ফিতে বের করে ছাঁচটা মাপল কিশোর। নয় ইঞ্চি।
মিউজিয়ামে চোর যে ছাপ রেখে গেছে, সেটা অনেক বড়, বলল সে। এটা ছোট।
ঢোক গিলল মুসা। তারমানে বলতে চাইছ, এটা গুহামানবের?
গুহামানব মরা, বলল কিশোর। অনেক বছর আগে মরেছে। আর মরা মানুষ কখনও উঠে হাঁটে না। এই ছাপটা আর যারই হোক, মরা মানুষের নয়।
এগারো
আস্তাবলে পাওয়া গেল লিলিকে, ঘোড়ার যত্ন নিচ্ছে। বিল উইলিয়ামও। আছে সেখানে, একটা স্টলে হেলান দিয়ে কাজ দেখছে।
চুরির খবর শুনলাম, তিন গোয়েন্দাকে দেখে বলল বিল। আমার কপাল খারাপ, এমন একটা অনুষ্ঠান মিস করেছি। সর্দিতে কাহিল হয়ে শুয়ে ছিলাম বাড়িতে।
তাই নাকি? বলল কিশোর। এখন কেমন?
অনেকটা ভাল। এসব অসুখ বেশিক্ষণ থাকে না।
পার্কে যা-তা কাণ্ড হয়ে গেল, মুসা বলল। পৌনে এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল সবাই।
ঘুম পেয়েছিল, কি আর করবে? রসিকতার সুরে বলল বিল। লিলির দিকে চেয়ে বলল, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলো। আমি যাই। নীরবে চলে গেল সে, রবারসোল জুতোয় শব্দ হলো না।
রানিং শূ পরেছে, নিচু গলায় বলল মুসা।
অনেকেই পরে, লিলি বলল।
ঘোড়ার গা ডলা শেষ করল সে। আস্তাবল থেকে বেরিয়ে ল্যাবরেটরির দিকে রওনা হলো।
সঙ্গে চলল তিন গোয়েন্দা।
ডাক্তার ক্লডিয়াসের ল্যাবরেটরিতে ঢুকল ওরা। লিলিকে দেখে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল শিম্পাঞ্জী দুটো, খাঁচার ভেতরে লাফালাফি শুরু করল।
আরে, থাম, থাম, হাসতে হাসতে বলল লিলি। খুলে দিল খাঁচার দরজা। দুই লাফে বেরিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল শিম্পাঞ্জী দুটো।
হয় ওদের মানুষ হওয়া উচিত ছিল, কিংবা আপনার শিম্পাঞ্জী, হেসে বলল মুসা।
খুব ভাল ওরা, তাই না? কি মিষ্টি। আমাকে খুব ভালবাসে। ডাক্তার ক্লডিয়াসকে আরও ভালবাসত।
না বাসলেই বরং অবাক হতাম, রবিন বলল।
কিশোর কিছুই বলছে না। মরহুম বিজ্ঞানীর ডেস্কের কাছে দাঁড়িয়ে টেবিলের জিনিসপত্র দেখছে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকটা চোখে পড়ল তার। খুলে পাতা ওল্টাতে লাগল। এক জায়গায় এসে আটকে গেল দৃষ্টি।
একটা পাতায় ছাপা রয়েছে, এপ্রিল ২৮। পরের পৃষ্ঠাটায় মে ১৯। মাঝখানের এতগুলো পাতা গায়েব।
বিশটা পৃষ্ঠা নেই, বিড়বিড় করল কিশোর। ইনটারেসটিং। আচ্ছা, মে-র শুরুতে কি মারা গিয়েছিলেন ডাক্তার ক্লডিয়াস?
আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে লিলি। ইয়েমে-রই কোন একদিন, জোর নেই কণ্ঠে।
পাতাগুলো ছিঁড়ল কেন?
আ-আমি জানি না, একটা শিম্পাঞ্জীকে বাহুতে নিয়ে দোলাচ্ছে লিলি, মানুষের বাচ্চাকে যেভাবে দোলায় মা।
রবিন আর মুসা চেয়ে আছে তার দিকে, সতর্ক, কৌতূহলী দৃষ্টি।
সেদিন রকি বীচে ডাক্তার ক্লডিয়াসের সঙ্গে কেন গিয়েছিলেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর। তার সঙ্গে এই ছেঁড়া পাতার কোন সম্পর্ক আছে?
