দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইল ডেপুটি শেরিফ, বোধহয় ভাবল ছেলেটার নজর বড় কড়া, গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু চোখে পড়ে যেতে পারে। তাই হেসে সরে দাঁড়াল। অল রাইট, শার্লক হোমস। ভেতরে গিয়ে দেখার খুব ইচ্ছে? যাও, দেখে বলো আমাকে যা। যা বোঝে।
মিউজিয়ামের ভেতরে গিয়ে ঢুকল তিন গোয়েন্দা।
ভেতরের জিনিসপত্র যেমন ছিল, তেমনই আছে, নাড়াচাড়া বিশেষ হয়নি। তবে সব কিছুর ওপরই কালি আর পাউডারের আস্তর। ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্টদের কাজ। আঙুলের ছাপ খুঁজেছে।
সারা ঘরে একবার চোখ বুলিয়ে, আলোকিত গুহার ভেতরে এসে উঁকি দিল কিশোর। এখানেও সব কিছু আগের মতই আছে, শুধু কঙ্কালটা নেই। ওটা যেখানে ছিল সেখানকার মাটিতে গর্ত, দাগ, এলোমেলো আলগা মাটি ছড়িয়ে আছে। এখানেই এক জায়গায় একটিমাত্র পায়ের ছাপ চোখে পড়ল, বিশাল ছাপ।
রাবারসোল জুতো পরেছিল, আনমনে বলল কিশোর। ম্যাকম্বারের ছিল কাউবয় বুট, আর জিপসি ফ্রেনির পায়ে লেইসড-আপ জুতো, চামড়ার সোল। চোরের পায়ে ছিল স্বীকার জাতীয় কিছু, সোল আর গোড়ালিতে তারা তারা ছাপ।
মাথা ঝাঁকাল ডেপুটি। ঠিকই বলেছ। জুতোর ছাপের ছবি তুলে নেয়া হয়েছে। কাজে লাগতে পারে ভেবে।
পকেট থেকে ফিতে বের করে ছাপ মাপতে বসল কিশোর। বারো। ইঞ্চি। লম্বা লোক, মন্তব্য করল সে।
হাসি ফুটল ডেপুটির মুখে। বাহ, ভালই তো, কাজ দেখাচ্ছ। গোয়েন্দা হওয়ার ইচ্ছে?
হয়েই আছি, ব্যাখ্যা করার দরকার মনে করল না কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল। কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না। এত কষ্ট করে এত সব কাণ্ড করতে গেল কেন চোর? স্পৃিঙ্কলার সিসটেমে কেমিক্যাল ঢেলে দিয়ে ঘুম পাড়াল পুরো শহরকে…
ঠিকই বলেছ, কথার মাঝে বলল ডেপুটি, মনে হয় কেমিক্যালই ঢেলেছে। পানির স্যাম্পল নিয়ে ল্যাবরেটরি টেস্টের জন্যে পাঠানো হয়েছে। পানির ট্যাংকও পরীক্ষা করা হবে। ওখান থেকেই স্পিঙ্কলারে পানি যায়।
সাইন্স ফিকশন সিনেমার মত লাগছে, বলল কিশোর। পুরো শহরকে ঘুম পাড়িয়ে বিকট জন্তুর রূপ ধরে গিয়ে চড়াও হয়েছে জিপসি ফ্রেনির ওপর। তাকেও ঘুম পাড়িয়েছে কোনভাবে। কিংবা হয়তো পার্কের রাসায়নিক বাস্পই বাতাসে ভেসে গিয়ে লেগেছে তার নাকে। যেভাবেই হোক, বেহুশ হয়েছে। চোর তারপর আরামসে মিউজিয়ামে ঢুকে কঙ্কালটা তুলে নিয়ে চলে গেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন? সাধারণ লোকের কাছে ওই হাড়ের কোন মূল্য নেই। দর্শকদের কাছ থেকে পয়সা আদায় করা যায়, তবে যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেভাবে থাকলে। ওই হাড়ের ওপর দু-জনের আগ্রহ বেশি। একজন হ্যারিসন, অন্যজন ম্যাকম্বার। কিন্তু চুরিটা যখন হয়, তখন দু-জনেই পার্কে বেহুশ হয়ে পড়ে ছিল।
সোনা চুরি যায়, অলঙ্কার চুরি যায়, মুখ বাঁকাল ডেপুটি, কিন্তু হাড়ি চুরি যেতে দেখলাম এই প্রথম।
কিশোর, রবিন বলল, কি মনে হয়? চোরকে ধরতে পারবে?
