বোকা মেয়ে, বললেন পরিচালক।
গাফিলতির জন্যেই ধরা পড়ল বিল, আবার বলল কিশোর। গাড়ির পেছনের সীটে ডুবুরীর যন্ত্রপাতি ফেলে রাখল। এমন কি সবুজ বলপেনটাও ফেলে দেয়নি, যেটা দিয়ে মুক্তিপণের টাকা চেয়ে চিঠি, লিখেছিল। ইচ্ছে করেই বানান ভুল করেছিল, যাতে সবাই ভাবে, অল্প শিক্ষিত লোকের কাজ।
মুক্তিপণের টাকা সে নিয়েছিল সাইট্রাস গ্রোভ আর সেন্টারডেলের মাঝের একটা রেস্ট এরিয়া থেকে, ওখানেই টাকা রেখে আসার নির্দেশ দিয়েছিল ম্যাকম্বারকে। টাকার বটুয়া তার গাড়ির বুটেই পাওয়া গেছে। জুতোজোড়াও, যেগুলো পরে গুহামানবের কঙ্কাল চুরি করতে গিয়েছিল।
তাকে সন্দেহ করলে কিভাবে?
সাইট্রাস গ্রোভে যত ঘটনাই ঘটেছে, কোনটা ঘটার সময়ই সামনে। ছিল না সে। সেটা চোখে পড়ার মত। পার্কে সারা শহরের লোক যখন বেহুশ, তখনও সে সেখানে ছিল না। স্টেশনে ট্রাংকটা যখন পাওয়া গেল, তখনও সে সেখানে এল না। অথচ কাছাকাছি যারা ছিল, সবাই এসেছে, কেউ না এসে পারেনি। স্বাভাবিক কৌতূহল।
যেদিক থেকেই ভাবা হোক, সন্দেহ পড়ে তার ওপর। সেন্টারে। তার অবাধ যাতায়াত। লিলির সঙ্গে ভাব। ম্যাকম্বারের রান্নাঘর থেকে চাবি চুরি করা তার জন্যে সহজ। ডাক্তার ক্লডিয়াসের আবিষ্কৃত ফরমুলাটা লিলির কাছ থেকে জেনে নিতে পারে সে অনায়াসে।
কঙ্কাল চুরির সময় সে যে তার বাসায় ঘুমাচ্ছিল, এই অ্যালিবাইও ততটা জোরাল ছিল না, যতটা মনে হয়েছে। বাড়িওয়ালীকে বলেছে, সে তার ঘরে ঘুমাবে। বাড়িওয়ালী দেখতে যায়নি, সত্যি সে ঘুমাচ্ছিল কিনা। সে আছে কিনা, এই খোঁজ নেয়ারও দরকার মনে করেনি। পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে এসেছিল বিল। বাড়িওয়ালী এসে তার ঘরে উঁকি দিতে পারে, এই আশঙ্কা করেনি, কারণ, যতদিন সে থেকেছে ওবাড়িতে, কোনদিন, কোন কারণে একবারের জন্যেও তার ঘরে উঁকি দিতে আসেনি মহিলা।
গাড়ি নিয়ে সোজা সাইট্রাস গ্রোভে চলে গেল বিল, পানির ট্যাংকের কাছে। শহরের লোক তখন সবাই পার্কে, উত্তেজিত, কেউ লক্ষ করল না তাকে। অটোমেটিক স্পৃিঙ্কলারের টাইমার সেট করল সে, পানিতে ওষুধ মেশার ব্যবস্থা করে বেরিয়ে এল ট্যাংক হাউস থেকে। ঠিক দশটা বিশ মিনিটে আপনাআপনি চালু হয়ে গেল স্পৃিঙ্কলার সিসটেম।
সিসটেম চালু হতেই সে সোজা চলে গেল মিউজিয়ামে। পরনে স্কুবা স্যুট, মুখে মুখোশ। স্প্রে-বটল থেকে ওষুধ ছিটিয়ে বেহুশ করল জিপসি ফ্রেনিকে। কঙ্কালটা চুরি করে নিয়ে পালাল। হাড়গুলো একটা বস্তায় ভরে নিয়ে এল স্টেশনের ঘরে, ওখানে আগেই রেখে গেছে ট্রাংকটা। হাড়গুলো ট্রাংকে ভরে বেরিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। ডুপ্লিকেট একটা চাবি আগেই