বনের বাইরে বেরিয়ে এল ওরা।
ছেলেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, বিদায় নিয়ে সেন্টারের দিকে রওনা হলেন রেডম্যান।
কিছুক্ষণ স্তব্ধ নীরবতার পর মুসা বলল, আমি শিওর, এবারকার গ্যাসপার পুরস্কার ডাক্তার রেডম্যানই পাবেন।
আনমনে মাথা ঝাঁকাল শুধু কিশোর। খাওয়ার জন্যে কাফেতে চলল ওরা।
শহরের ভিড় অনেক কমে গেছে। কাফে প্রায় খালি। আরাম করে বসে খেতে খেতে আলোচনা চালাল ছেলেরা।
জটিল এক রহস্য, মুখ বাঁকিয়ে বলল মুসা। কি কাণ্ড রে, বাবা! সারা শহর একসাথে ঘুমিয়ে পড়া! ওদিকে গুহা থেকে গায়েব হয়ে গেল গুহামানব।
পায়ের ছাপের ছাঁচটা, কিশোর বলল, ডাক্তার হ্যারিসনকে দেখালে কেমন হয়?
কি হবে তাতে? প্রশ্ন রাখল রবিন। গুহামানব যে নয়, এটা তো আমরাই জানি।
তা জানি। তবে, কি থেকে কি বেরোয় কে জানে।
হ্যাঁ, চেষ্টা করতে দোষ নেই।
খাওয়া শেষ করে গোলাঘরে ফিরে এল ছেলেরা। ছাঁচটা নিয়ে চলল গ্যাসপার সেন্টারে।
ওয়ার্করুমেই পাওয়া গেল ডাক্তার হ্যারিসনকে। কাগজ আর বইপত্র বোঝাই ডেস্কের সামনে বসে আছেন। ছেলেদের দেখে মুখ তুলে তাকালেন। ওদের ভয় ছিল, দেখেই ফেটে পড়বেন। সেসব কিছু করলেন না। হাতের বইটা বন্ধ করে রেখে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার?
কিছু পরামর্শ চাই, স্যার, খুব বিনীতভাবে বলল কিশোর, কিংবা বলতে পারেন, কিছু তথ্য। রাতে মিস্টার ম্যাকম্বারের গোলাঘরের মাচায় থাকি আমরা। গতরাতে একটা কাণ্ড ঘটেছে, সেখানে থাকায় শুনতে পেয়েছি।
জিপসি যে গুহামানব দেখেছে, সেই গল্প বলল কিশোর। শেষে পায়ের প্রতিকৃতিটা বের করে দিল।
একনজর দেখেই ওটা টেবিলে রেখে হাসলেন ডাক্তার। প্রাগৈতিহাসিক মানুষের ছাপ পেয়েছ ভেবে খুশি হলে নিরাশ হতে হবে। বেশিদিন খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের পাতা ছড়িয়ে যায়, আর এটাতে ছড়ানো তো দূরের কথা, একটা আঙুলই অস্পষ্ট। তারমানে খুব। টাইট জুতো পায়ে দেয়।
কিন্তু জিপসি বলল একজন গুহামানবকে দেখেছে, রবিন বলল। লম্বা লম্বা চুল। পরনে পশুর ছাল।
শব্দ করে হাসলেন এবার হ্যারিসন। গুহামানবেরা যে পশুর ছাল পরতই, এটা কি শিওর? জানো? জিপসি কি দেখেছে কে জানে, তবে গুহামানব হতেই পারে না। পায়ের ছাপই সেটার প্রমাণ। এটা কোন হোমিনিডের পায়ের ছাপ নয়। অনেক বড়।
বড়? অবাক হলো মুসা। কিন্তু মাত্র নয় ইঞ্চি।
তারমানে ওই পায়ের মালিকের উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন-চার ইঞ্চি। গুহায় যে কঙ্কালটা ছিল, তার চেয়ে অনেক বড়।…দাঁড়াও, দেখাচ্ছি। আফ্রিকায় একটা কঙ্কাল পেয়েছি আমি। হোমিনিড়। প্রায় বিশ লাখ বছর আগের। এখানে যেটা পাওয়া গেছে, তার চেয়ে কিছু ছোট। তবু ধারণা করতে পারবে।
একটা বড় কেবিনেটের দরজা খুললেন ডাক্তার।
ভেতরে তাকিয়েই স্থির হয়ে গেলেন। নেই! ফিসফিসিয়ে বললেন কোনমতে। তারপর চেঁচিয়ে উঠলেন। নেই! নেই ওটা! চুরি করে নিয়ে গেছে!
