গ্যাস পেডালে পা চেপে ধরল লিলি। সোজা এগিয়ে যাচ্ছে বিলের গাড়ি সই করে। প্রচণ্ড জোরে গুঁতো লাগাল পুরানো গাড়িটার পেটে। ঝনঝন করে কাঁচ ভাঙল, ধাতুর সঙ্গে ধাতুর সংঘর্ষে শব্দ হলো বিকট।
ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল তিন গোয়েন্দা।
যখন চোখ মেলল, দেখল, ম্যাকম্বারের গাড়ির বাম্পারে আটকে গেছে বিলের গাড়ির পেছনের চাকা। দুটো গাড়ির কোনটাই নড়তে পারছে না।
মুখ খারাপ করে গাল দিয়ে উঠল বিল। দরজা খুলে স্প্রে-বটল হাতে দৌড়ে এল লিলির দিকে।
পেছনের দরজা খুলে বেরিয়ে গেল মুসা। বিলকে সই করে ছুঁড়ে মারল হাতের জিনিসটা।
বিলের ঠিক কপালে লাগল ওটা। টলে উঠল সে। হাত থেকে খসে পড়ল বোতল। সে নিজেও হুমড়ি খেয়ে পড়ল পথের ওপর।
সাইরেনের শব্দ শোনা গেল।
ঘ্যাঁচ করে এসে থামল শেরিফের দ্বিতীয় আরেকটা গাড়ি, বিলের কয়েক ফুট দূরে। পিস্তল হাতে লাফিয়ে নামল অফিসার। ভুরু কুঁচকে তাকাল পড়ে থাকা দেহটার দিকে, তারপর ছেলেদের দিকে ফিরল।
টমেটোর টিন, স্যার, হাসিতে বত্রিশ দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। মুসার। গাড়ির পেছনের সীটে রাখা ছিল। তুলে মেরে দিয়েছি।
উনিশ
পরদিন, বুধবার, সকাল।
গ্যাসপার রিসার্চ সেন্টারের চত্বরে বসে রৌদ্রোজ্জ্বল সুইমিং পুলের দিকে তাকিয়ে আছে ডেপুটি শেরিফ। খুব সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করছে। ডিউটি না থাকলে এতক্ষণে গিয়ে নেমে পড়ত পানিতে।
বিলের বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ জোগাড় করেছি, বলল সে। ট্রাংকের গায়ে তার আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। ওটা চুরি করে এনেছে তার বাড়িওয়ালীর স্টোররুম থেকে।
বসে থাকা সকলের ওপর চোখ বোলাল ডেপুটি। জেলডা আর কিংসলে ম্যাকম্বার পাশাপাশি বসেছে। সকালে ফোন করেছিল তাদেরকে রুডলফ, এখানে আসার জন্যে, অবশ্যই ডেপুটির অনুরোধে। আগের রাতটা মিসেস গ্যারেটের বাড়িতে কাটিয়েছে লিলি, দু-জনেই এসেছে এখন। মুষড়ে পড়েছে লিলি, তার বাহুতে হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে মহিলা।
আগের দিন সারাটা বিকেল সেন্টারডেলে শেরিফের লোকের সঙ্গে কাটিয়েছে তিন গোয়েন্দা, এখানে-ওখানে গেছে। তারপর সাইট্রাস গ্রোভে ফিরে এসেছে লিলির সঙ্গে।
ওয়ার্করুম থেকে বেরিয়ে এলেন ডাক্তার রুডলফ আর ডাক্তার হ্যারিসন। সুইমিং পুল থেকে গা মুছতে মুছতে এসে তোয়ালে গায়ে জড়িয়েই চেয়ারে বসলেন ডাক্তার রেডম্যান।
আমার গুহামানবের কি হলো তাই বলুন, জিজ্ঞেস করল ম্যাকম্বার। কখন পাব?
ট্রাংকের হাড় তোমার না! চেঁচিয়ে উঠলেন হ্যারিসন। ওগুলো আমার। আফ্রিকান হোমিনিড।
দুটো কঙ্কাল ছিল, দুই আঙুল তুললেন ডাক্তার রুডলফ। আরেকটা কোথায়?
