শিওর মানে? ঘুমজড়ানো গলায় বলল মুসা, একশোবার শিওর। মিসটার উলকই তখন ফোন করেছিল। ওই একই কণ্ঠ টেনে টেনে কথা বলে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটা শুরু হয়েছে। মাথামুণ্ড কিছু বুঝতে পারছে না। কেন একজন তার নিজের পূলেই একটা তিমি লুকিয়ে রেখে ওটাকে খুঁজে বের করার অনুরোধ জানাবে, এবার তার জন্যে একশো ডলার পুরস্কার ঘোষণা করবে?
অনেক ভেবেও কিছু বুঝতে পারল না কিশোর! এখন আর পারবে না, বুঝতে পারল। প্রশ্নটা মনে নিয়ে ঘুমাতে হবে। হয়তো ঘুম ভাঙার পর পেয়ে যাবে জবাব।
প্রথমে মুলার বাড়িতে তাকে নামিয়ে দেয়া হলে তারপর রবিনকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ইয়ার্ডে ফিরে এল বোরিস আর কিশের কথ হয়েছে, আগামী সকালে যত তাড়াতাড়ি পারে এসে হেডকেটরে মিলি হারে তিন গোয়েন্দ।
পরদিন রবিন এল সবার পরে। মা আটকে দিয়েছিলেন। সবে বেরোতে যাচ্ছে রবিন, ডেকে বললেন, নাস্তার পরে অনেক কাপ-ডিশ জমে আছে, ওগুলো ধুয়ে দিয়ে গেলে তার উপকার হয়।
ইয়ার্ডের এক কোণে তিন গোয়েন্দার ওয়ার্কশপের বাইরে সাইকেল রাখল রবিন। একটা ওয়ার্কবেঞ্চের ওপাশে জঞ্জালের গায়ে কাত হয়ে যেন অবহেলায় পড়ে রয়েছে একটা লোহার পাত, ইচ্ছে করেই রাখা হয়েছে ওভাবে। সরাল ওটা রবিন। বেরিয়ে পড়ল মোটা একটা লোহার পাইপের মুখ। এর নাম রেখেছে ওরা দুই সুড়ঙ্গ। জঞ্জালের তলা দিয়ে গিয়ে পাইপের অন্য মুখটা যুক্ত হয়েছে মোবাইল হোমের মেঝের একটা গর্তের সঙ্গে।
পাইপের ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এসে, ট্রেলারের মেঝের গর্তের মুখে লাগানো পাল্লা তুলে অফিসে ঢুকল রবিন। অন্য দুজন অপেক্ষা করছে।
ডেস্কের ওপাশে তার নির্দিষ্ট চেয়ারে বসেছে কিশোর। পুরানো একটা রকিং চেয়ারে গা ঢেলে দিয়েছে মুসা, পা রেখেছে ফাইলিং কেবিনেটের একটা আধখোলা ড্রয়ারের ওপর। কেউ কিছু বলল না।
এগিয়ে গিয়ে একটা টুলে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসল রবিন।
সব সময়ই যা হয়, আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। আলোচনার শুরুতে মুখ খুলল প্রথমে কিশোর, বড় রকম কোন সমস্যায় যদি পড়োও, ভাবতে ভাবতে তোমার মন গিয়ে ধাক্কা খায় কোন দেয়ালে, সামনে পথ রুদ্ধ থাকে, রবিনের দিকে তাকাল সে, দুটো উপায় খোলা থাকে তোমার জন্যে। হয় দেয়ালে মাথা কুটে মরা, কিংবা ওটা ঘরে গিয়ে অন্য কোনখান দিয়ে কোন পথ বের করে নেয়া।
ব্যস, বোঝো এখন, মরোগে দেয়ালে মাথা কুটে! রাবনের দিকে চেয়ে হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল মুসা। কিশোর, তোমার দোহাই লাগে, ল্যাটিন ছেড়ে ইংরেজি বলো। চাইলে বাংলাও বলতে পারো, তা-ও এত কঠিন লাগবে না।
ম্যারিবু শ্যাটানোগার কথা বলছি, কঠিন কথার সহজ ব্যাখ্যা করল কিশোর। ম্যারিবু শ্যার্টানোগা, চার্টার বোট ফিশিং।
হতাশ ভঙ্গিতে দুই হাত তুলল মুসা। কিছু বুবলি না।
ডাকো তাকে, কিশোরকে বলল রবিন। আমার মনে হয় না, সে এতে জড়িত। তবে জিজ্ঞেস করতে দোষ কি?
