নাকমুখ কুঁচকে বিচিত্র শব্দ করল মহিলা।
বাইরে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
ড্রাইভওয়েতে পার্ক করা আছে একটা পুরানো দুই-দরজার সিডান গাড়ি। তাতে উঠছে বিল। ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে অপেক্ষা করল। ছেলেরা কাছে এলে বলল, বুড়ি হলে মেয়েমানুষগুলো একেকটা শয়তান হয়ে যায়, বাঁকা হাসল সে। ছেলেদেরকে লিফট দিতে চাইল।
থ্যাংকস, বলল কিশোর। ওদিকে যেতে চাই না। দেখল, পেছনের সীটে গাদাগাদি হয়ে আছে ম্যাগাজিন, কাদামাখা বুটজুতো, দোমড়ানো একটা কাগজের বাক্স, একটা স্কুবা মাস্ক, আর একটা ওয়েট স্যুট।
মাথা ঝাঁকিয়ে, গাড়ি নিয়ে চলে গেল বিল।
বড় বেশি আজেবাজে কথা বলে, তিক্ত কণ্ঠে বলল মুসা। একজন মহিলাকে শ্রদ্ধা করতে জানে না। ওর মা বুড়ো হয়নি?।
হুঁ! মুসার কথা কিশোরের কানে গেছে বলে মনে হলো না। খানিক আগে মিসেস গ্যারেটের সঙ্গে যা যা কথা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভাবছে।
ডাক্তার ক্লডিয়াস এতটা চাপা স্বভাবের না হলে ভাল হত, অবশেষে বলল সে। রকি বীচে কেন গিয়েছিলেন, মিসেস গ্যারেটকে একথা বললে, আমরা জানতে পারতাম। পেটে কথা থাকে না মহিলার। ওদিকে লিলি হয়েছে উল্টো। কথাই বের করা যায় না তার কাছ থেকে। আমি শিওর, লিলি অনেক মিথ্যে কথা বলেছে। কেন? কি গোপন করছে?
গুহামানব সম্পর্কে কিছু? রবিন বলল।
কে জানে?
গোলাঘরের কাছে পৌঁছে জেলডাকে পেছনের বারান্দায় দেখল কিশোর।
গোলাঘরের দিকে চলল ওরা।
ওখানে পৌঁছে জেলডাকে দেখা গেল তার বাড়ির পেছনের বারান্দায়।
ছেলেদের দেখেই চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, লিলিকে দেখেছ?
দেখেছি, জবাব দিল রবিন। সেন্টারে।
হুম। হতচ্ছাড়া জানোয়ারগুলোর কাছে। সুযোগ দিলে এই ঘরের মধ্যেই এনে তুলত ওগুলোকে। সাফ বলে দিয়েছি, ভাড়া দিতে না পারলে এখানে কারও জায়গা হবে না।
তা তো নিশ্চয়ই, মোলায়েম স্বরে বলল কিশোর। আচ্ছা, ম্যাডাম, স্পিঙ্কলার সিসটেমের পানি যে নিয়ে গেছে পরীক্ষা করতে, করেছে? কোন খবর এসেছে? কিছু পাওয়া গেছে?
পাওয়া যায়নি। ট্যাংকের পানিতেও না, স্পৃিঙ্কলারেও না! শেরিফ তো অবাক। বলল, সারা শহর নাকি পাইকারী সম্মোহনের শিকার হয়েছিল।
বারো
জেলা ম্যাকম্বার ভেতরে চলে যেতেই চেপে রাখা নিঃশ্বাসটা ছাড়ল কিশোর। পাইকারী সম্মোহনে আমার বিশ্বাস নেই। মরহুম বিজ্ঞানীও অস্থির করে তুলেছে আমাকে।
মরা মানুষেরা অস্থির করেই, মুসা বলল। সেজন্যেই তো ওদের। কাছে ঘেঁষতে নেই…
সে কথা বলছি না। আমি ভাবছি ছেঁড়া পাতাগুলোর কথা। নিশ্চয় মূল্যবান কিছু ছিল ওগুলোতে। ইস, ডাক্তার ক্লডিয়াসের অফিসের কাগজপত্র আর কয়েকটা ফাইল যদি পড়তে পারতাম।
পারবে না, রবিন নিরাশ করল। মূল্যবান কাগজপত্র আলমারিতে তালা দিয়ে রাখাই স্বাভাবিক।
হুঁ, বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কিশোর। তারপর উজ্জ্বল হলো চোখের তারা। বিল কিন্তু আজ পার্কে যায়নি, সকালে। ওই সময়ে শহরের আর কে কে অনুপস্থিত ছিল?
