কি দেখেছে ফ্রেনি? গুহামানব তো হতেই পারে না। হয়তো গুহামানবের রূপ ধরে এসে তাকে ধোঁকা দিয়েছিল কেউ। মিস্টার ম্যাকম্বারের রান্নাঘর থেকে চাবি নিয়ে এনেছিল, মিউজিয়ামে ঢুকে গুহার কঙ্কালটা তুলে তার জায়গায় রেখে দিয়েছিল আফ্রিকান কঙ্কালটা। দ্বিতীয় কঙ্কালটা নিয়ে বেরিয়ে এসে, দরজায় তালা লাগিয়ে চলে গিয়েছিল মাঠের ওপর দিয়ে।
পাগল! বলে উঠল ম্যাকম্বার। ওই পাগলামি কে করতে যাবে?
ডাক্তার হ্যারিসনের ওপর যে দোষ চাপাতে চায়, তাকে খেলো করতে চায়। সে জানে, আগে হোক, পরে হোক, গুহার কঙ্কাল বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করতে আসবেই। লেবেল দেখলেই বুঝবেন, ওটা আফ্রিকান, ডাক্তার হ্যারিসন আফ্রিকায় যেটা পেয়েছেন।
মাথা নাড়লেন রুডলফ। তাতে কিছু হত না। গুহামানবের ছবি নিয়েছে হ্যারিসন, ফটোগ্রাফ। আফ্রিকান হোমিনিডের সঙ্গে আমেরিকানটার পার্থক্য আছে।
ছবি দেখে কি সত্যি বোঝা যায়? প্রশ্ন তুলল কিশোর। তাছাড়া কঙ্কালের বেশির ভাগই ছিল মাটির তলায়। আফ্রিকান হোমিনিডই ওখানে রেখে যে ফটো তোলেননি ডাক্তার হ্যারিসন, তার কি প্রমাণ? বোঝার উপায় আছে?
তাই তো সে করেছে, চেঁচিয়ে উঠল ম্যাকম্বার। সে ওটা রেখেছে। তারপর কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে। মাঝখান থেকে আমাদের দশ হাজার ডলার গচ্চা। হ্যারিসনের দিকে ফিরল। সহজে ছাড়ব তোমাকে ভেবেছ? কেস করব আমি তোমার নামে। জেলের ভাত না খাইয়েছি তো… রাগে কথা আটকে গেল তার। গটগট করে বেরিয়ে গেল।
জ্বলন্ত চোখে তার দিকে তাকালেন হ্যারিসন। তারপর কুঁকলেন ট্রাংক থেকে হাড়গুলো বের করার জন্যে।
সরি, ডাক্তার হ্যারিসন, বাধা দিল ডেপুটি। এগুলো এখন ছুঁতে পারবেন না। আমাদের কাছে থাকবে। আদালতে হাজির করার দরকার হতে পারে।
মুখ বিকৃত করে ফেললেন হ্যারিসন। তারপর ম্যাকম্বারের মত বেরিয়ে গেলেন তিনিও।
উত্তেজনা শেষ। পাতলা হতে লাগল ভিড়।
তিন গোয়েন্দা রাস্তায় বেরিয়ে এল, উজ্জ্বল রোদে।
হেসে বলল মুসা, হয়ে গেল কেসের সমাধান।
না, হয়নি, বলল কিশোর। এখনও জানি না আমরা, কে ওই গুহামানব। জানি না, কে ঘুম পাড়াল পার্কভর্তি লোককে। আমেরিকান ফসিলটার কি হলো, তা-ও জানি না।
ম্যাকম্বারের বাড়ির দিকে চলল তিনজনে। অর্ধেক পথ পেরিয়েছে, ওই সময় তাদেরকে ডাকল বিল উইলিয়ামস। পথের মোড়ে গাড়ি রেখে তাতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কি হয়েছে ওখানে? স্টেশনের দিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল সে। এত লোক?
চোরাই কঙ্কালটা পাওয়া গেছে, একটা ট্রাংকের ভেতরে, জবাব দিল রবিন।
তাই নাকি? চোর ধরা পড়েছে? মুক্তিপণের টাকা দিয়েছে ম্যাকম্বার?
দিয়েছে, কিশোর বলল। সকালে।
ভাল করেছে। ঝামেলা গেল। আবার ট্যুরিস্ট জমাতে পারবে।
ঝামেলা আছে। হঠাৎ কি মনে হলো কিশোরের, অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল। লিলিকে দেখেছেন?
মাথা নাড়ল বিল। না। কেন?
