রুডলফের দিকে তাকালেন একবার হ্যারিসন, মাথা ঝাঁকালেন।
ক্লডিয়াসের ঘরের কোন কাগজ সরানো হয়নি। যেমন ছিল, তেমনি আছে। অন্তত আমরা ধরিনি।
দেখার জন্যে তিনজনেই চলল ডাক্তার ক্লডিয়াসের ল্যাবরেটরিতে।
কাগজপত্র আর নোটের অভাব নেই। অসংখ্য ফাইল। সুন্দর করে সাজানো-গোছানো, ডাক্তার হ্যারিসনের কাগজপত্রের মৃত এলোমলো নয়।
তিনটে ফাইলের ওপরের টাইটেল দৃষ্টি আকর্ষণ করল কিশোরের-রিঅ্যাকশন টাইমস, ম্যানুয়্যাল ডেকসটারিটি, আর কমুনিকেশন স্কিলস। কিছু নোটবুক আছে। ওগুলোর ওপরে লেখা রয়েছে কেমিকেল স্টিমুলেশন, এক্স-রে এক্সপোজার টাইমস, ইত্যাদি। কিছু কিছু লেখা পড়তে পারলেও মানে কিছুই বুঝল না কিশোর।
বোঝাতে হলে আরেকজন জিনেটিসিস্ট লাগবে, বললেন রুডলফ।
একমত হলো কিশোর। তবু, বোঝা যায় এমন কিছুও পাওয়া যেতে পারে। যার সঙ্গে যোগাযোগ আছে গুহামানব অন্তর্ধান রহস্যের।
পাতার পর পাতা উল্টে চলল তিনজনে। খালি খসখস শব্দ।
কিছুক্ষণ পর মুখ তুলল কিশোর। এপ্রিলের দশ তারিখের পর আর কোন গবেষণার নোট নেই।
হাতের খাতাটার শেষ পৃষ্ঠাটাও উল্টে দেখলেন হ্যারিসন। ঠিকই বলেছ। এটাতে শেষ লেখা রয়েছে পঁচিশে মার্চের নোট। ব্যস।
আরও অনেক খাতা, ফাইল, নোটবুক ঘাঁটল ওরা। এপ্রিল ১০-এর পরে আর কিছু পাওয়া গেল না।
কিন্তু এর পরেও তো কাজ করেছে, বললেন হ্যারিসন। রোজই করেছে। ওসব দিনের নোটগুলো কই?
অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকের কাগজের যা দশা হয়েছে, তা-ই হয়েছে, মন্তব্য করল কিশোর।
ওয়ার্কবেঞ্চের ওপর গাদা করে রাখা আছে অনেকগুলো ম্যাগাজিন। সবচেয়ে ওপরেরটা তুলে নিয়ে পাতা ওল্টাল কিশোর। ভেতরে একটা স্লিপ পাওয়া গেল। প্রোপার্টি অভ দ্য ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট লাইব্রেরি ছাপ মারা।
স্লিপটা যেখানে পাওয়া গেল সেই পৃষ্ঠা পড়ে বলল কিশোর, সোডিয়াম পেনটোগ্যাল মগজের ওপর কি ক্রিয়া করে তা-ই পড়ছিলেন ডাক্তার ক্লডিয়াস।
সোডিয়াম পেনটোথ্যাল একটা অ্যানাসথেটিক, বললেন রুডলফ। অনুভূতি নষ্ট করে। বেহুশ করে দেয়।
আরেকটা ম্যাগাজিন তুলে নিল কিশোর। জানাল অভ দি আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের একটা কপি। নাইট্রাস অক্সাইডের ওপর একটা লেখা ছেপেছে।
আরেকটা অ্যানাসথেটিক, বললেন হ্যারিসন! দাঁতের ডাক্তাররা। হরদম ব্যবহার করে। ওরা বলে একে লাফিং গ্যাস।
আরও ম্যাগাজিন আছে, তাতে আরও আরটিক্যাল। সব কটাতেই কোন না কোন অ্যানাসথেটিকের ওপর লেখা রয়েছে।
ঠিকই আছে, বললেন রুডলফ। শিম্পাঞ্জীর ওপর অপারেশন চালাত তো, অ্যানাসথেটিকের দরকার ছিল।
এবং গতকাল পুরো শহরকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, কাউকে উদ্দেশ্য করে বলল না কিশোর কথাটা। মনের ভাবনাটাই মুখ ফুটে বেরিয়ে গেছে।
অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলো। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে অ্যানাসথেটিকের কোন নমুনা পাওয়া গেল না। ইথার, সোডিয়াম পেনটোথ্যাল, এমনকি নোভাকেনও নেই।
সেন্টার থেকে বেরিয়ে এল কিশোর। লিলির কথা ভাবছে। নোটগুলো কি সেই গায়েব করেছে? যদি করে থাকে, কেন করেছে? পাতাগুলো কি নষ্ট করে ফেলেছে? আবার প্রশ্ন, কেন? কঙ্কাল চুরিতে তার কোন হাত আছে? আছে, এ কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না, এতটাই নিরীহ।
কিন্তু সত্যি কি এতটা নিরীহ?
