হাতের প্যাকেটগুলো রান্নাঘরের টেবিলে নামিয়ে রাখল মুসা।
সাইট্রাস গ্রোভে থাকো তুমি? জিজ্ঞেস করল মহিলা। জবাবের অপেক্ষা না করেই বলল, গতকাল ওই কাণ্ডটা যখন ঘটল, পার্কে সবাই ঘুমাল, তখন কোথায় ছিলে। আমি শিওর, পানিতে কোন ঘাপলা ছিল। পানি পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল।
করেছে তো। ল্যাবরেটরিতে নিয়ে গিয়ে। কিছু পায়নি।
মাথা নাড়ল মহিলা। যে-ই করেছে, জঘন্য কাজ করেছে। কাল বিলির ওপর খুব রাগ লাগছিল। অসুখের আর সময় পেল না। সারাটা সকাল শুয়ে রইল বিছানায়। এমনিতে অসুখ খুব একটা হয় না তার। কাল সাইট্রাস গ্রোভে গিয়ে দেখে আসতে পারলে তার মুখ থেকেই সব শুনতে পারতাম। কঙ্কালটা দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে আমারও ছিল, ভিড়ের কথা শুনেই যাইনি। গাড়ি পার্ক করারই নাকি জায়গা ছিল না।
না গিয়ে ভালই করেছেন। সাংঘাতিক ভিড় হয়েছিল। ঠিক আছে, যাই এখন, দরজার দিকে পা বাড়াল মুসা।
বিলি এলে কিছু বলব? কি নাম তোমার?
না, কিছু বলার দরকার নেই। আমার নাম মুসা।
আচ্ছা।
বাস ধরে সাইট্রাস গ্রোভে ফিরে এল মুসা।
গোলাবাড়ির পেছনে বসে বসে তখন ভাবছে কিশোর। মুসার মুখে সব শুনে বলল, সত্যি তাহলে কাল অসুস্থ ছিল বিল। আমার তো সন্দেহ হচ্ছিল, চুরিতে সে-ও জড়িত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শক্ত অ্যালিবাই রয়েছে তার।
ঘাসের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল মুসা।
একইভাবে বসে নিচের ঠোঁটে চিমটি কেটে চলল কিশোর।
বিকেল চারটেয় ফিরে এসে দু-জনকেই ওই অবস্থায় পেল রবিন।
খবর ভাল? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ডক্টর ফিল ডিকসনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন সেদিন ডক্টর ক্লডিয়াস, জানাল রবিন। হারবারভিউ লেনে থাকেন ডক্টর ডিকসন। অ্যানাসথেটিস্ট। সান্তা মনিকার সেইন্ট ব্রেনড্যান হাসপাতালে চাকরি করেন। তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করলাম, ডক্টর ক্লডিয়াস কি কোন ব্রিফকেস ফেলে গেছেন? মার্থা নাড়লেন। বললেন, সেদিন সারা দিন অপেক্ষা করেছেন ডক্টর ক্লডিয়াসের জন্যে। পরে অবশ্য তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছেন।
অ্যানাসথেটিস্ট? ডক্টর ক্লডিয়াসের বন্ধু ছিলেন?
তাই তো বললেন। ডক্টর ক্লডিয়াস সেদিন কেন দেখা করতে চেয়েছিলেন, বলতে পারলেন না। কথায় কথায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এমন শক্তিশালী কোন অ্যানাসথেটিক আছে কিনা, যেটা নিমেষে কয়েকশো লোককে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারে?
কি বললেন? আগ্রহে সামনে ঝুঁকল কিশোর।
নেই। গতকালকের কথা তিনি শুনেছেন।
হুম।
বাড়ির পেছনের দরজা খুলে বেরোল লিলি। ছেলেদের দিকে একবার মাথা নুইয়ে হনহন করে চলল গোলাঘরের দরজার দিকে।
পেছনে বেরোল ম্যাকম্বার। ডেকে জিজ্ঞেস করল, লিলি, কোথায়। যাচ্ছ?