এই চোরনীটাকে জিজ্ঞেস করছেন না কেন? বুড়ো আঙুল দিয়ে লিলিকে দেখাল জেলডা। চোরের দোসর। কোথায় লুকিয়েছে, বলুক।
ঝট করে মাথা তুলল লিলি। রাগে চোখ জ্বলছে। জানি না!
আরি, আবার তেজ দেখায়। এটা এখানে কেন? হাজতে ভরা হয়নি কেন? ধরে আচ্ছামত কয়েক ঘা লাগালেই পেট থেকে সুড়সুড় করে বেরিয়ে আসবে কথা। জানে না, হুহ!
জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে, বলল ডেপুটি।
জামিন! খেঁকিয়ে উঠল ম্যাকম্বার। ওর জামিন হতে গেল কে?
আমি, শান্তকণ্ঠে বললেন হ্যারিসন।
তুমি? তুমি হওয়ার কে?
ওর বস্। আসলে জামিন হওয়ার তো কথা ছিল তোমার। গেলে তো না।
যাইনি বলে কি মহা অন্যায় করে ফেলেছি নাকি?
ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল জেলডা। আর যাবই বা কেন? চোরের শাস্তি হওয়া উচিত।
হ্যাঁ, তা তো হওয়াই উচিত, মুখ ছুটে গেল লিলির। আমার চেয়ে বড় বড় চোরেরা আছে এখানেই। তাদের জন্যেই আজ আমার এ দশা। নইলে লস অ্যাঞ্জেলেস কিংবা স্যান ডিয়েগোতে কলেজে পড়ার কথা এখন আমার।
এহ, আবার কলেজে পড়ার শখ। টাকা পাবে কোথায়? চুরি করে?
চুরি তত তোমরা করেছ! মুখের ওপর বলল লিলি। আমার বাবার ইনসুরেন্সের টাকাগুলো গেল কোথায়?
জোঁকের মুখে নুন পড়ল যেন, কুঁচকে গেল জেলডা।
থামল না লিলি, বলল, আর আমার বাড়িভাড়া? হলিউডের বাড়িভাড়া কত আসে জানি না আমি, না? কত টাকা লাগে আমার খেতে, থাকতে?
কেশে গলা পরিষ্কার করল ম্যাকম্বার। আহহা, অযথা রাগ করছিস তুই, লিলি। একেবারে বদলে গেছে ম্যাকম্বারের কণ্ঠস্বর, গলায় যেন মধু ঝরছে। যেতে চাইলে যাবি, কলেজে ভর্তি হতে চাইলে হবি, সে তো ভাল কথা। আমরাই সব ব্যবস্থা করে দেব। স্যান ডিয়েগো, কিংবা ওশনসাইড, যেখানে খুশি গিয়ে লেখাপড়া কর। বাড়ি ভাড়া করে দেব, খরচ দেব। আর কি চাস?
আমার বাবা মারা যাওয়ার পর কত টাকা বাড়িভাড়া এসেছে, তার হিসেব চাই। ইনসুরেন্সের টাকা কত পাওয়া গেছে, কতটা আমার পেছনে খরচ হয়েছে, তার হিসেব চাই। সেটা বাদ দিয়ে যা থাকবে সব চাই আমার।
কত আর থাকবে, হাত ওল্টাল জেলড়া। কয়েকশো। বড় জোর হাজারখানেক।
বেশ। তাহলে উকিলের কাছেই যাব আমি। এসে হিসেব-নিকেশ করুক। যদি একহাজার বাকি থাকে, সেটা আর নেব না, দান করে দেব তোমাদেরকে।
নাহয় পাঁচ হাজারই হবে, তাড়াতাড়ি বলল জেলডা।
মুচকি হাসল ডেপুটি। হাত তুলল, থামুন, থামুন। লিলি বড় হয়েছে। ও যদি উকিলের কাছে যেতে চায় যাক না। আপনাদের অসুবিধে কি?
না না… আমতা আমতা করল ম্যাকম্বার। আমাদের আর অসুবিধে কি? গেলে যাক না…
হ্যাঁ, এখন তো বড় হয়েছে, মুখ কালো হয়ে গেছে জেলডার।