চোখ বড় বড় হয়ে গেল রবিনের। আপনার কি ধারণা ফসিলটার বয়েস চল্লিশ হাজারের বেশি?
হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বয়েস কত, সেটা বোঝার আরও উপায় আছে, কার্বন ফরটিন টেস্ট ছাড়াও। কিন্তু পরীক্ষার জন্যে ল্যাবরেটরিতে তো আনতে হবে…।
ওই যে এসে গেছে আমাদের নাস্তা, ওয়েইট্রেসকে দেখে বলে উঠলেন রেডম্যান। যাক, বাবা, পাওয়া গেল।
কিছুক্ষণ নীরবতা। চুপচাপ খাচ্ছে সবাই।
আচ্ছা, হঠাৎ জিজ্ঞেস করল কিশোর, ডাক্তার ক্লডিয়াস কি নিয়ে গবেষণা করতেন?
প্রয়াত বিজ্ঞানীর কথা উঠতেই গম্ভীর হয়ে গেলেন ডাক্তার রুডলফ। ব্রিলিয়ান্ট লোক ছিল।–মস্ত ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের।
হয়তো হয়েছে, কথার পিঠে বললেন রেডম্যান। কিন্তু জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিঙের বিপদও আছে। এটম নিয়ে গবেষণা করে শেষে যেমন এটম বোমা বানিয়ে ফেলা হলো। জিন নিয়ে গবেষণা চালালে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি হয়ে যাওয়ার ভয় আছে।
ডাক্তার ক্লডিয়াস নাকি মানুষের দৈহিক উন্নতির চেষ্টা করছিলেন? কিশোর বলল। লিলি বলেছে আমাদের ঘোড়া আর শিম্পাঞ্জীকে নাকি ইতিমধ্যেই অনেক বুদ্ধিমান বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
কিছুটা, বললেন রুডলফ।
এসব গবেষণায় শেষকালে ক্ষতিই হয় বেশি, রেডম্যান বললেন। প্রকৃতি যাকে যেভাবে তৈরি করেছে, সেভাবেই থাকতে দেয়া উচিত। নইলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা।
তা ঠিক। কিন্তু ক্লডিয়াসের উন্নতির কথা একবার ভেবে দেখো। ক্ষতি না করে সত্যি সত্যি যদি প্রাণিদেহের উন্নতি করা যায়, কি সাংঘাতিক ব্যাপার হবে! ছেলেদের দিকে ফিরে বললেন রুডলফ,
বেঁচে থাকলে গ্যাসপার পুরস্কার পেয়ে যেত ক্লডিয়াস। এক বছর পর পর দেয়া হয় এই পুরস্কার। দশ লাখ ডলার।
সেটা তো গেল, মুসা মুখ খুলল এতক্ষণে। এরপর কে পাবেন?
ত্যাগ করলেন রুডলফ। কি জানি। পাকস্থলীর আলসার কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সেটা নিয়ে গবেষণা করছে রেডম্যান। সফল হলে সে পাবে। কিংবা মানুষের অরিজিন আবিষ্কার করতে পারলে ডাক্তার হ্যারিসন পাবে…
বাঁচবে অনেকদিন, বাধা দিয়ে বললেন রেডম্যান। ওই যে, আসছে।
জানালার দিকে ঘুরে তাকাল অন্যেরা। সোজা কাফের দিকে আসছেন হ্যারিসন।
ভেতরে ঢুকতেই হাত নেড়ে তাকে ডাকলেন রুডলফ।
কিশোরের পাশে একটা খালি চেয়ার টেনে এনে বসলেন। হ্যারিসন। হউফ করে মুখ দিয়ে বাতাস ছেড়ে বললেন, অনেক চেষ্টা করলাম। গভর্নরকে পাওয়া গেল বটে, কথা বলতে পারলেন না। ব্যস্ত। লাঞ্চের পর আবার রিঙ করতে বলেছেন।
গভর্নর এসে কি করবে? গুহা থেকে তোমাকে কঙ্কালটা বের করে এনে দেবে? ঝাঁঝাল কণ্ঠে বললেন রুডলফ।
এই তো, যাচ্ছে লেগে! ঝগড়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি বললেন রেডম্যান, এই, ইউজেন, কি মনে হয় তোমার? কাজ হবে?