না, কয়েকটা কথা ছিল। মনে হয় সেন্টারডেলে গেছে। আপনিও ওখানে যাচ্ছেন নাকি?
হ্যাঁ। যাবে?
দরজা খুলে ড্রাইভিং সীটে বসল বিল। বাঁকা হয়ে ঘুরে খুলে দিল পেছনের দরজা।
ডুবুরীর যন্ত্রপাতি সীটের একধারে ঠেলে দিয়ে উঠে বসল মুসা, তার পাশে রবিন। কিশোর বসল সামনে, বিলের পাশে।
চলতে শুরু করল গাড়ি। দোকানপাট আর স্টেশন ছাড়িয়ে এল। সুইমিং পুলের পাশ দিয়ে চলল। ড্রাইভিং বোর্ডে উঠে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা।
দারুণ মজা, না? ওদের দেখিয়ে বলল বিল। আমারও খুব ইচ্ছে করে। ইস, যদি সাঁতার জানতাম।
শহর থেকে বেরিয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে সেন্টারডেলের দিকে ছুটেছে গাড়ি। পেছনে তাকাল কিশোর। মুসার হাতে স্কুবা মাস্কটা। চোখাচোখি হলো দু-জনের। কথা হয়ে গেল ইঙ্গিতে। মাস্কটা আবার সীটে নামিয়ে রেখে পেছনে হেলান দিল মুসা।
আড়চোখে বিলের মুখের দিকে তাকাল কিশোর।
হাসি ফুটেছে বিলের ঠোঁটে। ফাঁক হয়ে আছে সামান্য, শিস দেয়ার ভঙ্গিতে।
দু-জনের মাঝখানে সীটের ওপর পড়ে রয়েছে কয়েকটা চিউইং গামের মোড়ক, একটা প্লাস্টিকের বাক্স-ঢাকনাটা নেই, খালি একটা কোকাকোলার টিন, একটা সবুজ বলপেন, খালি একটা খাম-উজ্জ্বল সবুজ রঙে উল্টোপিঠে লেখা রয়েছে কিছু, বোঝা যায়।
উল্টে নিয়ে পড়ল কিশোর। একটা লিস্ট। ওপরে পেট্রোল পাম্প আর একটা অটো সার্ভিস সেন্টারের নাম লেখা রয়েছে। লিস্টের সবচেয়ে নিচের নামটা দৃষ্টি আকর্ষণ করল তার:
এ সাইনস সার্ভিস, ওঅ্যাডলি রোড।
খামটা রেখে দিল কিশোর। বলল, আপনি সাঁতার জানেন না, না?
না।
তাহলে ওই ডুবুরীর যন্ত্রপাতিগুলো কার?
আমার এক বন্ধুর।
তাই? কিশোরের কণ্ঠে এমন কিছু ছিল, তার দিকে না তাকিয়ে পারল না বিল।
শহর ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে এসেছে গাড়ি। পথের দুই ধারে গাছপালা। ব্রেকে পা রেখে কান পেতে কি শোনার চেষ্টা করছে বিল। কিসের শব্দ?
কই?
ইঞ্জিনে গোলমাল…শুনছ না?
পথের পাশে গাড়ি রাখল বিল। দরজা খুলে বেরোতে শুরু করল।
পেছনের সীটে ভুরু কোঁচকাল মুসা। কই, আমি তো কিছু শুনতে পাচ্ছি না?
কান ভাল না আরকি তোমাদের, গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে নিচু হয়ে জানালা দিয়ে ছেলেদের দিকে তাকাচ্ছে বিল। মুখে রহস্যময় হাসি।
জোরে নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর! ডুবুরীর যন্ত্রপাতির মানে এখন। পরিষ্কার হয়েছে। ক্লডিয়াসের ল্যাবরেটরি থেকে এমন কোন অ্যানাসথেটিক চুরি করা হয়েছে, যেটা ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারে পার্কভর্তি লোককে। তারপর হারিয়ে যায়, কোন চিহ্ন থাকে না। কিন্তু আপনি ওই গ্যাসের মধ্যে শ্বাস নিতে চাননি, এমনকি আপনার চামড়ায় লাগুক তা-ও চাননি। সেজন্যেই মুখে লাগিয়েছিলেন মাস্ক, পরেছিলেন। ওয়েট স্যুট। আর আপনাকে ওই পোশাকে দেখে জিপসি ভাবল একচোখা, দাতাল কোন দানব। পলকের জন্যে দেখেছিল তো, ঠিক বুঝতে পারেনি।