কথার ধরন দেখে বড় বড় হয়ে গেল ম্যাকম্বারের চোখ। ফিরে গিয়ে টুলে বসল।
আপনি কি মনে করেন কঙ্কালটা কোথায় রেখেছে জানাবে। আপনাকে চোর? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
জবাব দিল না ম্যাকম্বার।
কিন্তু কাফের মালিক বলল, শিওর হওয়ার উপায় নেই। না-ও বলতে পারে।
অন্য কারও হাতে যদি পড়ে টাকাটা? একসময় বলল ব্যাংক। ম্যানেজার। পিকনিক করতে আসে অনেকেই। হয়তো কারও চোখে পড়ে গেল…
থামো তো! হাত তুলল ম্যাকম্বার। কপালে ঘামের বিন্দু জমছে।
কনুইয়ে ভর রেখে কাত হলো রবিন। লোকগুলোকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, সিনেমায় দেখি, বাস স্টেশনের লকারে জিনিস লুকিয়ে রাখে কিডন্যাপাররা। এখানে তো তেমন বাস স্টেশনও নেই। সবাই নামে। ওষুধের দোকানের সামনে।
ঝট করে সোজা হলো কিশোের। কিন্তু রেল স্টেশন আছে।
পিনপতন নীরবতা নামল কাফের ভেতরে। পার্কের শেষ মাথা ছাড়িয়ে ওপাশে পুরানো রেল স্টেশনটা, মরিসন আর ম্যাকম্বারের মুখ ঘুরে গেল সেদিকে। সেই একই রকম রয়েছে ধুলোয় ঢাকা পোডড়া বাড়িটা।
হঠাৎ লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কাফের মালিক।
চোখের পলকে টুল ছাড়ল অন্যেরা। দরজায় আগে পৌঁছল ম্যাকম্বার। ছুটে বেরোল। তার পেছনে অন্যেরা।
কাফে থেকে বেরিয়ে ছেলেরাও দৌড় দিল স্টেশনের দিকে।
বাড়িটার বারান্দায় উঠে জানালার ময়লা কাঁচের মধ্য দিয়ে ভেতরে তাকাল ম্যাকম্বার।
হাত দেবেন না! চেঁচিয়ে সাবধানে করল কিশোর। আঙুলের ছাপ লেগে যাবে।
জানালার কাছ থেকে সরে ছুটে গিয়ে দরজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ম্যাকম্বার। কাঁধের ধাক্কায় ছুটে গেল পাল্লার মরচেধরা কজা। মড়মড় করে উঠল তক্তা।
দেখতে দেখতে ভিড় জমে গেল সেখানে। সুপারমার্কেট থেকে দৌড়াদৌড়ি করে এল লোক। মেয়েরা বেরিয়ে এল ঘর থেকে। সে-পথ দিয়েই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন ডাক্তার হ্যারিসন, সঙ্গে ডাক্তার রুডলফ। হট্টগোল শুনে দু-জনেই নেমে এলেন। ওষুধের দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন ডাক্তার রেডম্যান।
আবার দরজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ম্যাকম্বার। বেশিক্ষণ সইতে পারল না পুরানো দরজা। ছিটকে খুলে গেল। স্টেশনের বারান্দায় ওঠার জন্যে হুড়াহুড়ি লাগিয়েছে লোকে।
সরো! ধমকে উঠল ম্যাকম্বার। কোন কিছুতে হাত দেবে না।
স্থির হয়ে গেল সবাই।
পুরানো, দোমড়ানো একটা ট্রাংক পাওয়া গেল ঘরের ভেতরে।
ধুলোতে দাগ দেখে বোঝা গেল, জানালা দিয়ে ঢুকিয়ে মেঝের ওপর দিয়ে টেনে আনা হয়েছে ওটা।
কি ওটাতে? জিজ্ঞেস করল কে যেন।
ট্রাংকের ডালা তুলেই সোজা হয়ে গেল মরিসন। অস্ফুট একটা শব্দ বেরোল মুখ থেকে।
ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলেন হ্যারিসন। দেখলেন ট্রাংকে কি আছে। কতগুলো হাড়, কোষ্টা কোন জায়গার সহজে বোঝার উপায় নেই। খুলির শূন্য কোটরদুটো চেয়ে আছে ছাতের দিকে।
হাঁ হয়ে গেলেন ডাক্তার। মুখ থেকে রক্ত সরে গেছে। পাঁই করে ঘুরলেন ম্যাকম্বারের দিকে। কি এ সব?
