কিশোর অনেক পড়াশোনা করে, বললেন মেরিচাচী। যা পড়ে মনেও রাখে। আমিই তো ওই শহরটার নাম শুনিনি। প্রতিষ্ঠানটার নামও না। কি হয় ওখানে?
বৈজ্ঞানিক গবেষণা, কিশোর বলল। কৌতূহলী চোখে তার দিকে তাকাল মেয়েটা।
প্লাস্টিকের জিনিস বানানোর ফ্যাক্টরি ছিল ডেনি গ্যাসপারের, আবার বলল কিশোর। কোটি কোটি টাকা কামিয়েছিলেন ব্যবসা করে। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল তাঁর, কিন্তু কোনদিন হতে পারেনি। তাই, মৃত্যুর আগে উইল করে গেছেন, তার টাকা যেন বিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যবহার করা হয়, মানুষের উন্নতির জন্যে।
এসবও জানে! অবাক হয়ে মেরিচাচীর দিকে তাকাল মেয়েটা।
হাসলেন মেরিচাচী। বললাম না, অনেক পড়াশোনা ওর।
ভাল, খুব ভাল। ও হ্যাঁ, এখনও নামই তো বলা হয়নি আমার। লিলি অ্যালজেডো।..
শুনিনি।
শোনার কথাও না। আমি বিখ্যাত কেউ নই।
আমি মারিয়া পাশা। ও আমার ছেলে, কিশোর।
হেসে সামান্য মাথা ঝাঁকাল লিলি।
হ্যাঁ, গ্যাসপার রিসার্চ সেন্টারের কথা বলো। কিসের গবেষণা হয় ওখানে? জিজ্ঞেস করলেন মেরিচাচী।
জন্তু-জানোয়ারের জবাব দিল লিলি। সাদা ইঁদুর, শিম্পাঞ্জী, ঘোড়া এসব।
ঘোড়া? ল্যাবরেটরিতে ঘোড়া রাখে!
ল্যাবরেটরিতে, না, আস্তাবলে। ওখানে রেখেই পরীক্ষা চালানো হয়। আইসোটোপ ব্যবহার করে কি কি সব পরীক্ষা করতেন ডাক্তার ক্লডিয়াস। ক্রোমসম নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। অনেক চালাক বানিয়ে ফেলা হয়েছে একটা ঘোড়াকে। অঙ্ক করতে পারে।
হাঁ হয়ে গেলেন মেরিচাচী।
কিশোরও অবাক।
না না, তেমন জটিল অঙ্ক না, বলল লিলি। প্রথমে দুটো আপেল সামনে রেখে, পরে আরও তিনটা রাখলে, পাঁচবার মাটিতে পা ঠোকে ওটা। তার বেশি কিছু পারে না। ডাক্তার ক্লডিয়াস বলতেন, ঘোড়ার খুলির আকৃতি নাকি ভাল না, বুদ্ধিমান হওয়ার উপায় নেই। শিম্পাঞ্জীর খুলি অনেক ভাল, অনেক জটিল বিষয়ও তাই শিখে ফেলে।
জানোয়ারকে লেখাপড়া শিখিয়ে ওদেরকে দিয়ে কি করাতে চেয়েছিলেন ডাক্তার?
না, কিছু করাবেন না। আসলে, ঘোড়া কিংবা শিম্পাঞ্জীকে কথা বলানোর চেষ্টাও তিনি করছেন না। তিনি চাইছেন মানুষের উন্নতি করতে। কিন্তু সেটা করার জন্যে জানোয়ারের ওপরই তো আগে গবেষণা চালাতে হবে, তাই না? মানুষ কি আর হাসপাতালের গিনিপিগ হতে রাজি হবে?
