খুব হতাশ হয়ে ঘরে ফিরল ম্যাকম্বার দম্পতি।
গোলাঘরের মাচায় চড়ে জানালার ধারে বসল তিন গোয়েন্দা।
ভাবছি, কিশোর বলল, চাবি যে রান্নাঘরে থাকে, চোর সেটা কিভাবে জানল?
সে-ই জানে, বলল মুসা। তাছাড়া জানার দরকারই বা কি? লোকে রান্নাঘরেই চাবি রাখে বেশি। আর দরজাও যখন ভোলা রাখে। এখানকার লোকে…
সহজেই যে-কেউ ঢুকে নিয়ে যেতে পারে, এই তো? আরও একটা ব্যাপার বেশ অবাক লাগছে। গুহার মধ্যে জুতোর ছাপ।
ভুরু কোঁচকাল রবিন। তাতে অবাক হওয়ার কি আছে? টেনিশ শূ কিংবা রানিং পরেছিল চোর। তাতে কি?
গতরাতে গুহার ভেতরে কি কি ছিল মনে আছে? কিশোর বলল। ম্যাকম্বার যখন দেখাচ্ছিল আমাদেরকে?
মুসা আর রবিন দু-জনেই অবাক হলো।
হাড়ের আশপাশের মাটি মাড়ানো ছিল। চোখ বন্ধ করে দৃশ্যটা মনে করার চেষ্টা করছে যেন কিশোর। তারপর, রাতে দুঃস্বপ্ন দেখল জিপসি ফ্রেনি। বলল, গুহা থেকে বেরিয়ে গেছে গুহামানব। ম্যাকম্বার মিউজিয়ামের দরজা খুলল। গুহার ভেতরে কঙ্কালটাকে জায়গামতই দেখলাম। তখন কি পায়ের ছাপ ছিল?
ভ্রূকুটি করল দুই সহকারী গোয়েন্দা।
মুসা বলে উঠল, না না, ছিল না, ঠিক বলেছ। তারমানে…তারমানে, মুছে সমান করে ফেলা হয়েছিল।
আসছি। মাচা থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে গিয়ে ম্যাকম্বারের ঘরের সামনে দাঁড়াল কিশোর। দরজায় ধাক্কা দিল। জেলডা খুলল। পেছনে উঁকি দিল তার স্বামী। তাদের সঙ্গে কি যেন কথা হলো কিশোরের। আবার মাচায় ফিরে এল সে।
ম্যাকম্বার বলল, সে মোছেনি, জানাল কিশোর। জিপসিকে দিয়েও মোছায়নি।
তাহলে রাতে অন্য কিছু ঢুকে মুছে এসেছে, বলল মুসা। কিভাবে? দরজায় তালা ছিল। যদি-যদি না কঙ্কালটা…অসম্ভব!
তবে, তৃণভূমিতে একটা ছাপ রেখে গেছে, যে-ই হোক, কিশোর বলল। শহরে যাচ্ছি আমি। গতকাল আসার সময় একটা হবি শপ দেখেছি। কিছু জিনিস কিনে আনব। তোমরা এখানেই থাকো, চোখ রাখো।
আবার মই বেয়ে নেমে চলে গেল কিশোর।
ফিরে এল আধ ঘণ্টা পর। হাতে একটা প্যাকেট। প্ল্যাস্টার অভ প্যারিস, বলল সে। পায়ের ছাপের একটা ছাঁচ তৈরি করব।
গোলাঘরের ওয়ার্কবেঞ্চে বসে কাজ শুরু করল সে। ঘরেই পাওয়া গেল রঙের একটা খালি টিন আর কয়েক টুকরো বিভিন্ন মাপের কাঠ।
টিনে প্লাস্টার অভ প্যারিস ঢেলে তাতে পানি মিশাল কিশোর। ছোট একটা কাঠের দণ্ড দিয়ে ঘুঁটে ঘন কাইমত করল।
কি প্রমাণ করবে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
জানি না, জবাব দিল কিশোর। হয়তো কিছুই না। খালি পায়ে একজন লোক যে হেঁটে গিয়েছিল, আপাতত সেই প্রমাণ রাখব। পরে আর ছাপটা না-ও থাকতে পারে। নষ্ট হয়ে যেতে পারে, মুছে যেতে পারে, কত কিছুই হতে পারে।
ছাপের ছাঁচ তুলতে চলল ওরা।
ওটার পাশে বসে কাজ করে চলল কিশোর।
এত কষ্ট করে কি হবে বুঝতে পারছি না, দেখতে দেখতে বলল মুসা।
হ্যাঁ, কেউ তো আমাদের করতে বলেনি, বলল রবিন। মক্কেল নেই। কিশোর, তোমার কি মনে হয়? ম্যাকম্বার আমাদেরকে ভাড়া করবে?