কি ভেবে পিছিয়ে গেল ম্যাকম্বার।
হ্যারিসনের বাহুতে হাত রাখলেন রুডলফ! শান্ত হও। থামো। ম্যাকম্বারের দিকে ফিরে বললেন, এগুলো এখানে এল কিভাবে?…আফ্রিকায় পাওয়া হোমিনিডের কঙ্কাল…।
বাজে কথা! চেঁচিয়ে উঠল ম্যাকম্বার। এটা আমার গুহামানব!
কড়া কিছু বলতে গিয়েও সামলে নিলেন হ্যারিসন। তাই নাকি। দেখো তাহলে ভাল করে, লেবেল লাগানো আছে প্রত্যেকটা হাড়ে। নাম্বার, তারিখ, আর কোন্ জায়গায় কোন্টা পাওয়া গেছে, লেখা আছে। পড়ে দেখো।
মিস্টার মরিসন! বাইরে থেকে ডাকল কেউ। মিস্টার ম্যাকম্বার!
সরে পথ করে দিল জনতা। ভেতরে ঢুকল কাফের কাউন্টারম্যান।
ফোন এসেছে। বলল, স্টেশনঘরে ট্রাংকের মধ্যে আছে… ট্রাংকের ভেতরে চেয়েই হাঁ হয়ে গেল। এই তো!
শুনলে তো? হ্যারিসনের দিকে চেয়ে হাত নাড়ল ম্যাকম্বার। ওগুলো আমার হাড়। আমার গুহামানবের। চোরটা নইলে জানল কিভাবে? ভুরু কুঁচকে গেল হঠাৎ। জ্বলে উঠল চোখ। শয়তান! ধাপ্পাবাজ! ধাপ্পা দিয়েছ আমাকে! দু-হাত বাড়িয়ে ডাক্তারের গলা টিপে ধরতে এল সে। তাকে ধরে ফেলল মরিসন।
ছাড়া পাওয়ার জন্যে ধস্তাধস্তি করতে লাগল ম্যাকম্বার, চেঁচিয়ে বলল, তুমি ব্যাটাই গুহায় গিয়ে কঙ্কালটা গেড়ে রেখে এসেছিলে। তারপর এমন ভাব দেখিয়েছ, যেন পেয়েছ ওখানে। লোকের নজর পড়ক, বড় ধরনের আলোড়ন হোক, এটা চেয়েছ। আর সেজন্যে। ব্যবহার করেছ আমাকে।
ব্যাটা বলে কি? মিথ্যুক কোথাকার, ঘুসি পাকিয়ে এগোতে গেলেন হ্যারিসন, আটকালেন রুডলফ।
ঘরে ঢুকল ডেপুটি শেরিফ। এগিয়ে এল। একটা ব্যাপার লক্ষ। করল এই সময় কিশোর, ভিড়ের কিনারে দাঁড়িয়ে এদিকে চেয়ে আছেন রেডম্যান। হাসছেন মিটিমিটি। হ্যারিসনের দুরবস্থা দেখেই বোধহয় তার কালো চোখে খুশির ঝিলিক।
সতেরো
হ্যারিসন সম্মানী লোক, বললেন রুডলফ। সে এরকম কাজ করতে পারে না।
নিশ্চয় করেছে! চেঁচিয়ে উঠল ম্যাকম্বার। চোরটা নাহলে জানল কিভাবে হাড়গুলো এখানে আছে?
আগে বাড়ল কিশোর। শান্তকণ্ঠে বলল, চোরই রেখেছে এগুলো এখানে।
শুনলে তো, হাঁদারাম… ম্যাকম্বারের দিকে চেয়ে মাথা নাড়লেন হ্যারিসন।
এক মিনিট, স্যার, হাত তুলল কিশোর। শুনুন। দুই সেট ফসিল ছিল না?
হ্যাঁ, বললেন হ্যারিসন।
পরশু রাতে মিউজিয়ামের সামনে পাহারা দিচ্ছিল জিপসি ফ্রেনি। বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিল, জেগে উঠল একটা শব্দে। গোলাঘরের মাচায় শুয়েছিলাম আমরা, তার ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে গেল। নেমে এসে শুনলাম একটা গুহামানবকে নাকি মাঠের দিকে চলে যেতে দেখেছে। সে। লম্বা লম্বা চুল, গায়ে ছাল জড়ানো।