না।…আমার মনে হয় না।
শিম্পাঞ্জীর কোন ব্যাপার?
হতে পারে। তার কাজকর্মের ব্যাপারে তেমন কিছু জানতাম না, শুধু জানোয়ারগুলোকে দেখাশোনা করতাম। সঙ্গে গিয়েছিলাম, কারণ কারণ তিনি ভাল বোধ করছিলেন না।
হারবারভিউ লেনের কোথায় যেতে চাইছিলেন? কে থাকে ওখানে?
লিলির চোখে অস্বস্তি বাড়ল। কেশে গলা পরিষ্কারের চেষ্টা করল অযথা। দু-গালে অশ্রুধারা।
আজ আমার ভাল্লাগছে না, অবশেষে বলল সে। কিছু মনে কোরো না। তোমরা আজ যাও।
ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে এল ছেলেরা। ওয়ার্করুমে দেখা হলো মিসেস গ্যারেটের সঙ্গে। ছাপার পোশাকের ওপরে দোমড়ানো একটা অ্যাপ্রন পরেছে। মাথায় উইগ-কালো চুলের মাঝে সাদা একটা ব্রেখা।
সব ঠিক আছে তো? হেসে জিজ্ঞেস করল মহিলা।
কিশোরের মনে হলো, বেশি কথা বলা এবং বেশি মিশুক যেহেতু, নিশ্চয় মূল্যবান তথ্য জানাতে পারবে মিসেস গ্যারেট। চেহারাটাকে বিষণ্ণ করে তুলল চোখের পলকে। লিলির মন খারাপ করে দিয়ে এসেছি। ডাক্তার ক্লডিয়াসের কথা তুলেছিলাম। কাঁদতে আরম্ভ করল।
আফসোসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল মহিলা। ডাক্তারকে খুব ভালবাসত। আমরা সবাই বাসতাম। ভাল লোক ছিল।
লস অ্যাঞ্জেলেসে সেদিন কেন গিয়েছিল, জানেন? মারা গেল যেদিন। কোন আত্মীয় থাকে ওখানে?
জানি না। কথা খুব কম বলত তো, কিছু জানার উপায় ছিল না। আমার মনে হয়, জানোয়ারগুলোর ব্যাপারে কোন কিছু। যা কাণ্ড করত না ওগুলোকে নিয়ে। সন্তানের মত ভালবাসত। কোনটা মরে গেলে দিনের পর দিন তো সন্তানের মত ভাল।কান কিছু। যা কাওছ।
কটা মরেছে?
অনেকগুলো। লাশগুলো কেটে-চিরে দেখত ডাক্তার। জ্যান্ত জানোয়ারের অপারেশনও করত। ওগুলো যখন ঘুমিয়ে থাকত, প্রায়ই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখত। কি যেন ভাবল মিসেস গ্যারেট। ওগুলো তখন ঘুমাতও কেন জানি খুব বেশি। এখন অনেক সজীব হয়েছে।
ঝনঝন করে কি যেন ভাঙল হলরুমে।
হায়, হায়, কি ভাঙল। দরজার কাছে ছুটে গেল মহিলা। আরে, বিলি। হাতে জোর নেই?
বেরিয়ে এল বিল উইলিয়ামস। এক হাতে ঝাড়, আরেক হাতে ভাঙা সাদা একটা ডিশ জাতীয় পাত্র। তেমন কিছু নষ্ট করিনি। খালিই ছিল।
খালি ছিল বলে দাম নেই নাকি? আরও হুঁশিয়ার হয়ে কাজ করবে।
ছেলেদের দিকে আলতো মাথা নুইয়ে হাঁটতে শুরু করল বিল।
মার্কেট থেকে ওগুলো কখন আনবে? পেছন থেকে চেঁচিয়ে। জিজ্ঞেস করল মিসেস গ্যারেট।
আমি এখন পারব না! চেঁচিয়েই জবাব দিল বিল। এত ক্যাট ক্যাট করে! চলে গেল দরজার বাইরে।