আমারও, মুসা বলল।
ঠিক আছে, আমি একাই যাব, বলল কিশোর।
ম্যাকম্বারের বাড়ি পৌঁছে দেখল ওরা, লিলি পিকআপ রেখে সেন্টারে চলে গেছে। দুই সহকারীকে রেখে কিশোরও চলল সেন্টারে। দরজায় পৌঁছেই দাঁড়িয়ে গেল। লিলির চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে।
দেরি হয়েছে কে বলল? চেঁচিয়ে উঠল লিলি। মোটেই দেরি হয়নি।
দরজার কাছ থেকে সরে এসে লিভিংরুমের জানালা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিল কিশোর।
কেউ নেই। শুধু দেয়ালে বসানো পশুর মাথাগুলো শূন্য নিষ্প্রাণ চোখে তাকিয়ে রয়েছে।
কি করেছ সেটা শোনার আমার দরকার নেই, আবার চেঁচাল লিলি। আরেকবার ফোন করো। বলল, এটা একটা রসিকতা।
কিশোরের মনে পড়ল, ল্যাবরেটরির বাইরে, হলরুমে যাওয়ার পথে দেয়ালে ঝোলানো একটা টেলিফোন আছে। টেলিফোনে কথা বলছে লিলি।..
মিথ্যুক! আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠল লিলি। এরকম করা মোটেই উচিত হয়নি তোমার। আমার কি হবে ভেবেছ? .খানিক নীরবতা। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, বেশ, দেখো, আমি কি করতে পারি।
খটাশ করে রিসিভার নামিয়ে রাখার শব্দ হলো।
জানালার কাছ থেকে সরে গেল কিশোর।
মুহূর্ত পরেই ঝটকা দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এল লিলি।
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসেছে। ডান-বা কোনদিকে না তাকিয়ে ধুপধাপ করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে, প্রায় দৌড়ে গেল গেটের দিকে।
পিছু নিল কিশোর। ডাকল না।
মাঠ পেরিয়ে ম্যাকম্বারের গোলাঘরে ঢুকে পিকআপটা বের করল লিলি। ঝাঁকুনি খেতে খেতে গিয়ে পথে উঠল গাড়িটা। ছুটল শহরের দিকে।
গোলাঘরের দিকে এগোল কিশোর। দরজায় বেরিয়ে এল মুসা আর রবিন।
গেল কই? জিজ্ঞেস করল মুসা।
জানি না, কিশোর জবাব দিল। খুব রেগেছে। অবশেষে করতে চলেছে কিছু একটা।
শুধু ও-ই না, রবিন বলল। মিনিট দশেক আগে ম্যাকম্বারও খুব। রেগেমেগে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। ওর স্ত্রী পেছন থেকে ডাকছিল। গুহামানবের পেছনে আর টাকা নষ্ট না করতে বলল। শুনলই না যেন ম্যাকম্বার। শহরের দিকে চলে গেল।
মুক্তিপণ। এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল কিশোর, মুক্তিপণের টাকা দিতে গেছে। ঘটনা ঘটতে আরম্ভ করেছে ভালমতই।
ষোলো
চলো, যাই। দেখি, কি করে সামলায় ম্যাকম্বার। বলেই রওনা হলো কিশোর।
কিভাবে করবে? পেছন থেকে বলল মুসা। গাড়ি তো নিল না!