রবিনের কপালে ভাঁজ পড়ল। আমাদের চেনা সবাইই তো ছিল…শুধু, বিল আর জিপসি ফ্রেনি বাদে।
আচ্ছা, জিপসিকে বাদ দিচ্ছি কেন আমরা? মুসা বলল। ওর কথা ভাবছি না কেন? হয়তো বোকা সেজে থাকা তার একটা ভান।
না, মাথা নাড়ল রবিন। অনেক বছর ধরে আছে সে এখানে। ফন্দিবাজ হলে অনেক আগেই লোকের চোখে পড়ত।
আমারও তাই মনে হয়, কিশোর একমত হলো। গতরাতে কাউকে সত্যি সত্যি দেখেছে সে। তার প্রমাণও পেয়েছি আমরা। পায়ের ছাপ। লোকটা কোথায় গেল, দেখা হলো না কিন্তু।
মাঠের ওপারে বনের দিকে তাকাল মুসা। চলো না, গিয়ে দেখি এখন।
ছাপটার কাছে এল ওরা প্রথমে। তারপর সোজা হাঁটতে লাগল। বনের মধ্যে এক জায়গায় খোলা মাটি পাওয়া গেল, নরম। পায়ের ছাপও মিলল সেখানে।
সাবধানে এগিয়ে চলেছে তিন গোয়েন্দা। ভয়, যেন গাছের আড়ালে ঘাপটি মেরে আছে বিপদ।
অবশেষে পাতলা হয়ে এল বন। বনের কিনারে এসে দাঁড়াল ওরা। সামনে আবার তৃণভূমি আর বৈচিঝোঁপ। পুরানো একটা ভাঙা বিল্ডিং দেখা গেল। দেয়ালের লাল ইটের পাঁজর বেরিয়ে পড়েছে এখানে সেখানে, কোথাও কোথাও ধসে পড়েছে। লাল টালির ছাতের বেশির ভাগটাই ধসা। থামের মাথা বেরিয়ে আছে।
গির্জা ছিল, অনুমান করল রবিন।
জবাব দিল না কেউ।
বাড়িটার দিকে এগোল ওরা।
বিশাল কাঠের দরজার একটা পাল্লা কজা খুলে পড়ে গেছে, আরেকটা আছে জায়গামত। পড়ে থাকা পাল্লাটা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকল। ওরা।
গুহামানব গতরাতে এখানেই ঢুকেছিল? প্রশ্ন করল মুসা।
কি করে বলি, চিহ্ন খুঁজছে কিশোর। কোন চিহ্নটিহ্ন তো দেখছি না।
এক মুহূর্ত দ্বিধা করে গির্জার সামনের দিকে এগোল রবিন। একধারে খানিকটা উঁচু জায়গা, দুটো সিঁড়ি ডিঙিয়ে উঠতে হয়।
মঞ্চ, বলল রবিন। দেখো, ওই যে আরেকটা দরজা। ঘর আছে। ভেস্ট্রি হতে পারে, পাদ্রীরা তাদের আলখেল্লা বোধহয় ওখানেই রাখত।
দাঁড়িয়ে আছে ছেলেরা। মাত্র দুটো সিঁড়ি ডিঙানোর সাহস নেই যেন। নীরবে চেয়ে আছে দরজাটার দিকে। কি আছে ওপাশে?
একটা শব্দ শোনা গেল। হৃৎপিণ্ডের গতি দ্রুত হয়ে গেল ওদের। দরজার ওপাশে কে জানি নড়ছে। মড়মড়, খসখস আওয়াজ। ঝমঝম করে কি যেন পড়ল। তারপর আবার নীরবতা। এক পা পিছিয়ে গেল মুসা। বিপদ দেখলেই ঘুরে দেবে দৌড়।