লিলিকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল শিম্পাঞ্জী দুটো। খাঁচার ফাঁক দিয়ে। হাত বের করল বড়টা।
আরে, রাখ, রাখ, খুলছি! এগিয়ে গিয়ে খাঁচার দরজা খুলে দিল। লিলি। শিম্পাঞ্জীটা বেরিয়ে এসে তার হাত ধরল।
ভাল আছিস? জিজ্ঞেস করল লিলি। রাতে ভাল ঘুম হয়েছে?
চোখ বুজে মানুষের মতই মাথা কাত করে সায় জানাল শিম্পাঞ্জীটা। তারপর দেয়ালঘড়ি দেখিয়ে এক আঙুল দিয়ে বাতাসে
একটা অদৃশ্য চক্র আঁকল।
ও, অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছিস।
তিরিং করে মস্ত এক লাফ দিয়ে হাততালি দিল জানোয়ারটা।
দ্বিতীয় শিম্পাঞ্জীটাও বেরিয়ে এসে একটা টেবিলে উঠে বসেছে।
এই, খবরদার! ধমক দিল লিলি।
তাকের ওপর রাখা কেমিক্যালের বোতলগুলোর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে ওটা। কয়েকবার তাকিয়ে সেদিকে লিলির কোন আগ্রহ
দেখে, লাভ হবে না বুঝতে পেরে টেবিল থেকে খালি একটা বীকার নিয়ে লাফ দিয়ে নামল মাটিতে। খেলতে শুরু করল।
রেফ্রিজারেটর থেকে ফল আর দুধ বের করল লিলি, তাক থেকে বড় বাসন নামাল।
আপনার কথা বোঝে ওরা? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
বোঝে। ইঙ্গিতে অনেক কিছু বোঝাতেও পারে। ডাক্তার ক্লডিয়াস শিখিয়েছেন। বোবা ইস্কুলে যেভাবে সাইন ল্যাঙগোয়েজ শেখানো হয়, তেমনি।
ডাক্তার সাহেব তো নেই, রবিন বলল। এখন এগুলোর কি হবে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলল লিলি। জানি না। বোর্ডের মেম্বাররা আগামী মাসে মিটিঙে বসে ঠিক করবেন। কয়েকটা শিম্পাঞ্জী ইতিমধ্যেই মরে গেছে। অনেক দাম দিয়ে কিনে আনা হয়েছিল ওগুলোকে। ছলছল করছে তার চোখ।
টেবিলে খাবার দিল লিলি। ছোট চেয়ারে উঠে বসে খেতে শুরু করল শিম্পাঞ্জীগুলো।
খাওয়া শেষ হলে ওগুলোকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে আবার খাঁচায় ভরল লিলি। চেঁচামেচি, বাদপ্রতিবাদ অনেক করল ওরা, বড়টা তো লিলির হাতই আঁকড়ে ধরে রাখল, খাঁচায় বন্দি থাকতে রাজি নয়।
থাক, কোমল গলায় বলল লিলি, আমি আবার আসব।
একটা ব্যাপার লক্ষ করেছে কিশোর, ল্যাবরেটরিতে ঢোকার পর লিলির আচরণ অন্যরকম হয়ে গেছে। অথচ ম্যাকম্বারের বাড়িতে থাকার সময় মনমরা হয়ে থাকে।
ডাক্তার ক্লডিয়াসকে মিস করছে ওরা, লিলি বলল। আমিও। এখানে ঢুকলে তার জন্যে খারাপ লাগে। খুব ভাল মানুষ ছিলেন। হাসিখুশি। অসুস্থ হয়েও হাসি যায়নি মুখ থেকে।
আগে থেকেই অসুস্থ? কিশোর ধরল কথাটা। আমি তো ভেবেছিলাম, রকি বীচে হঠাৎ করেই স্ট্রোকটা হয়েছে।
হঠাৎ করেই হয়েছে। তবে কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। এখানে থাকতেই। চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়তেন। হয়তো শিম্পাঞ্জীগুলো তখন বাইরে রয়েছে, জিনিসপত্র তছনছ করছে, খেয়াল করতেন না। সেদিন তার সঙ্গে আমার যাওয়ার কারণই ছিল এটা। বুঝতে পারছিলাম, একা এতটা পথ যেতে পারবেন না।
কেন গিয়েছিলেন রকি বীচে? এমনি, সাধারণ কথাচ্ছলেই প্রশ্নটা করল কিশোর, কিছু ভেবে নয়।
কিন্তু চমকে উঠল লিলি, লাল হয়ে গেল গাল।
ইয়ে…তিনি…আমি জানি না, আরেক দিকে মুখ ফেরাল লিলি। দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করল।
চট করে একে অন্যের দিকে তাকাল মুসা আর কিশোর।
ব্যাপার কি? নিচু গলায় বলল মুসা।