কেন হবে না? ভুরু নাচালেন রুডলফ। রাস্তা কিংবা স্কুল বানানোর দরকার হলে তখন তো লোকের জায়গা নিয়ে নেয় সরকার। ফসিলটাকে বাঁচানোর জন্যে কেন পারবে না? গভর্নরকে বলব, এলাকাটাকে রিজার্ভ এরিয়া বলে ঘোষণা করতে। আশপাশে নিশ্চয় আরও ফসিল আছে। ওগুলো নষ্ট হতে দেয়া যায় না… পার্কে ব্যাণ্ড বেজে উঠতেই থেমে গেলেন বিজ্ঞানী।
ঘড়ি দেখলেন রেডম্যান। দশটা বাজতে পাঁচ। অনুষ্ঠানের সময় হয়ে এল। দেরি করে ফেলেছ, ইউজেন। ঠেকাতে পারবে না ওদের।
আট
অনুষ্ঠান শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল।
তিন ডাক্তার আর তিন গোয়েন্দা পার্কে পৌঁছে দেখল, মঞ্চে উঠে বসেছে ম্যাকম্বার। পাশে তার স্ত্রী জেলডা। পরনে সাদা-কালো প্রিন্টের পোশাক, হাতে কনুই-ঢাকা সস্তা দস্তানা। তার পাশে বসেছে শুকনো এক লোক, গায়ে রঙচঙে জ্যাকেট। কড়া রোদের জন্যে কুঁচকে রেখেছে। চোখ।
ওয়েসলি থারগুড, লোকটাকে দেখিয়ে নিচু কণ্ঠে তিন গোয়েন্দাকে বললেন রুডলফ। এখানকার মেয়র। ওষুধের দোকানটার মালিক। অনুষ্ঠানের সভাপতি। বক্তৃতা দেয়ার খুব শখ।
কালো স্যুট আর পাদ্রীর আলখেল্লা পরা একজন এসে উঠলেন মঞ্চে, মেয়রের পাশে বসলেন। গির্জার পাদ্রী, বুঝতে অসুবিধে হলো না ছেলেদের।
একে একে শহরের আরও কয়েকজন গণ্যমান্য লোক এসে জায়গা নিল মঞ্চে। তাদের মাঝে রয়েছে মোটেলের মালিক, সুপারমার্কেটের ম্যানেজার, এসিসটেন্ট ম্যানেজার। মঞ্চে মহিলা উঠল আরেকজন, এখানকার একমাত্র গিফট শপের মালিক। খাবার বিক্রি করতে করতে দেরি করে ফেলল কাফের মালিক। ছুটে আসতে দেখা গেল তাকে। তারপর এল গ্যারাজের মালিক, সামনের সারিতে জায়গা না পেয়ে মন খারাপ হয়ে গেল তার। অগত্যা বসতে হলো পেছনের সারিতে।
দোকানপাট সব বন্ধ করে দিয়ে এসেছে, রুডলফ বললেন। সারা শহরের লোক এসে জমেছে এখানে। টাকা কামানোর ভাল মওকা পেয়েছে ম্যাকম্বার।
পার্কের ভেতরে লোক গিজগিজ করছে। পা রাখার জায়গা নেই। এদিক-ওদিক চেয়ে কিশোর দেখল, ক্যাম্পফায়ার গার্ল আর বয়স্কাউটদের। আরও রয়েছে জুনিয়র চেম্বার অভ কমার্সের তরুণেরা।
পরনে কালো স্যুট, আর হ্যাঁটে সাদা পালক গোঁজা কয়েকজন জড় হয়ে আছে এক জায়গায়। সেদিকে তাকিয়ে আছে কিশোর, এই সময় পাশে এসে দাঁড়াল মিসেস গ্যারেট। প্রশ্ন না করেই জেনে গেল কিশোর, লোকগুলো নাইটস অভ কলাম্বাস-এর সদস্য।
পার্কের কিনারে ট্রাক এনে দাঁড় করিয়েছে আইসক্রীমওয়ালা। চুটিয়ে ব্যবসা করছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে বেলুনওয়ালা, হাতে একগুচ্ছ গ্যাস-ভর্তি বড় বেলুন। ঘিরে রেখেছে তাকে বাচ্চারা।