চামারের বাচ্চা চামার! চেঁচিয়ে উঠে দু-হাত বাড়িয়ে ম্যাকম্বারের। ওপর ঝাঁপ দিলেন হ্যারিসন।
দ্রুত সরে গেল ক্যামেরা। এরপর কি ঘটল, টেলিভিশনের দর্শকেরা আর দেখতে পেল, না। তবে নানারকম শব্দ ভেসে এল স্পীকারে। কি ঘটছে স্টুডিওতে, বুঝতে অসুবিধে হলো না কারও।
পর্দায় দেখা দিল এলান ফিউজ। প্রিয় দর্শকবৃন্দ, চমৎকার এই অনুষ্ঠানটি এখানেই শেষ করছি। আরও অনেক কথা জানার ছিল ডাক্তার হ্যারিসনের কাছে, সময়ের অভাবে তা সম্ভব হলো না। এখন দেখবেন ফার্নিচারের রঙের ওপর একটি বিশেষ প্রতিবেদন…
সুইচ অফ করে দিল মুসা। খাইছে! কাণ্ডটা কি কুরল? কিশোর, কে জিতেছে বলে মনে হয়? হ্যারিসন নাকি ম্যাকম্বার? এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কিশোর বলল, ম্যাকম্বার খুব বাজে লোক। হাড়গুলো সরাতে না দিলে…
রাখতে পারবে? বাধা দিয়ে বলল রবিন।
কেন পারবে না? গুহাটা যদি তার সম্পত্তি হয়? স্পষ্ট বোঝা গেল, দু-জনের মাঝে আগে থেকেই খারাপ সম্পর্ক ছিল। নইলে হ্যারিসনকে দেখে শটগান আনতে যাবে কেন ম্যাকম্বার? হ্যারিসনও বদমেজাজী। শেষ পর্যন্ত দু-জনের মাঝে কি যে হয় বলা যায় না।
রক্তারক্তি কাণ্ড, মুসা বলল।
হলে অবাক হব না। ম্যাকম্বার চাইবে কঙ্কাল দেখিয়ে পয়সা কামাতে, আর হ্যারিসন চাইবে তুলে নিয়ে গিয়ে ল্যাবরেটরিতে ঢোকাতে। একজন লোভী, আরেকজন বদমেজাজী। খুনখারাপিও হয়ে যেতে পারে।
তিন
সেদিনের ওই বিচিত্র সাক্ষাত্তারের পর টেলিভিশনে আর একবারও এলেন না ডাক্তার হ্যারিসন। তবে কিংসলে ম্যাকম্বারকে কয়েকবারই দেখা গেল। শো-এর ব্যাপারে কথা বলল। সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, যেখান থেকে যে গেল, সবাইকেই সাক্ষাৎকার দিল সে। বসন্ত গিয়ে গ্রীষ্ম এল। জুলাইয়ের মাঝামাঝি নাগাদ দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় প্রতিটি মানুষই জেনে গেল ম্যাকম্বারের গুহামানবের কথা। এরপর শুরু হলো শো-এর বিজ্ঞাপন। জানানো হলো, আগস্টের শুরুতে সাধারণ দর্শকদের জন্যে খুলে দেয়া হবে গুহামুখ।
জুলাইয়ের শেষ দিকে আরও অনেকের মত তিন গোয়েন্দাও সাইট্রাস গ্রোভে যাওয়ার জন্যে তৈরি হলো।
হ্যানসনকে খবর দিল কিশোর।
এক সুন্দর সকালে ইয়ার্ডের গেটে এসে দাঁড়াল রাজকীয় রোলস রয়েস। চড়ে বসল তিন গোয়েন্দা।
একটানা দুই ঘণ্টা দক্ষিণে চলল গাড়ি। তারপর পুবে মোড় নিয়ে উঠে এল পাহাড়ী পথে। পথের ধারে কোথাও কমলা বাগান, কোথাও ঝোঁপঝাড়। খোলা মাঠ আর তৃণভূমিও আছে, তাতে চরছে গরু।
আরও আধ ঘণ্টা পর সেন্টারডেল নামে ছোট একটা শহরে ঢুকল গাড়ি। শহর পেরিয়ে ওপাশে আবার পথ। দুই ধারে ঝোঁপঝাড়, জঙ্গল, মাঠ-মাইলের পর মাইল একই দৃশ্য। অবশেষে একটা সাইনবোর্ড দেখা গেল। তাতে ইংরেজিতে লেখা:
