পেলেপুষে বড় করেছি। এখন পাখা গজিয়েছে। আট বছরের যখন ছিল…
আহা রে, কি আমার মায়া রে! মুখ বাঁকাল, লিলি। এনেছ তো টাকার লোভে। দয়া কিংবা মায়া দেখিয়ে নয়।
আচ্ছা, ওসব কথা পরে হবে, বাধা দিলেন ডাক্তার রুডলফ।
আসল কথায় আসা যাক। কঙ্কালটা…
আমার কঙ্কাল আমাকে দিয়ে দেয়া হোক, বলে উঠল ম্যাকম্বার, ব্যস, আর কিছু চাই না।
সরি, বলল ডেপুটি, এই কেসের মীমাংসা হওয়ার আগে দেয়া যাবে না।
অন্য কঙ্কালটাও লাগবে? মানে, এই কেসের জন্যে। যদি দরকার হয়, বলুন।
একসঙ্গে সবগুলো মুখ ঘুরে গেল কিশোরের দিকে।
বনের মধ্যে পুরানো একটা গির্জায় পাওয়া যাবে ওটা, আবার বলল কিশোর। তাই না, ডাক্তার রেডম্যান?
পাথর হয়ে গেলেন যেন রেডম্যান।
ডাক্তার হ্যারিসনকে খেলো করতে চেয়েছিলেন। ডাক্তার ক্লডিয়াস মৃত, তার পরে যার গ্যাসপার পুরস্কার পাওয়ার কথা, তার দুর্নাম করে দেয়া গেলে পুরস্কারের তালিকায় সহজেই নাম উঠে যাবে আপনার। দশ লক্ষ ডলার, সোজা কথা তো নয়। মিউজিয়ামে সে-রাতে আপনিই ঢুকেছিলেন। মিস্টার ম্যাকম্বারের রান্নাঘর থেকে চাবি চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তার হ্যারিসনের আফ্রিকান হোমিনিডের কঙ্কালটা আগেই চুরি করেছেন, সেটা মিউজিয়ামে রেখে অন্যটা তুলে নিয়ে চলে গেছেন। আফ্রিকান কঙ্কালটা আমেরিকানটার জায়গায় রেখে এমনভাবে আশপাশের মাটি সমান করে দিয়েছেন, যাতে কিছু বোঝা না যায়।
মিউজিয়াম থেকে বেরোনোর সময় শব্দ করে ফেলেছিলেন। তাতে জেগে যায় জিপসি ফ্রেনি। তবে সেরকম কিছু ঘটতে পারে ভেবে তৈরিই হয়ে গিয়েছিলেন আপনি। গায়ে পশুর ছাল জড়িয়ে নিয়েছিলেন, সেন্টারে আছে ওরকম ছাল, কয়েক ঘণ্টার জন্যে একটা তুলে নিয়ে যেতে অসুবিধে হয়নি আপনার। মাথায় পরেছিলেন উইগ, মিসেস গ্যারেটের। সে কারণেই উইগটা অনেক খুঁজেও পাননি মিসেস গ্যারেট, পরদিন আবার যথাস্থানেই পেলেন। তারমানে কাজ শেষ করে এনে আবার জায়গামত রেখে দিয়েছিলেন আপনি। আর আপনার ওই বিকট সাজসজ্জা দেখে জিপসি ভাবল, বুঝি গুহামানবটাই জ্যান্ত হয়ে উঠে চলে যাচ্ছে।
যতসব আবোলতাবোল কথা! বললেন বটে রেডম্যান, কিন্তু গলায় জোর নেই।
আপনাকে প্রথমে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ রেখেছিলাম, বলে গেল কিশোর। স্টেশনের ঘরে ট্রাংকে কঙ্কালটা পাওয়ার পর আর পারলাম না। ডাক্তার হ্যারিসনের দুর্দশা দেখে কেমন খুশি হয়েছিলেন, মনে আছে? হাসি ফেটে পড়ছিল আপনার চোখেমুখে। ঢাকতে পারেননি। দেখে ফেলেছিলাম। তারপর থেকে নতুন করে ভাবতে বসলাম। পশুর ছাল আর উইগ নির্দেশ করল সেন্টারের দিকে। আমি, মুসা আর রবিন যখন সেদিন গির্জায় গিয়েছিলাম, আপনিও ছিলেন ওখানে। আমাদের দেখে ভয় পেয়ে যান, যদি কঙ্কালটা দেখে ফেলি? তাই ওখানে থাকতেই দেননি। নানারকম কথা বলে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন আমাদের।