বানিয়ে নিয়েছিল। চুরির কাজটা খুব সহজেই সারল সে, কারণ তখন শহরের সব লোক ঘুমাচ্ছে পার্কে। পুলিশের কাছে নিজেই বলেছে এসব বিল, দম নেয়ার জন্যে থামল কিশোর। তারপর বলল, লিলির সাহায্যেই ল্যাবরেটরি থেকে অ্যানাসথেটিক চুরি করেছে সে। লিলিকে বলেছিল, কঙ্কালটা চুরি করে নিয়ে গিয়ে কোন মিউজিয়ামে বিক্রি করে দেবে। তাতে হাজারখানেক ডলার আসতে পারে। অর্ধেক দেবে লিলিকে।
কিন্তু যখন ম্যাকম্বারের কাছে দশ হাজার ডলার দাবি করে বসল বিল, লিলি আঁতকে উঠল। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করল। কাজ হলো না। এমন কি লিলির পাঁচশো ডলার দিতেও রাজি হলো না সে। সব টাকাই নিজে মেরে দিতে চাইল। তাতেই আরও বেশি রেগেছে লিলি।
বোকা মেয়ে, আবার বললেন পরিচালক।
তবে, পরে উকিল আর শেরিফের সামনে সব বলে দিয়েছে লিলি। সে-ই এখন সরকার পক্ষের প্রধান সাক্ষী। নিজের কুকর্মের জন্যে লজ্জিত। সব দিক বিবেচনা করে বিচারক তাকে জেলে না ঢুকিয়ে একটা ফাইন করে ছেড়ে দেবেন বলে মনে হয়।
কিন্তু কঙ্কাল চুরির আইডিয়াটা প্রথমে কার মাথায় এসেছিল?
বলা যায়, দু-জনেরই। কথায় কথায় একদিন ফরমুলাটার কথা বিলকে বলল লিলি। ক্লডিয়াসের মৃত্যুর পর ফরমুলাটা গোপন করে ফেলার পরামর্শ দিল লিলিকে বিল। তার মনে হয়েছিল, এই ফরমুলা দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব। তখনও আর কেউ জানে না ওই ফরমুলার কথা, একমাত্র লিলি আর সে ছাড়া। তাই, অন্য কেউ জানার আগেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক থেকে পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলল, ফরমুলাটা চুরি করল।
হুঁ, মাথা দোলালেন পরিচালক, অনেক কিছুই করা সম্ভব ওই অ্যানাসথেটিক দিয়ে। ব্যাংকের সমস্ত লোককে ঘুম পাড়িয়ে ব্যাংক লুট করা যায়, জুয়েলারীর দোকান সাফ করে দেয়া যায়, হাজারটা অপরাধ করা যাবে ওই একটিমাত্র অ্যানাসথেটিকের সাহায্যে। কিন্তু একটা ব্যাপার, পানিতে মিশিয়ে দিল, অথচ ল্যাবরেটরি টেস্টে কিছু পাওয়া গেল না কেন?
সেটা ওই অ্যানাসথেটিকের আরেকটা বিশেষত্ব। ছড়ানোর কয়েক সেকেণ্ড পরই সমস্ত লক্ষণ মুছে যায়। একেবারে উবে যায়। কোন টেস্টেই আর ধরা পড়ে না।
খুব বিপজ্জনক। আচ্ছা, রেডম্যানের কি হলো?
এ সম্মানিত লোক, আর অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে তাকেও জেলে ঢোকাননি বিচারক। তবে ফাইন করা হয়েছে। গ্যাসপার সেন্টার থেকে চাকরি গেছে তার। যা বদনাম হয়েছে, আর কেউ তাকে নেবে কিনা, সে-ব্যাপারেও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। জেল খাটার চেয়ে বড় শাস্তি হয়েছে তার।