গেলেই দেখব।
মেইন রোড ধরে হেঁটে কাফেটা প্রায় পেরিয়ে যাচ্ছিল ছেলেরা, এই সময় দরজায় বেরোল ম্যাকম্বার। তার সঙ্গে রয়েছে কাফের মালিক, মিস্টার মরিসন। পেছনে আরও দু-জন বেরোল। একজনকে চেনে কিশোর, এখানকার ওষুধের দোকানের মালিক।
দ্রুতপায়ে ব্যাংকের দিকে হাঁটতে লাগল চারজনে। মাঝপথে তাদের সঙ্গে মিলিত হলো মোটেলের মালিক।
যা আন্দাজ করেছিলাম, নিচু কণ্ঠে বলল কিশোর। শহরের সব ব্যবসায়ী একজোট হয়ে গুহামানবের পেছনে টাকা ঢেলেছে। মুক্তিপণের টাকাও সবাই ভাগাভাগি করে দেবে।
পার্কের একটা বেঞ্চে বসে ব্যাংকের ওপর চোখ রাখল কিশোর। জানালার ভেতর দিয়ে দেখা গেল, তাড়াহুড়ো করে ডেস্ক থেকে উঠে আসছে ব্যাংকের ম্যানেজার। পাঁচজনের সঙ্গেই হাত মেলাল। তারপর ওদেরকে নিয়ে গেল পেছন দিকের একটা কামরায়।
এবার কি করব? জিজ্ঞেস করল রবিন।
অপেক্ষা, জবাব দিল কিশোর। বেশিক্ষণ বসে থাকতে হবে না।
পাঁচ মিনিট পর, গির্জার ঘড়িতে যখন দশটার ঘণ্টা বাজছে, ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এল ম্যাকম্বার। হাতে ক্যানভাসের তৈরি একটা টাকা রাখার বটুয়া। সঙ্গে বেরোল কাফের মালিক।
দ্রুতপায়ে হেঁটে গেল দু-জনে কাফের পাশের পার্কিং লটে। একটা ফোক্সওয়াগেনে চড়ে চলে গেল।
এবারও বেশিক্ষণ লাগবে না, বলল কিশোর।
ব্যাংকের দরজায় দেখা দিল আরও দু-জন, ম্যাকম্বারের সঙ্গে যারা ঢুকেছিল। তাদের পেছনে বেরোল ম্যানেজার। সবাই উদ্বিগ্ন। আস্তে
আস্তে হেঁটে গিয়ে কাফের কাউন্টারের উল্টোদিকের বুথে বসল। বসেই আছে ছেলেরা।
গির্জার, ঘড়িতে সোয়া দশটা বাজল, সাড়ে দশটা। ফিরে এসে পার্কিং লটে ঢুকল ফোক্সওয়াগেন। গাড়ি থেকে নামল ম্যাকম্বার আর তার সঙ্গী। ম্যাকম্বারের হাতে বটুয়াটা নেই। ক্লান্তপায়ে হেঁটে গিয়ে কাফেতে ঢুকল দু-জনে।
যাব নাকি? বলতে বলতে উঠে দাঁড়াল কিশোর। পার্ক থেকে বেরিয়ে পথ পেরোল। রবিন আর মুসা চলল তার পেছনে।
বুথের মানুষগুলো ছাড়া আর কেউ নেই কাফেতে, শুধু একজন। ওয়েইট্রেস পাত্রে চিনি ঢালছে। ছেলেদের দিকে একবার চেয়েই চোখ ফিরিয়ে নিল ম্যাকম্বার।
বড়দের কাছ থেকে খানিক দূরে বসল ছেলেরা।
ম্যাকম্বার আরেকবার এদিকে তাকাতেই আন্তরিকতার ভঙ্গিতে হাসল কিশোর। জিজ্ঞেস করল, চোরের ফোন আসবে?
ঝুলে পড়ল ম্যাকম্বারের নিচের চোয়াল, বন্ধ হলো আবার।
টাকা দিয়ে দিয়েছেন, না? আবার জিজ্ঞেস করল কিশোর।
লাফ দিয়ে টুল থেকে নেমে এসে কিশোরের শার্টের কলার চেপে ধরল ম্যাকম্বার। তুমি কি করে জানলে?…চোরের সঙ্গী নাকি? লক্ষ করেছি, সারাক্ষণ চোখ রাখো আমার ওপর। কেন?
কলার ছাড়ানোর চেষ্টা করল না কিশোর। শান্তকণ্ঠে বলল,, চোরের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
অ্যাই, কিং, কি করছ? বাধা দিল কাফের মালিক।
রাগে গোঁ গোঁ করে উঠল ম্যাকম্বার, কিন্তু কলার ছেড়ে দিল।
অপরাধ নিয়ে কারবার আমার আর আমার বন্ধুদের হবি, নাটকের সংলাপ বলছে যেন কিশোর। তবে আমরা নিজেরা অপরাধ করি না, অপরাধীকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করি। রহস্যের সমাধান করি।