জেলডা আন্টি, ও কিশোর পাশা, পরিচয় করিয়ে দিল লিলি।
ওর কথাই বলেছিলাম। ওরা সাহায্য না করলে খুব বিপদ হত সেদিন রকি বীচে।
মুসা আর রবিনের পরিচয় দিল কিশোর।
গুহামানব দেখতে এসেছে, লিলি বলল, আন্টি, ওদের থাকার ব্যবস্থা করা যায় না?
মহিলার পেছনে উঁকি দিল আরেকজন। কিংসলে ম্যাকম্বার।
আবার পরিচয় করানোর পালা।
তোমাদের কথা লিলির কাছে শুনেছি, বলল ম্যাকম্বার। জায়গা দিতে পারলে খুশিই হব। কিন্তু বাড়িতে তো হবে না। অবশ্য গোলাঘরের মাচায় শুতে পারো। ঘরের পেছনে অনেক জায়গা, ব্যবহার করতে পারবে। একটা পানির কলও আছে ওখানে। কুঁচকে এল লোকটার ধূর্ত চোখের পাতা। ভাড়াও খুব কম নেব তোমাদের কাছ থেকে। একরাতের জন্যে, এই দশ ডলার। কি বলো, অ্যাঁ? তিনজনের জন্যে।
কি বলছ, আংকেল! চেঁচিয়ে উঠল লিলি।
তুমি চুপ করো, মেয়ে, বলেই স্ত্রীর দিকে তাকাল ম্যাকম্বার। চোখ সরিয়ে নিল জেলড়া।
দশ ডলারে এখানে কোথাও থাকার জায়গা পাবে না, আবার বলল ম্যাকম্বার।
বনের মধ্যে গিয়ে থাকলেই তো পারি? কিশোরের দিকে চেয়ে বলল রবিন।
পয়সাও লাগবে না…
না না, সেটা উচিত হবে না, তাড়াতাড়ি বলে উঠল ম্যাকম্বার। জায়গাটা নিরাপদ না। যখন-তখন আগুন লাগে। শুকনো মৌসুম। দাবানলের ভয় আছে।
মানিব্যাগ থেকে দশ ডলারের একটা নোট বের করে বাড়িয়ে ধরল। কিশোর। নিন। আজ রাতের ভাড়া।
গুড, নোটটা নিয়ে পকেটে ভরল ম্যাকম্বার। কণ্ঠে খুশির আমেজ। লিলি, যাও তো, পানির কলটা দেখিয়ে দিয়ে এসো।
দেখো, ছেলেরা, সাবধান থাকবে, হুশিয়ার করল মিসেস ম্যাকম্বার। ঘরে আগুনটাগুন লাগিয়ে দিয়ো না আবার।
সিগারেট খাও নাকি? জিজ্ঞেস করল ম্যাকম্বার।
না, মুখ গোমড়া করে জবাব দিল মুসা। এই, কিশোর, এদের বিরক্ত করছ কেন? বনে না থাকি, পার্কে গিয়েও তো:..
পার্কে থাকা নিষেধ, বাধা দিয়ে বলল ম্যাকম্বার। মুচকি হেসে ঘরে ঢুকে গেল সে।
ছেলেদের নিয়ে চলল লিলি। রাগে, লজ্জায় লাল হয়ে গেছে গাল।
খুব খারাপ লাগছে আমার। দেখো, কালও যদি থাকো, টাকা দেবে না। আমার কাছে কিছু আছে। চাইতে এলে ভাড়াটা আমিই দিয়ে দেব আংকেলকে।
আরে, রাখুন তো। ওসব ভেবে মন খারাপ করবেন না, কিশোর বলল। টাকাটা কোন ব্যাপার না।
কিন্তু আংকেল যখন এরকম ছ্যাচড়ামি করে না, আমার খুব খারাপ লাগে, তিক্ত কণ্ঠে বলল লিলি। কিছু বলতেও পারি না…আমাকে মানুষ করেছে ওরাই। কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। আমার বাবা-মা। আমার তখন আট বছর বয়েস।
বিষণ্ণ কণ্ঠে কিশোর বলল, আপনার আর আমার অনেক মিল। আমার বাবা-মাও কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।
তাই নাকি? তাহলে মেরিআন্টি…
আমার চাচী। নিঃসন্তান। মায়ের আদর দিয়ে মানুষ করছে আমাকে। অপরিচিত কারও কাছে আমাকে ছেলে বলেই পরিচয় দেয়।
ও! দীর্ঘশ্বাস ফেলল লিলি। তাহলে তো মা-ই!