নাস্তার পর থেকে কয়েকবার চেষ্টা করেছি, বলল কিশোর। সাড়া নেই।
হয়ত মাছ ধরতে গেছে, জেলে তো, মন্তব্য করল মুসা। বাড়িতে না থাকলে ফোন রবে কি করে? নাকি বাড়ি না থাকলেও ফোন ধরে লোকে? বুঝতে না পেরে রেগে যাচ্ছে সে।
আমার মনে হয় ও জড়িত, মুসার কথায় কান দিল না কিশোর। সোমবারে বাড়িতে টিনহা শ্যাটানোগাকে ফোন করেছিল কেউ। তাকে তিমিটার কথা বলেছে…
রোভার, বাধা দিয়ে বলল মুসা। নাম যখন একটা রাখা হয়েছে, তিমি তিমি করে রোভার বলতে দোষ কি?
আচ্ছা, ঠিক আছে যাও, রোভারই, মুসার কথা রাখল কিশোর। টিনহাকে ওশন ওয়ারম্ভে ফোন করা হয়নি, কারণ যে করেছে তার জানা আছে সোমবারে ফোন ধরবে না কেউ। জিমবা শ্যাটানোগার বাড়িতে করতেই পারবে না, কারণ তার লাইন কাটা।
আর ব্রাদার শিয়াওঁর মন্দিরেও করবে না, রবিন যোগ করল, কারণ সে বোবা সেজেছে। কোন লাভ নেই ওখানে করে।
বাকি থাকল আর মাত্র একজন শ্যাটানোগা, যার বাড়িতে ফোন আছে, বলল কিশোর। যে স্যান পেড্রোতে বাস করে, মাছ ধরার জন্যে বোট ভাড়া দেয়। হতে পারে, সে টিনহার আত্মীয়, তার ওখানেই ফোন করেছে লোকটা।
হুঁ, মাথা ঝাঁকাল রবিন। গতরাতে উলফকে বলেছে টিনহা, বাপের জন্যেই নাকি তার কথা শুনছে।
বেশ, গোমড়া মুখে বলল মুসা, ম্যারিবু নাহয় বাবাই হলো টিনহার, তাতে কি? দেয়ালের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক?
সহজ, বুঝিয়ে বলল কিশোর। টিনহা আর উলফ আমাদের কাছে মুখ খুলবে। খুললেও মিছে কথা বলবে, আর উলফ কিছুই বলবে না। ওদের কাছ থেকে যেহেতু কিছু জানতে পারছি না আমরা, অন্যের কাছ থেকে ওদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। সে জন্যেই স্যান পেড্রোতে গিয়ে ম্যারিবুর সঙ্গে কথা বলতে চাই, সে কতখানি জড়িত বোঝার জন্যে।
যদি বাড়ি না থাকে? প্রশ্ন তুলল মুসা। মাছ ধরতে গিয়ে থাকে?
তাহলে তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে, কিংবা অন্য জেলেদের সঙ্গে কথা বলব। জিজ্ঞেস করব টিনহার সম্বন্ধে কি জানে, ম্যারিবুর কোন বন্ধু বা পরিচিত লোক আছে কিনা উলফ নামে। বোঝার চেষ্টা করব, রোভারকে রেখে আমরা যখন ফিরে আসছিলাম সেদিন, ওরাই বোট থেকে চোখ রেখেছিল কিনা আমাদের ওপর।
ঠিক আছে, উঠে দাঁড়াল মুসা, চান্স খুবই কম, তবু চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই। তা স্যান পেড়োতে যাব কি করে? তিরিশ মাইলের কম না। বোরিস নিয়ে যাবে?