পনেরো
দুপুর নাগাদ মুসার মনে হলো, অযথা সময় নষ্ট করছে। সাইট্রাস গ্রোভের চেয়ে বড় সেন্টারডেল শহর, অন্যরকম। দুটো সুপারমার্কেট আছে, চারটে পেট্রোল স্টেশন। ওষুধের দোকানের সামনে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়ল না মুসার। পড়ার কথাও নয়, কি খুঁজতে এসেছে তা-ই জানে না।
ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছে মুসা, এই সময় চোখে পড়ল ধূলিধূসরিত পুরানো গাড়িটা। শাঁ করে তার সামনে দিয়ে গিয়ে মোড় নিয়ে নামল আরেকটা শাখাপথে।
ড্রাইভিং সীটে বিল উইলিয়ামস।
সরু পথের দু-ধারে গাছের সারি। তার ভেতর দিয়ে এগিয়ে একটা পুরানো বাড়ির গাড়িবারান্দায় ঢুকল গাড়ি। দরজা খুলে নামল বিল, হাতে বাদামী কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট।
দাঁড়িয়ে আছে মুসা। মিনিট দুয়েক পর বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এল বিল।
গাড়িতে উঠে আবার এগিয়ে আসতে লাগল মুসা যেখানে আছে সেদিকে।
আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখল মুসা, যাতে বিল দেখতে না পায়। দেখল না বিল। চলে গেল সাইট্রাস গ্রোভের দিকে।
বাড়িটার দিকে এগোল মুসা। গাড়িবারান্দায় এসে দাঁড়াল। এখন কি করবে?
আরেকটা গাড়ি এসে থামল গাড়িবারান্দায়। দরজা খুলে নামল একজন মোটা, বয়স্কা মহিলা।
কিছু চাও? জিজ্ঞেস করল।
না, ম্যাম, দ্বিধা করছে মুসা। সন্তোষজনক একটা জবাব খুঁজছে মনে মনে। বিল উইলিয়ামসকে খুঁজছিলাম। সাইট্রাস গ্রোভে ফিরে গেলে একটা লিফট নিতাম আরকি। ওকে এখানে ঢুকতেও দেখলাম। কিন্তু আমি আসতে আসতে চলে গেল।
ডাকলেই পারতে। আজ আর আসবে না।
ঠিক আছে। দেখি, বাসেই চলে যাব। এতে
হ্যাঁ, তাই যাও। গাড়ির ট্রাঙ্ক খুলে জিনিসপত্র নামাতে শুরু করল মহিলা। মুদি দোকানে গিয়েছিল। তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে তাকে মাল নামাতে সাহায্য করল মুসা।
পাশে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল মুসা, আপনি কি মিসেস উইলিয়ামস?
বিলির মা মনে করেছ? না, আমি তার বাড়িওয়ালী। আমার এখানে একটা রুম ভাড়া নিয়ে থাকে সে।