আন্না ফিঙ্গার দাওয়াত দিয়েছে, তার সঙ্গে সাপার খেতে, না ফিরে জবাব দিল লিলি।
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো।
পিকআপটা বের করে নিয়ে চলে গেল লিলি।
সেদিকে তাকিয়ে রইল ম্যাকম্বার।
উঠে এল কিশোর। কাশি দিয়ে ম্যাকম্বারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, চোরের আর কোন খবর আছে?
চোখ পাকিয়ে জবাব দিল ম্যাকম্বার, থাকলেও তোমাকে বলতাম না। দুপদাপ পা ফেলে চলে গেল বাড়ির ভেতরে।
বিকেলের একটা অংশ কাফেতে বসে খেয়ে আর অ্যানাসথেটিকের ব্যাপারে আলোচনা করে কাটাল ছেলেরা। বাকি সময় কাটল শহরে ঘোরাঘুরি করে।
মাঝরাতের পর বাড়ি ফিরল লিলি। মাচায় শুয়ে ইঞ্জিনের শব্দ শুনল ছেলেরা। বাড়ির ভেতরে ম্যাকম্বারের কড়া গলা শোনা গেল-এতক্ষণ কোথায় কাটিয়ে এসেছে লিলি, জিজ্ঞেস করছে। দড়াম করে বন্ধ হলো। দরজা-জানালা, তারপর মেয়েকণ্ঠের কান্না আর ফোঁপানি।
লিলির সঙ্গে খুব দুর্ব্যবহার করে ওরা, বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল মুসা।
চলে যায় না কেন? বয়েস তো যথেষ্ট হয়েছে, রবিন বলল, অত ভীতু কেন?
এরপর আর তেমন কিছু ঘটল না। ঘুমিয়ে পড়ল ছেলেরা।
পরদিন, সোমবার, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠল ওরা। ম্যাকম্বারের বাড়িতে কেউ ওঠেনি, কোন নড়াচড়া নেই। কাফেতে নাস্তা সারল।
মেইন রোড ধরে হাঁটছে, এই সময় চোখে পড়ল পিকআপ নিয়ে পেট্রোল স্টেশনে ঢুকছে লিলি।
গতরাতে বান্ধবীকে নিয়ে নিশ্চয় হাওয়া খেতে বেরিয়েছিল ও, রবিন অনুমান করল। গতকাল টাংকি ভরেছে ম্যাকম্বার, দেখেছি। আজ সকালেই এত তেলের দরকার হলো…
টুং টুং করে ঘণ্টা বাজল দু-বার। পাম্প বন্ধ করে, ট্যাংক থেকে হোস বের করে, ট্যাংকের মুখে ক্যাপ লাগাল লিলি। টাকা গুনে দিল অ্যাটেনডেন্টের হাতে।
স্টার্ট নিয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেল পিকআপ।
দুই গ্যালনের কিছু বেশি, চলমান গাড়িটার দিকে চেয়ে আছে। কিশোর। তারমানে অন্তত চল্লিশ মাইল। সেন্টারডেল পর্যন্ত যাওয়া যাবে, তাই না?
হয়তো ওখানে কোন বান্ধবী-টান্ধবী থাকে, মুসা বলল। কিংবা হয়তো কাল রাতে বেশি ঘোরাঘুরি করে তেল খরচ করে ফেলেছিল। এখন চাচার ভয়ে আবার ভরে রেখেছে।
আচ্ছা, ওকে সন্দেহ করছি কেন? নিজেকেই প্রশ্ন করল যেন · কিশোর। আর করছিই যখন, সরাসরি জিজ্ঞেস করে ফেললেই পারি। দ্বিধা কিসের?
মিছে কথা বলবে, রবিন বলল। আগেও বলেছে।
বড় বেশি নিঃসঙ্গ। কে জানে, তেমন করে যদি জিজ্ঞেস করতে পারি, মনের ভার লাঘব করার জন্যেও সব বলে দিতে পারে। জিজ্ঞেস করতে অসুবিধে কি?
কিছু না। তবে তুমি একা যেয়ো। আমি থাকছি না সামনে। কথায় কথায় ভ্যাক ভ্যাক করে কেঁদে ফেলে। এত কান্না আমার সয় না। খুব খারাপ লাগে।