কেঁপে উঠলেন মেরিচাচী।
মুখ নামাল লিলি। আপনারা অনেক করেছেন। আমি এখন সামলে নিতে পারব। ডাক্তার রুডলফ আর মিসেস গ্যারেট এসে পড়বেন…
ওঁরা না আসা পর্যন্ত আমরা থাকছি, শান্তকণ্ঠে বললেন মেরিচাচী।
লম্বা, কঙ্কালসার, ধূসর চুলওয়ালা একজন মানুষ ঢুকলেন। কফিশপে। ডাক্তার রুভলফ, পরিচয় করিয়ে দিল লিলি। তার সঙ্গে এসেছে একজন মোটাসোটা মহিলা, বয়েস ষাটের কাছে, চোখের পাতায় নকল পাপড়ি লাগিয়েছে, মাথায় আগুনরঙা নকল চুল। মিসেস গ্যারেট। লিলির হাত ধরে নিয়ে গেল মহিলা। ডাক্তার রুডলফ গেলেন। ডাক্তার ক্লডিয়াসকে পরীক্ষা করেছেন যে ডাক্তার তার খোঁজে।
আনমনে মাথা নাড়লেন মেরিচাচী। আজব মানুষ! জন্তু জানোয়ারের সিসটেমে গোলমাল করে দিয়ে আবার কেপে উঠলেন তিনি। কিশোর, ওই কঙ্কাল ডাক্তারটা কি কাজ করে বলে তোর মনে হয়?
কোন ধরনের গবেষণা।
ভ্রুকুটি করলেন মেরিচাচী। গবেষণা না ছাই! বদ্ধ উন্মাদ ওরা! শেষে না ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন বানিয়ে বসে! ভাল হবে না। ন্যাচারাল জিনিসকে বদলে দিতে গিয়ে ভাল করবে না, দেখিস, বিপদ ডেকে আনবে; সারা দুনিয়ার জন্যে!
দুই
ডাক্তার ক্লডিয়াসের মৃত্যু সংবাদ খবরের কাগজে প্রকাশিত হলো ফলাও করে। স্ট্রোক হয়ে মারা গেছেন বিজ্ঞানী। তাঁর জীবনের কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণীও ছাপা হলো। সব শেষে বলা হলো, জাহাজে করে, তার লাশ দেশে নিয়ে যাওয়া হবে কবর দেয়ার জন্যে।
হপ্তাখানেক বাদেই এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করে বসল গ্যাসপার সেন্টার। ঝাঁকে ঝাঁকে রিপোর্টার ছুটে গেল সাইট্রাস গ্রোভ শহরে। সেন্টারের একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ, ডাক্তার জর্জ হ্যারিসন নাকি ওই শহরের সীমান্তে পাহাড়ের গুহায় এক প্রাগৈতিহাসিক জীবের কঙ্কাল আবিষ্কার করেছেন।
দারুণ তো! খবর পড়ে বলে উঠল কিশোর।
পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে লোহালক্কড়ের জঞ্জালের নিচে চাপা পড়েছে। একটা পুরানো মোবাইল হোম ট্রেলার। তাতে তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টার।
মে মাসের এই বিকেলে হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা।
কি দারুণ? জিজ্ঞেস করল সহকারী গোয়েন্দা মুসা আমান।
সাইট্রাস গ্রোভের গুহামানব, খবরের কাগজটা নামিয়ে রেখে বলল কিশোর। আসলে মানুষ কিনা, বোঝা যায়নি এখনও। বয়েস কত, জানা যায়নি, তবে অনুমান করা হচ্ছে অনেক পুরানো। ডাক্তার হ্যারিসনের মত ওটা হোমিনিড। মানুষ, কিংবা মানুষের মত জীব। মানুষের আদিপুরুষ হবে হয়তো।
বুকশেলফের ওপরে রাখা ছোট টেলিভিশন সেটটা অন করল মুসা।
ছবি ফুটতেই পর্দা জুড়ে দেখা গেল একটা হাসিখুশি মুখ। ওর নাম। এলান ফিউজ। বলল, আজ টেলিভিশনে আমাদের অতিথি হয়ে এসেছেন ডাক্তার জর্জ হ্যারিসন। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় সবচেয়ে। পুরানো গুহামানবের কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছেন তিনি।
সরে গেল ক্যামেরার চোখ। মোটা একজন মানুষকে দেখা গেল, গোলগাল চেহারা, ছোট করে ছাটা চুল। পাশে বসে আছে ভুড়িওয়ালা, বেঁটে আরেকজন। গায়ে কাউবয় শার্ট, কোমরে চওড়া বেল্ট, তাতে কারুকাজ করা চকচকে বাস্। পায়ে হাইহীল বুট।