চেয়ে আছে বিল। চেহারায় কোন পরিবর্তন নেই।
লিলি আজ সকালে আপনার সঙ্গেই দেখা করতে গিয়েছিল। কোথায় ও?
স্প্রে করার ছোট প্লাস্টিকের বোতলটা অনেক দেরিতে দেখল কিশোর। ড্রাইভিং সীটের পাশেই কোথাও লুকিয়ে রেখেছিল, বের করে হাতে নিয়েছে বিল। ওটার মুখ সই করল কিশোরের দিকে।
চেঁচিয়ে উঠে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল মুসা।
স্প্রে করল বিল।
হালকা ভেজা ভেজা কিছু এসে লাগল ছেলেদের নাকেমুখে।
পরক্ষণেই পিছিয়ে গিয়ে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিল বিল। আরও সরে গেল পেছনে।
অসাড় হয়ে এল কিশোরের হাত-পা। শরীরে এক বিন্দু শক্তি নেই। মাথাটা গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে সীটের একপাশে। ঘন হয়ে নামছে। অন্ধকারের চাদর, ঢেকে দিচ্ছে সবকিছু। জ্ঞান হারাল সে।
আঠারো
কিশোরের হুঁশ ফিরল। নাকে লাগছে ভাপসা গন্ধ। কাছেই জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে কারা যেন, নড়ে উঠল কেউ।
ঘন অন্ধকার।
উঠে বসল কিশোর। হাতে লাগল মাটি। অন্ধকারে গুঙিয়ে উঠল কেউ।
কে? হাত বাড়াল কিশোর।
গায়ে হাত লাগতেই চেঁচিয়ে উঠল একটা নারীকণ্ঠ।
লিলি? বলল কিশোর। লিলি অ্যালজেড্ডা?
ছাড়ো! চেঁচিয়ে উঠল মেয়েটা। আমাকে ছেড়ে দাও।
কাছেই গুঙিয়ে উঠল মুসা। বিড়বিড় করে কি বলল রবিন।
আমি, কিশোর, শান্তকণ্ঠে বলল সে। মুসা, তুমি ভাল আছ? রবিন?
আ-আমি…ভাল, জবাব দিল মুসা। আল্লাহ্ রে, কোথায় এলাম?
রবিন? আবার ডাকল কিশোর।
ভাল।
লিলি, জিজ্ঞেস করল কিশোর, কোথায় রয়েছি জানেন?
পুরানো একটা গির্জার মাটির তলার ঘরে। লাশ রাখত আগে এখানে। ফুঁপিয়ে উঠে নাকি গলায় কাঁদতে শুরু করল লিলি। আর কোনদিন বেরোতে পারব না গো! কেউ আমাদের বাঁচাতে আসবে না! হায় হায় গো, এবার মরব!
মারছে রে! গুঙিয়ে উঠল আবার মুসা। শুরু হলো! থামুন না, প্লীজ!
লিলি, প্লীজ, মাথা ঠাণ্ডা করুন, অনুরোধ করল কিশোর।
বেরোনোর নিশ্চয় পথ আছে। কোনদিক দিয়ে এনেছে আমাদেরকে?
