ওঠো, ওঠো। রবিন আগেই উঠেছে।
বাইরের কলে হাতমুখ ধুয়ে নিল ওরা। ভীষণ ঠাণ্ডা। গায়ে কাঁপুনি তুলে দেয়।
কাফেতে এসে পেট ভরে নাস্তা খেল। তারপর তিনজন চলে গেল তিনদিকে।
সেন্টারের দরজায় এসে দাঁড়াল কিশোর। পাল্লা খোলা। ভেতর থেকে মিসেস গ্যারেটের কণ্ঠ কানে আসছে।
কসম খেয়ে বলতে পারি, জোরগলায় বলছে মহিলা, গতকাল ছিল না ওটা ওখানে। কত খোঁজা খুঁজেছি।
ভেতরে উঁকি দিল কিশোর। মিসেস গ্যারেটকে দেখা গেল। ধূসর একটা উইগ পরেছে আজ, কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল।
বললামই তো, পাবে, খোজো ভালমত, বলল আরেক মহিলা। একে আগে দেখেনি কিশোর। নীল ইউনিফর্ম পরেছে, তার ওপরে সাদা। অ্যাপ্রন। হাতে পালকের ঝাড়ন।
আমি বলছি, খুঁজেছি, রেগে গেল মিসেস গ্যারেট। এখানে
অন্তত দশবার খুঁজেছি। কাল ছিল না।
আর তর্ক না করে কাঁধ ঝাঁকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে ঝাড়ন হাতে চলে গেল দ্বিতীয় মহিলা।
ফিরে তাকিয়ে দরজায় কিশোরকে দেখল মিসেস গ্যারেট। লিলিকে খুঁজছ? নেই।
ডাক্তার হ্যারিসন আছেন?
আছে। মুখ হাউপ! গাল ফুলিয়ে দেখাল মহিলা। তার ঘরে।
মহিলাকে ধন্যবাদ দিয়ে সেখানে চলল কিশোর। ওয়ার্করুমের কাছাকাছি আসতেই কানে এল ডাক্তারের উত্তেজিত চিৎকার, ধমক। ধুড়ম-ধাড়ম করে কি যেন ফেলা হচ্ছে।
দরজায় দাঁড়িয়ে দ্বিধা করল কিশোর। টোকা দিল।
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। কী? চেঁচিয়ে উঠলেন হ্যারিসন। কি চাই?
ওকে ধমকাচ্ছ কেন? ভেতর থেকে বলল একটা শান্ত কণ্ঠ, ডাক্তার রুডলফ। আর্মচেয়ারে বসে আছেন।
আবার চিৎকার করার জন্যে মুখ খুলেও থেমে গেলেন হ্যারিসন, কিশোরকে অবাক করে দিয়ে হাসলেন। সরি। এসো, ভেতরে এসো।
ঘরে ঢুকল কিশোর।
সারা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বই, কাগজপত্র। টাইপরাইটার রাখার টেবিলটা কাত হয়ে পড়ে আছে। মেশিনটাও মেঝেতে।
কিশোরের দিকে চেয়ে হাসলেন ডাক্তার রুডলফ।
দেখে হাটো। পা রাখার তো আর জায়গা রাখেনি।
লজ্জিত হলেন হ্যারিসন। টেবিলটা সোজা করে তার ওপর তুলে রাখলেন মেশিনটা। খসে পড়ে গেল রোলারের ভাঙা একটা গোল মাথা। মেঝের ওপর দিয়ে গড়িয়ে চলে গেল।
দূর! সেদিকে চেয়ে আবার চেঁচিয়ে উঠলেন হ্যারিসন।
জিনিসপত্র নষ্ট করার ওস্তাদ ও, সহকর্মীকে দেখিয়ে বললেন রুডলফ।
করব না তো কী? প্রতিবাদ করলেন হ্যারিসন। কার মাথা ঠিক থাকে। এতসব গণ্ডগোল। তার ওপর ম্যাকম্বারের বাচ্চা দিয়েছে মেজাজ আরও খারাপ করে। বলে বেড়াচ্ছে, আমিই নাকি তোক দিয়ে তার কঙ্কাল চুরি করিয়েছি। যাতে লোকে অন্যরকম ভাবে, সেজন্যে নাকি মুক্তিপণের নোট পাঠিয়েছি। তারপর, আমার কঙ্কাল আমিই লুকিয়ে রেখে রটিয়েছি চুরি গেছে। শয়তান কোথাকার! কিশোরের দিকে তাকালেন। অন্যকে যে বলছে, শুধু তাইই না। আমাকে ফোন করেও বলে এ কথা। ব্যাটাকে খুন করব আমি।
ও বলে বলুক না, তোমার কি? বোঝানোর চেষ্টা করলেন। রুডলফ। কে বিশ্বাস করছে ওর কথা?