চোদ্দ
সেই বিকেলে ম্যাকম্বারকে একহাত নিল কিশোর।
ভাড়া চাইতে এলে বলল, ওরা চলে যাচ্ছে। লোকের ভিড় নেই। বাইরেই ক্যাম্প করে রাত কাটাবে।
একধাক্কায় মাচার ভাড়া অর্ধেক করে ফেলল ম্যাকম্বার। পাঁচ ডলার, রাতপিছু।
তাতেও রাজি হলো না কিশোর।
শেষে, তিন ডলারে রফা হলো। টাকা গুনে দিয়ে হাসতে হাসতে মাচায় এসে উঠল মুসা আর রবিনকে নিয়ে।
অন্ধকারে শুয়ে রইল ওরা কিছুক্ষণ, নীরবে। ভাবছে, দিনের ঘটনাগুলোর কথা।
নীরবতা ভাঙল মুসা, অবাক কাণ্ড! এই কঙ্কাল চোর এতদিন ছিল কোথায়?
আজ নিয়েছে, না আগেই নিয়েছে, কে জানে, রবিন বলল।
ডাক্তার তো বললেন, মাস তিনেক ধরে আর কেবিনেট খুলে দেখেননি। এর মাঝে যে কোন সময় চুরি হয়ে থাকতে পারে।
হ্যাঁ, সায় জানাল কিশোর। ডাক্তার ক্লডিয়াসের মৃত্যুর সময়ও হতে পারে।
গুঙিয়ে উঠল মুসা। আবার ক্লডিয়াস। তাঁর সঙ্গে কঙ্কাল চুরির কোন যোগ থাকতে পারে না। তিনি শুধু সেন্টারে ওটার কাছাকাছি বাস করতেন, ব্যস।
লিলির ব্যাপারটা ঠিক পরিষ্কার হচ্ছে না, বলল কিশোর। সে জানে, সেদিন হারবারভিউ লেনে কেন যাচ্ছিল, কিন্তু বলছে না।
হ্যাঁ, জানে, রবিন বলল। দেখলে না, কথা বলার সময় আরেকদিকে চেয়ে ছিল। তারমানে মিছে কথা বলছিল?
আর কেনই বা ডাক্তার ক্লডিয়াসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক থেকে পাতাগুলো নিখোঁজ হলো? কি লেখা হয়েছিল ওগুলোতে? তিনিই ছিঁড়েছেন, না অন্য কেউ?
অ্যাই, শোনো, উত্তেজনা ফুটল রবিনের কণ্ঠে। হারবারভিউ লেন আমি চিনি। কাল ওখানে গিয়ে খোঁজ নিলে কেমন হয়? আমি একাই নাহয় যাব। খুব ছোট লেন। হয়তো কোন তথ্য জানতে পারব। বের করে ফেলতে পারব, কার কাছে যাচ্ছিলেন ক্লডিয়াস।
ভালই হয়, কিশোর বলল। আমি সেন্টারে গিয়ে চেষ্টা করব তাঁর কাগজপত্র পড়ার।
তাহলে আমি যাব সেন্টারডেলে, উঠে বসল মুসা।
ওখানে কি? জানতে চাইল রবিন।
জানি না। তবে সাইট্রাস গ্রোভের পাশের শহর ওটা। আর ওখান থেকেই এসেছে মুক্তিপণের চিঠি। খোঁজ নিলে আমিও হয়তো কোন তথ্য জানতে পারব।
খুব ভাল হয়, বলল কিশোর।
গির্জার ঘড়িতে ঘণ্টা বাজল।
আর কোন কথা হলো না, ঘুমিয়ে পড়ল ওরা।
সবে যেন চোখ মুদেছে কিশোর, আর অমনি ঝাঁকাতে শুরু করল। তাকে মুসা।
কী? চোখ না খুলে জিজ্ঞেস করল সে।
আর কত ঘুমাবে? আটটা বাজে, মুসা বলল।