সিঁড়ির মাথায় ঢাকনা আছে একটা, ট্র্যাপডোর। ওই পথে। খানিক আগে উঁকি দিয়েছিল বিল, আমি জেগে গেছি দেখে আরেক দফা স্প্রে করে গেছে নাকের ওপর। জোরে জোরে শ্বাস টানল লিলি। কান্না থেমেছে। সকালে কথা কাটাকাটি হয়েছে ওর সঙ্গে। ওকে বলেছি, কঙ্কালটা ফিরিয়ে না দিলে শেরিফকে সব বলে দেব।
সেজন্যেই এনে ভরে রেখেছে? জানতে চাইল মুসা।
হ্যাঁ। কেঁপে উঠল লিলির কণ্ঠ। প্রথমবার হুঁশ ফিরলে অন্ধকার দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। জোরে চেঁচাতেও সাহস হয়নি। যদি কোন ফাঁকফোকর থেকে সাপ কিংবা অন্য কিছু বেরিয়ে আসে। চিৎকার শুনে ঢাকনা তুলল বিল। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলাম। ফোকরের কাছাকাছি যেতেই আবার আমার নাকে ওষুধ ছিটাল সে। আবার বেহুশ। হয়ে গেলাম।
ওষুধটা নিশ্চয় ডাক্তার ক্লডিয়াসের আবিষ্কার, তাই না? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হ্যাঁ। ওটার নাম রেখেছিলেন এফ-টোয়েন্টি থ্রি। এপ্রিলের তেইশ তারিখে আবিষ্কার করেছেন তো, সেজন্যে। নানারকম পরীক্ষা। চালানোর ফলে শিম্পাঞ্জীগুলো খুব দ্রুত বেড়ে উঠছিল, তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে মরে যাচ্ছিল। সেটা ঠেকানোর জন্যে ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করছিলেন তিনি। বানিয়ে বসলেন বেহুশ করার ওষুধ।
এ-ব্যাপারে আলোচনা করার জন্যেই হারবারভিউতে যাচ্ছিলেন, তাই না? বলল কিশোর, অ্যানাসথেটিস্টের কাছে। কিন্তু কাজ শেষ করে যেতে পারলেন না। আচ্ছা, ফরমুলাটার কথা আপনিই বিলকে জানিয়েছেন তাই না? পার্কের লোককে ঘুম পাড়িয়ে গুহামানব চুরি করার ফন্দিটা কার?
আবার কান্না আশা করেছিল কিশোর, কিন্তু কাঁদল না লিলি। বলল, ফন্দিটা বিলের। ফরমুলাটার কথা আমি বলেছি। টাকার দরকার ছিল। কয়েকশো ডলার। তাহলে এখান থেকে চলে যেতে পারতাম। কিন্তু বেঈমানী করল সে।
এসব কথা তো পরেও জানা যাবে, নাকি? বলে উঠল মুসা। এখন বেরোনোর চেষ্টা করা দরকার।
কারও কিছু বলার অপেক্ষা না করেই হাতড়ে হাতড়ে সিঁড়িটা বের করল সে। সাবধানে উঠতে শুরু করল। পিছু নিল রবিন। ওপরে উঠে মাথা ঠেকে গেল ট্র্যাপডোরে। দুই হাতে ঠেলে দেখল মুসা, উঠল না ঢাকনাটা।
আর কোন পথ নেই? জানতে চাইল রবিন।
না, নিচ থেকে জবাব দিল লিলি। কাঁদতে শুরু করল। আমরা…আমরা ফেঁসেছি ভালমত…বিল এসে খুলে না দিলে…হায় হায়, কেন একাজ করতে গেলাম গো…
আহ, কি শুরু করলেন? বলল কিশোর। এখান থেকে ঠিকই বেরিয়ে যাব আমরা। থামুন তো।
এই, মুসা, বলল রবিন। গালে বাতাস লাগছে। এই যে, এই দেয়ালটায় ফাঁকটাক কিছু আছে। সিঁড়ির পাশের দেয়ালের কথা বলল সে।
দেয়ালে হাত বুলিয়ে দেখল দু-জনে। পুরানো ইট, ভেজা ভেজা। নখ দিয়ে খোঁচা দিলেই নরম মাটির মত নখের ভেতর ঢুকে যায়। বেরিয়ে থাকা একটা ইটের মাথা ধরে হ্যাঁচকা টান মারল মুসা। তাকে অবাক করে দিয়ে খুলে বেরিয়ে এল ওটা। ফোকরে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে দেখল সে, ওপাশে আরেক সারি হঁট। দুই সারি হঁট দিয়ে তৈরি হয়েছে। দেয়াল।
কাজে লেগে গেল দু-জনে। সহজেই খুলে আসছে একের পর এক ইট। জোরে ঠেলা দিলে কোন কোনটা খুলে পড়ে যাচ্ছে অন্যপাশে। ছোট একটা ফোকর হয়ে গেল দেখতে দেখতে। আলো আর বাতাস এখন দুইই আসছে ওপথে।
মানুষ বেরোনোর মত একটা ফোকর করে ফেলল ওরা। দু-জনের আঙুলের মাথাই রক্তাক্ত, ব্যথা নিশ্চয় করেছে, কিন্তু টের পেল না। উত্তেজনায়।