সাহস দেখাল রবিন। পা বাড়াল সিঁড়িতে ওঠার জন্যে। খপ করে তার হাত চেপে ধরল মুসা। যেয়ো না! ফিসফিস করে বলল। হয়তো ওটাই…
কোটা, খুলে বলার দরকার হলো না, বুঝল রবিন। গুহামানবের কথা বলছে মুসা। তার ধারণা, গুহা থেকে জ্যান্ত হয়ে উঠে চলে এসেছে। ওটা।
অসম্ভব! নিচু গলায় বলল কিশোর। এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে। উঠল উঁচু জায়গাটায়। হাত রাখল দরজার নবে।
শিউরে উঠল হঠাৎ। সে ঘোরানোর আগেই ঘুরতে শুরু করেছে দরজার নব। গুঙিয়ে উঠল মরচে ধরা কজা, খুলতে শুরু করল পাল্লা!
তেরো
আরে, তোমরা! প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন ডাক্তার রেডম্যান। খুব চমকে দিয়েছ যা হোক। এখানে কি করছ?
কাঁপছে তখনও কিশোর। জোর করে হাসল। এই একটু ঘুরে দেখতে এসেছি।
ঠিকই আন্দাজ করেছে রবিন। ওটা ভেস্টিরুমই। তারপরে গির্জার হল। সব শেষে আরেকটা ছোট ঘরের পরে বেরোনোর দরজা। খোলা। দেখা যাচ্ছে মঞ্চ থেকেই।
আসা উচিত হয়নি, বললেন ডাক্তার। এটা প্রাইভেট প্রোপার্টি। ওয়ারনারদের সম্পত্তি। পাহাড়ের ওদিকে বিরাট বাড়ি আছে ওদের। অনুমতি নিয়ে আমি এসেছি। বাইরের কারও আনাগোনা এখানে পছন্দ করে না ওরা। সিঁড়ির ওপর বসলেন তিনি। তবে, তোমাদের দোষ দেয়া যায় না। এ-বয়েসে আমিও ওরকম ছোঁক ছোঁক করতাম। পুরানো বাড়ির কত ভাঁড়ার আর চিলেকোঠায় যে চুরি করে ঢুকেছি।
জোরে হাঁচি দিলেন ডাক্তার। নাক টানলেন। পকেট থেকে রুমাল বের করে নাক-চোখ মুছে বললেন, ইস, হতচ্ছাড়া এই সর্দি আর গেল না। অ্যালার্জি আছে আমার। আর এটাই আমাকে ইমিউনিটির ব্যাপারে আগ্রহী করেছে। উঠে দাঁড়ালেন। যাওয়া দরকার। শরীরটা ভাল লাগছে না। শহরে যাবে, নাকি আরও ঘোরাঘুরি করবে? তবে করাটা উচিত হবে না। বুড়ো ওয়ারনার পছন্দ করে না এসব। একটা শটগান। আছে, দেখলেই ওটা নিয়ে তাড়া করে লোককে। বিশেষ করে তোমাদের বয়েসী ছেলেদের।
শটগান আরও একজনের আছে, হেসে বলল কিশোর। জনাব কিংসলে ম্যাকম্বারের।
চলো, ফিরেই যাই, মুসা বলল।
ডাক্তার রেডম্যানের সঙ্গে বেরিয়ে এল ওরা।
অ্যালার্জির ব্যাপারে আগ্রহ? বুনোপথ ধরে চলতে চলতে বলল কিশোর। কিন্তু আপনি তো ইমিউনোলজিস্ট। অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞদের
অ্যালির্জিস্ট বলে না? তাই তো জানি।
ঠিকই জানো। তবে একটার সঙ্গে আরেকটার যোগাযোগ আছে। ইমিউনিটিও একধরনের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন।
তাই নাকি? রবিন বলল।
মাথা ঝাঁকালেন ডাক্তার। আমাদের শরীর নিজেকে বাঁচানোর জন্যে নানারকম উপায় করে রেখেছে। প্রয়োজনে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। ওই অ্যান্টিবডি ক্ষতিকারক ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে দেয়। ধরো, তোমার হাম হলো। তখন তোমার শরীরের ভেতরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, ওই রোগের জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার জন্যে। রোগ সেরে যাওয়ার পরেও ওই অ্যান্টিবডির খানিকটা তোমার শরীরে থেকেই যাবে। ফলে সহজে আর হাম হবে না।