এখান থেকেও যে কঙ্কাল চুরি গেল, সাবধানে বলল কিশোর, অবাক লাগছে না আপনার?
অবাক! মাথাই খারাপ হয়ে গেছে আমার।
তারমানে, গুহামানবকে যে চুরি করেছে, এটাও সে-ই করেছে, এমনও তো হতে পারে।
ঝট করে চোখ তুললেন হ্যারিসন। তাই তো। একথা তো ভাবিনি। কিন্তু কে? আমার কঙ্কালটার কথা তো সেন্টারের বাইরের কেউ জানে না। মিসেস গ্যারেট আর ডাক্তার রুডলফ, এই তো।
কেন, লিলি জানে তো।
ও জানলেও কিছু হবে না। ভীতুর ডিম। হোমিনিড চুরি করার সাহস ওর হবে না। আরে তাই তো..এখন মনে পড়ছে। আমার ওপর চোখ রাখত মেয়েটা। হাঁ করে তাকিয়ে থাকত। আলমারি কিংবা টেবিলের আড়াল থেকে…অদ্ভুত! ভাবিনি তো আগে।
হেসে উঠলেন রুডলফ। ব্যঙ্গ করে বলল, ভেবেছে, সত্যিই পাগল হয়ে গেল কিনা লোটা, দেখি তো। নাহলে আর কি কারণ? পরক্ষণেই বদলে গেল কণ্ঠস্বর, দেখো, ওকে সন্দেহ করবে না বলে দিলাম। বাচ্চা মেয়ে। স্কুলের গন্ধও যায়নি গা থেকে। ও চুরি করবে না।
তাহলে কে করেছে? এমনভাবে বললেন হ্যারিসন, যেন রুডলফ জানেন।
তবে লিলির জানাশোনা আছে অনেকের সঙ্গে, বলল কিশোর। সেন্টারের বাইরেও লোকের সঙ্গে পরিচয় আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে।
চোখের পাতা সরু হয়ে এল হ্যারিসনের। তোমার এত আগ্রহ কেন?
আমি আর আমার দুই বন্ধু গোয়েন্দা, সহজ গলায় বলল কিশোর।
গোয়েন্দা? হাসলেন হ্যারিসন।
হ্যাঁ, পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার নাম লেখা কার্ড বের করে দিল কিশোর।
আই সী, পড়ে বললেন ডাক্তার। ভালই হলো। এখন আমার। সবচেয়ে বেশি দরকার গোয়েন্দার। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। লিলিকে সন্দেহ করছ তো? অহেতুক। চুরি করার সাহস ওর হবে না।
ডাক্তার ক্লডিয়াস পছন্দ করতেন ওকে, মনে করিয়ে দিল কিশোর। কঙ্কাল চুরি আর ডাক্তার ক্লডিয়াসের রকি বীচে যাওয়ার পেছনে কারও যোগাযোগ থাকতে পারে।
তা কি করে হয়? প্রতিবাদ করলেন ডাক্তার রুডলফ। সেটা তো তিনমাস আগের ঘটনা। গুহামানবের কঙ্কাল তখনও পাওয়াই যায়নি।
ডাক্তার ক্লডিয়াস রকি বীচে কেন গিয়েছিলেন, কিছু বলতে পারবেন?
না, জবাব দিলেন হ্যারিসন। চাপা স্বভাবের ছিল। কাউকে কিছু বলত না।
আমার মনে হয় লিলি জানে। কিন্তু সে-ও কম চাপা নয়। বলে না। আরেকটা ব্যাপার, ডাক্তার ক্লডিয়াসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকের মাঝখানের অনেকগুলো পাতা ছেঁড়া। এপ্রিলের শেষ আর মে-র শুরুর। ওগুলোতে নিশ্চয় কোন সূত্র ছিল।