চুপ করে রইল কিশোর। ভাবছে।
রবিনের প্রশ্নের জবাব দিল ডেপুটি, অনেক চুরিরই সমাধান হয় না। রহস্য রহস্যই থেকে যায়। এটাও তেমনই কিছু হবে। পুরানো কয়েকটা হাড়ের পেছনে সময় নষ্ট করবে কে?…চলো, বেরোই। আর কিছু দেখার নেই।
ডেপুটির পিছু পিছু বেরিয়ে এল ছেলেরা।
গোলাঘরের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাকম্বার। কাছেই রয়েছে জেলা আর লিলি। লিলির হাতে চিঠিপত্রের বাণ্ডিল আর একটা ম্যাগাজিন। এইমাত্র ডাকে এসেছে।
ম্যাকম্বারের হাতে একটা চিঠি। চেহারা থমথমে।
ডেপুটি আর ছেলেরা কাছে যেতেই নড়ে উঠল ম্যাকম্বার। চিঠিটা ডেপুটির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, পড়ন! পড়ে দেখুন! রাগে খসখসে হয়ে গেছে কণ্ঠস্বর।
চিঠিটা হাতে নিল ডেপুটি।
দেখার জন্যে কাছে ঘেঁষে এল ছেলেরা।
কাগজটায় উজ্জ্বল রঙে বড় বড় অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা:
আমার কাছে আছে গুহামানব।
ফেরত চাইলে ১০,০০০ ডলার লাগবে।
টাকা না দিলে এমন জায়গায় লুকাব,
কোনদিনই আর খুঁজে পাবে না।
পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় থাকো।
চারটে শব্দের বানান ভুল, বিড়বিড় করল কিশোর। তবে একটা ব্যাপার শিওর হওয়া গেল, টাকার জন্যে চুরি করেছে ওই হাড়।
দশ
দশ হাজার! চেঁচিয়ে উঠল লিলি।
নাক দিয়ে বিচিত্র শব্দ করল ম্যাকম্বার। হারামজাদাকে ধরতে পারলে… দাঁতে দাঁত চাপল সে।
এ ম্যাকম্বারের কাছ থেকে খামটা নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখল ডেপুটি। ডাকঘরের ছাপ দেখল.। নোটটা পড়ল আরেকবার।
ব্যাটা ইংরেজিতে কাঁচা, বলল সে। বানান ভুল দেখছ না। তবে ভেবেচিন্তে কাজ করে। চিঠি পোস্ট করে দিয়েছে গতকালই, সেন্টারডেল থেকে। চিঠিটা পকেটে রাখল।মিস্টার ম্যাকম্বার, মিউজিয়ামের চাবি কার কাছে?
পকেট থেকে চাবির গোছা বের করে দিল ম্যাকম্বার। আরেক গোছা আছে রান্নাঘরের বোর্ডে ঝোলানো। লিলি, দেখ তো গিয়ে আছে কিনা।
বাড়ির দিকে চলে গেল লিলি। খানিক পরেই উত্তেজিতভাবে ফিরে এসে জানাল, নেই। চাবির রিঙে ট্যাগ লাগানো থাকে তো। চোরের বুঝতে অসুবিধে হয়নি…
কোনটা কোন তালার চাবি, লিলির বক্তব্য শেষ করে দিল। ডেপুটি। দরজা খোলা রেখেছিলেন, তাই না, মিস্টার ম্যাকম্বার? বিড়বিড় করে নিজেকেই যেন বোঝাল, রাখবেনই তো। এ শহরের সবাই রাখে। ঘরে ঢুকে চাবি বের করে আনতে কোন অসুবিধে হয়নি চোরের।