ওর মত লোককে কি মক্কেল হিসেবে পেতে চায় তিন গোয়েন্দা? পাল্টা প্রশ্ন করল কিশোর।
না, তা অবশ্য চায় না, মুসা হাত নাড়ল। পাজি লোক। ওর বউটাও। ওই দুটোকে সহ্য করে কিভাবে লিলি, বুঝি না।
জোরে নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। হবি শপের মালিক মহিলা। লিলির মাকে চিনত। মিসেস অ্যালজেড্ডা নাকি খুব সুন্দরী ছিলেন। জেলড়া তাঁকে দেখতে পারত না। সেই সোধই নাকি নিচ্ছে এখন লিলির ওপর। ম্যাকম্বারও নাকি খুব বাজে ব্যবহার করে লিলির সঙ্গে, মহিলাই বলল। থাকাখাওয়ার টাকা পর্যন্ত নেয়। নিচ্ছে লিলির মা-বাবা মরার পর থেকেই।
বিস্মিত হলো রবিন। তা কি করে হয়? তখন তো বয়েস ছিল মাত্র আট। টাকা দিত কোত্থেকে, কিভাবে? ব্যাংকে টাকা রেখে গিয়েছিলেন। লিলির বাবা-মা?
হলিউডে একটা বাড়ি আছে ওদের। ওটা ম্যাকম্বারই ভাড়া দেয়, টাকাও সে-ই নেয়।
ও। কিন্তু হবি শপের মহিলার মুখ খোলালে কি করে? এত কথা জানলে।
সহজ। জানতে চাইল, আমরা কোথায় উঠেছি। ম্যাকম্বারের মাচার কথা শুনেই গেল রেগে। আমাকে আর প্রশ্ন করতে হলো না। নিজে নিজেই অনেক কিছু বলল। বলল, জিপসি ফ্রেনি লেখাপড়া জানে না। মহিলার সন্দেহ, কোন বেআইনী কাজ করে জিপসি। সেটা জানে ম্যাকম্বার। আর তাই সুযোগ পেয়ে বিনে পয়সায় খাঁটিয়ে নিচ্ছে। লোকটাকে।
তবে চিঠিটা জিপসি লেখেনি, এটুকু শিওর হওয়া গেল। লিখতেই তো নাকি জানে না।
কাউকে দিয়ে লিখিয়ে তো নিতে পারে। তবে মনে হয় না তা করেছে। এত চালাক না সে। আজ সকালে যা করল, সেটাও অভিনয়। মনে হয়নি। সত্যি ভয় পেয়েছিল। তাকে সন্দেহের খাতা থেকে বাদ দিচ্ছি।
তারমানে কেসটা নিচ্ছি আমরা? মুসার প্রশ্ন, আমাদের মক্কেল কে? লিলি?
মক্কেল কি থাকতেই হবে? মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আমাদের কাজ হলো রহস্যের কিনারা করা। অনেক রহস্য আছে এখানে। ফসিল চুরি গেল। স্পৃিঙ্কলার সিসটেমে ওষুধ ঢেলে সারা শহরকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হলো। কোন গোয়েন্দার আগ্রহ জাগাতে এ-ই কি য েই নয়?
রবিন হাসল। যথেষ্টর চেয়েও বেশি। পকেট থেকে নোটবুক আর কলম বের করে লিখতে শুরু করল। মুখে বলল, গুহামানব চুরি। পানিতে রহস্যময় ওষুধ। মুক্তিপণের টাকা চেয়ে চিঠি, লেখায় বানান ভুল। তবে সেটা ইচ্ছে করেও করে থাকতে পারে, বিশেষ কারও ওপর সন্দেহ ফেলার জন্যে। মুখ তুলল হঠাৎ। হ্যারিসন? কঙ্কালটা হয়তো তিনিই চুরি করেছেন। তারপর মুক্তিপণের টাকা চেয়ে নোট পাঠিয়েছেন। চুরির উদ্দেশ্য অন্যরকম বোঝানোর জন্যে।