সাইট্রাস গ্রোভে স্বাগতম।
খুবই ছোট শহর, মাত্র কয়েকটা ঘর। একটা সুপারমার্কেট, দুটো পেট্রোল স্টেশন, একটা গাড়ির দোকান, আর একটা ছোট মোটেল আছে নাম-রেস্ট-আ-বিট। শহরের সুইমিং পুলের পাশ কাটাল গাড়ি। পুরানো, ধুলোয় ঢাকা একটা রেল স্টেশনের ধার দিয়ে এসে পড়ল পুরানো শহরের মাঝখানে। পথের একধারে একটা পার্ক, আরেক ধারে কিছু দোকানপাট! একটা ব্যাংক, হার্ডওয়্যারের দোকান, ওষুধের দোকান, আর পাবলিক লাইব্রেরি দেখা গেল। শহরটা ছোট বটে, কিন্তু লোকে লোকারণ্য। মোটেলের কপালে নিওন সাইনে নো ভ্যাকান্সি লেখা। সাইট্রাস গ্রোভ কাফের সামনে লম্বা লাইন, খাবার কেনার জন্যে অধীর হয়ে আছে লোকে।
এ সবই ওই গুহামানবের কল্যাণে, বলল রবিন। কি ভিড় দেখেছ?
হ্যামবার্গার শপের দিকে চেয়ে হাসল কিশোর। মনে হচ্ছে এই খেয়েই থাকতে হবে। থামতে বলল হ্যাঁনসনকে। দিন সাতেক পরে এসে আবার এই জায়গা থেকেই তুলে নিতে বলল।
গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেল হ্যাঁনস।
একজন দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে, ম্যাকম্বারের বাড়িটা কোথায় জেনে নিল কিশোর।
সহজেই খুঁজে পাওয়া গেল বাড়িটা। সামনে গাড়িবারান্দা, ছোট লন। এককালে সুন্দর থাকলেও এখন তেমন কিছু নেই। দেয়ালে রঙ করা হয়নি অনেকদিন, জানালার পর্দা পুরানো। কিছু কিছু পাল্লার শার্সি উধাও। অযত্নে বেড়ে উঠেছে বাগানের ঘাস।
আমি তো ভেবেছিলাম বড়লোক, রবিন বলল। মনে করেছি, হার্ডওয়্যার আর গাড়ির দোকানটা ওরই।
হলেই বা কি? কিশোর বলল। যা শহর, লোক আছে কয়জন, আর বেচাকেনাই বা কি হবে?
গাড়িবারান্দায় একটা নোটিশ, তাতে লেখা রয়েছে: যারা রাতে থাকার জায়গা চায় তারা যেন বাড়ির পাশ দিয়ে ঘুরে এগোয়।
নির্দেশ পালন করল ছেলেরা। দেখল, একটা পথের ধার থেকে শুরু হয়েছে মাঠ, তার ওপাশে বন। মূল বাড়িটার কাছে একটা গোলাঘর, বয়েসের ভারে ধুকছে, বিবর্ণ। মাঠের ধারে পাহাড়। পাহাড়ের কোলে চমৎকার একটা নতুন বিল্ডিং। ছিমছাম, সুন্দর, আধুনিক। একটা জানালাও নেই। ডাবল ডোর দরজার ওপরে সাইনবোর্ড:
গুহামানবের গুহায় স্বাগতম।
বাহ্! মুসা বলল। মাল কামানোর বেশ ভাল ব্যবস্থা হয়েছে।
কিছু চাই? পেছনে নরম গলায় কথা শোনা গেল।
দেখেই চিনল কিশোর। আরে, লিলি অ্যালজেডো, আপনি!
ও, কিশোর। তোমরাও দেখতে এসেছ।…তা তোমার মা কেমন আছেন?
হাসল কিশোর। ভাল।
কথা শুনেই বোধহয়, বাড়ির পেছনের দরজা খুলে বেরোল একজন মোটা-খাটো মহিলা, পাতলা চুল।কে রে, লিলি?… কি চায়?