তোমার বকর বকর থামাবে? জোর করে হাসলেন রেডম্যান।
বকর বকর নয়, স্যার, প্রমাণ দিতে পারি। বেশি ভেবেচিন্তে কাজ। করেন আপনি, আর তা করতে গিয়েই ভুল করে সূত্র রেখে গেছেন। গুহামানবের পায়ে জুতো থাকার কথা নয়, সেটা বোঝানোর জন্যেই আপনিও পরেননি। সে-রাতে আমেরিকান কঙ্কালটা নিয়ে গির্জায় যাওয়ার সময় মাঠের ধারে নরম মাটিতে আপনার পায়ের ছাপ রেখে গেছেন। সেটার ছাঁচ তুলে এনেছি আমি। আপনার ডান পায়ের একটা আঙুলে দোষ আছে, বুড়ো আঙুলের পরেরটা..।
সবগুলো চোখ ঘুরে গেল রেডম্যানের খালি পায়ের দিকে। তাড়াতাড়ি পা চেয়ারের নিচে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করলেন ডাক্তার, এবং আরেকটা ভুল করলেন। সবাই দেখল, যা দেখার। আর প্রতিবাদ করে লাভ হবে না বুঝেই উঠে দাঁড়ালেন তিনি। যাই, কাপড় পরে ফেলি। আমার উকিলকেও খবর দিতে হবে।
এনথনি, এমন একটা কাজ তুমি করতে পারলে! বিষণ্ণ শোনাল ডাক্তার রুডলফের কণ্ঠ।
তার দিকে তাকালেন না রেডম্যান। ধীরপায়ে হাঁটতে শুরু করলেন ঘরের দিকে। পিছু নিল ডেপুটি।
আমার উকিলকেও খবর দেয়া দরকার, বাঁকা চোখে ম্যাকম্বারের দিকে চেয়ে বললেন হ্যারিসন। একটা ইনজাংকশন জারি করাতে হবে। দ্বিতীয়বার আর আমেরিকান হোমিনিড নিয়ে খেলা জমাতে দেব না তোমাকে, ম্যাকম্বার।
উঠে দাঁড়ালেন তিনি। গুনগুন করে উঠলেন মনের সুখে।
পারবে না! চেঁচিয়ে উঠল ম্যাকম্বার। ওগুলো আমার হাড়!
কে বলল? রসিকতা করলেন রুডলফ। তোমার হাড় তো তোমার গায়েই রয়েছে। বলতে পারো, তোমার কোন নিকট আত্মীয়ের হাড়। তবে সেটা প্রমাণ করতে হবে আদালতে। তার আগে আর গুহামানবের হাড় নিয়ে গুহায় ঢোকাতে পারছ না।
বিশ
দিন সাতেক পর।
হলিউডের বিখ্যাত চিত্রপরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে, তার বিশাল ডেস্কের সামনে বসে আছে তিন গোয়েন্দা।
ডেস্কের অন্য পাশে বসে গভীর মনোযোগে একটা ফাইল পড়ছেন পরিচালক। গুহামানবের কেস ফাইল। যত্ন করে টাইপ করে এনেছে রবিন।
টেরিফিক! অবশেষে মুখ তুলে বললেন পরিচালক। ফাইল বন্ধ করতে করতে বললেন, আরেকটু হলেই ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছিল বিল উইলিয়ামস।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। বেশি হেলাফেলা করে ফেলেছিল, সাবধান থাকলে তাকে ধরা কঠিন হত। ডাক্তার ক্লডিয়াসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকের পাতাগুলো সে-ই নষ্ট করেছিল। যাতে কেউ না জানতে পারে, হারবারভিউ লেনে একজন অ্যানাসথেটিস্টের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন ক্লডিয়াস। সেটা জানত শুধু লিলি। তার মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থাও করে ফেলেছিল বিল।