কিংবা ধরো, বিশেষ কোন কিছুতে তোমার অ্যালার্জি আছে। এই, কোনধরনের ফুলের রেণুতে। ওসবের সংস্পর্শে এলেই প্রতিক্রিয়া হবে। তোমার শরীরে, অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু হবে। যেহেতু কোন জীবাণু পাবে না নষ্ট করার মত, রিঅ্যাকশন করে বসবে তখন ওই অ্যান্টিবডি। একধরনের রাসায়নিক দ্রব্য বেরোতে থাকবে, যাকে বলে হিসটামিন। হয়তো তখন নাক ফুলে যাবে তোমার, চোখ দিয়ে পানি পড়বে।
শরীরের এই ইমিউন সিসটেমই অনেক রকম ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে রাখে আমাদের। তবে কখনও কখনও এই সিসটেম শারীরিক ক্ষমতার আওতার বাইরে চলে যায়। আর তখনই দেখা দেয় বিপদ। নানারকম মারাত্মক অসুখ দেখা দেয়।
যেমন, গেঁটে বাত। সর্দি-কাশি। আজকাল বলা হয়ে থাকে, ক্যানসার নাকি ইমিউন রিঅ্যাকশনের জন্যেই হয়ে থাকে। তবে সেটার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।…এমনকি, ইমিউনিটিই মানুষের মাঝে অপরাধ প্রবণতা জাগিয়ে তোলার জন্যে দায়ী।
অপরাধ প্রবণতা? প্রতিধ্বনি করল যেন মুসা।
অনেক সময় ভয়ের প্রতিক্রিয়া থেকে জন্ম নেয় অপরাধ, ব্যাখ্যা করলেন ডাক্তার। ধরো, কোন বিপজ্জনক জায়গায় বেড়ে উঠছে। একজন মানুষ। সারাক্ষণ ভীতির মাঝে কাটাতে হয় তাকে। ফলে শরীরে গড়ে ওঠে ভয়কে রোধ করার বিশেষ ব্যবস্থা। স্বভাব বদলে যায় মানুষটার। অনেকটা বুনো জানোয়ারের মত হয়ে ওঠে। নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে আক্রান্ত হওয়ার আগেই আক্রমণ করে বসে। গম্ভীর হয়ে গেছেন রেডম্যান। শরীরের এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদের জন্যে। খুবই দরকারী, আবার মস্ত বড় হুমকিও বটে। ল্যাবরেটরিতে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালাচ্ছি আমি। ওগুলোর ইমিউন সিসটেম নষ্ট করে দিয়ে ভরে রেখেছি জীবাণু-নিরোধক কাঁচের বাক্সে। দেখেছি, ইমিউন সিসটেম নিয়ে অপ্রতিরোধ্য অবস্থায় যেগুলো থাকে, সিসটেম ছাড়াগুলো তার চেয়ে বেশি বাঁচে। ইমিউন থেকে জন্ম নেয় যেসব রোগ, তেমন রোগ স্পর্শ করে না ওগুলোকে।
কল্পনা করো এখন, ইমিউন ছাড়া, কিংবা ভিন্ন ইমিউন সংযোজিত মানুষের কথা। কত মারাত্মক রোগ থেকে বেঁচে যাবে। যদি সফল হতে পারি! মাথা নাড়লেন ডাক্তার। আর কি সব ছাইপাঁশ নিয়ে আছে অন্য ডাক্তাররা। ক্লডিয়াসের কথাই ধরো। কি করতে চেয়েছে? বুদ্ধিমত্তায় পরিবর্তন ঘটাবে, আহা! তাতে কি কচুটা হবে? হ্যারিসনটা আছে পুরানো হাড়গোড় নিয়ে। কখন কোটার জন্ম হয়েছে জানলে কি পৃথিবীর রূপ বদলে যাবে? যত্তোসব, এনার্জি লস!