ছেলেরা, ভাবছে, ম্যাকম্বার দম্পতি কি যত্ন নেয় না এতিম মেয়েটার? তার শীর্ণ হাত-পা, রুক্ষ চুল, রক্তশূন্য চেহারা..
গোলাঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল লিলি। পেছনে তিন গোয়েন্দা।
ধুলোয় মলিন ঘরের মাঝে ঝকঝকে নতুন একটা পিকআপ ট্রাক আর একটা ফোরডোর সিডান কার, বড় বেমানান। ঘরের কোনায় কোনায় জমে আছে জঞ্জাল, পুরানো হলদেটে খবরের কাগজের স্তূপ, বাক্স। ওয়ার্কবেঞ্চের ওপরে আর আশপাশে পড়ে রয়েছে মরচে ধরা যন্ত্রপাতি-করাত, হাতুড়ি, বাটালি, এসব।
পেছনের দেয়ালের কাছ থেকে মাচায় উঠে গেছে কাঠের সিঁড়ি।
চালার নিচের অন্ধকার, গুমট মাচায় উঠে এল ছেলেরা। একধারে জানালা একটা আছে বটে, তবে ধুলো আর মাকড়সার জালে এমনই মাখামাখি, আলো আসার পথও নেই। ধাক্কা দিয়ে পাল্লা খুলল কিশোর। হুড়মুড় করে এসে ঢুকল বাইরের তাজা, ঠাণ্ডা বাতাস।
তোয়ালে-টোয়ালে কিছু লাগবে? নিচ থেকে জিজ্ঞেস করল লিলি।
না, মুসা জবাব দিল। দরকারী জিনিস সব নিয়ে এসেছি আমরা।
মইয়ের গোড়ায় দাঁড়িয়েই আছে লিলি। যেতে ইচ্ছে করছে না যেন। আবার বলল, একটু পরেই সেন্টারে যাব আমি। জানোয়ারগুলো দেখতে চাইলে তোমরাও আসতে পারো।
ওপর থেকে মাচার ফোকর দিয়ে মুখ বের করে বলল কিশোর, আর্কিওলজিস্ট ভদ্রলোককে চেনেন নিশ্চয়? গুহামানবকে যিনি পেয়েছেন?
ডাক্তার হ্যারিসন? চিনি। দেখা করতে চাও? বাড়ি থাকলে ওনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি।
তাহলে তো খুব ভাল হয়। কঙ্কালটার বয়েস কত জানা গেছে? কি করে গুহায় এল?
মুখ বাঁকাল লিলি। সবাই ওটার কথা জানার জন্যে পাগল। বিচ্ছিরি দেখতে। নিশ্চয় গরিলার মত ছিল চেহারা।-খবরদার! গুহার ধারেকাছে যেয়ো না। শটগান নিয়ে পাহারা দেয়, আংকেল। রান্নাঘরের দরজার পেছনে লুকিয়ে বসে থাকো। গুলি খেয়ে মরবে শেষে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। ভীষণ বদরাগী লোক।…ওই গুহামানব নিয়ে কিছু একটা ঘটবে এখানে, বলে দিলাম, দেখো। খুব খারাপ কিছু!
চার
ম্যাকম্বারের বাড়ি থেকে আধ মাইল দূরে একটা পাহাড়ের ওপর ছোটবড় কিছু বাড়ির সমষ্টি গ্যাসপার রিসার্চ সেন্টার। ঘন সবুজ লন। কাঁটাতারের বেড়া নেই, এ ধরনের সেন্টারে সাধারণত যেমন থাকে। তবে পাথরের গেটপোেস্ট আছে, তাতে শক্ত পাল্লা। লিলির পেছন পেছন গাড়িপথ ধরে বাড়ির গেটে এসে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা।