একশো ডলার। ফিসফিস করে বলল রবিন, ব্যাটার কি লাভ?
কিশোর জবাব না দেয়ায় আবার বলল নোকটা, তাহলে কেসটা নিচ্ছ? কেসটা উচ্চারণ করল কেস-আস।
খুশি হয়ে নেব, হাত বাড়িয়ে একটা প্যাড আর পেনসিল টেনে নিল কিশোর। আপনার নাম আর ফোন নম্বর…
ফাইন, বাধা দিয়ে বলল লোকটা। তাহলে এখুনি কাজে নেমে পড়ো। দিন দুয়েকের মধ্যেই আবার খোজ নেব।
কিন্তু আপনার নাম… থেমে গেল কিশোর, লাইন কেটে দিয়েছে ওপাশ থেকে। এক মুহূর্ত হাতের রিসিভারটার দিকে তাকিয়ে রইল সে, তারপর আস্তে করে নামিয়ে রাখল। কাজ দিল, পুরস্কার ঘোষণা করল, আনমনে বলল কিশোর, কিন্তু নিজের নাম বলল না। আজ সকালে ওশন ওয়ারল্টে গিয়েছি সেকথাও জানে… নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করল সে।
কিশোর, মুসা বলল, কেসটা নিচ্ছ তে? একশো ডলার, কম কি?
মোটেই কম নয়। টাকার চেয়েও বড় এখন এই রহস্যময় কল, এর রহস্য ভেদ করতেই হবে। তার ওপর যোগ হয়েছে একটা হারানো তিমি। কিন্তু কথা হচ্ছে, তদন্ত শুরু করি কোনখান থেকে? কয়েক সেকেণ্ড নীরব রইল কিশোর, তারপর টেনে নিল টেলিফোন বুক। টিনহা.শ্যাটাগো এই একটাই সূত্র আছে আমাদের
হাতে।
দ্রুত ডিরেক্টরির পাতা উল্টে চলল কিশোর। প্রথমে নামটা বিদঘুটে মনে হয়েছে তার কাছে, কিন্তু একেবারে যে দুর্লভ নাম নয়, ফোন বুক ঘেঁটেই সেটা বোঝা গেল। এক শহরেই শ্যাটানোগা পাওয়া গেল আরও তিনজন জিমবা শ্যাটানোগা, শিয়াওঁ শ্যাটানোগা আর ম্যারিবু শ্যাটানোগা! কিন্তু টিনহ, শাটানোগার নাম নেই।
মিস্টার জিমবাকে দিয়েই শুরু করল কিশোর তিনটে রঙের পর জবাব দিল অপারেটর, জিমবা শ্যাটানোগার লাইন কেটে দিয়েছে টেলিফোন বিভাগ।
অনেকক্ষণ ধরে শিয়াওঁ শ্যাটানোগার ফোন কেউ ধরল না, তারপর মোলায়েম একটা গলা প্রায় ফিসফিসিয়ে জবাব দিল। জানাল ব্রাদার শিয়াওঁ মন্দিরে ধ্যানমগ্ন রয়েছেন। যদি তিনি এসে ফোন ধরেনও কিশোরের কথা শুধু শুনতেই পারবেন, জবাব দিতে পারবেন না, কারণ ছ-মাস ধরে কথা বন্ধ রেখেছেন তিনি, আরও অনেকদিন রাখবেন। শুধু ইশারায়ই নিজের প্রয়োজনের কথা জানান।
হেত্তোরি! লাইন কেটে দিয়ে তিক্ত কণ্ঠে বলল কিশোর। আগে ভাবতাম পাগলের গোষ্ঠী খালি ভারত আর আমার দেশেই আছে, এখন দেখছি এখানে আরও বেশি। কথা বন্ধ রেখেছে না ছাই, হুঁহু, বলতে বলতেই তৃতীয় নম্বরটায় ডায়াল করল।
আগের দুজনের তো কোনভাবে জবাব পাওয়া গেছে, এটার কোন সাড়াই এল। কেউ ধরল না ফোন।
ম্যারিবু শ্যাটানোগার নামের নিচে লেখা রয়েছে ঃ চার্টার বোট ফিশিং। আরেকবার চেষ্টা করে দেখল কিশোর, কিন্তু এবারও সাড়া মিলল না।
চার্টার-বোট-ফিশিং-শ্যাটানোগার খবরই নেই, রিসিভার নামিয়ে রাখল কিশোর। হলো না। অন্য কোন উপায় বের করতে হবে।
টিনহাকে কোথায় পাওয়া যাবে, জানি আমরা, বলল রবিন। হপ্তায় ছ-দিন পাওয়া যাবে তাকে ওশন ওয়ারন্ডে।
আরও একটা ব্যাপার জানি, কিশোর যোগ করল, মানে চিনি। তার পিকআপ ট্রাক। চোখ আধবোজা করল সে, ভাবনা আর কথা একই সঙ্গে চলছে। বিকেল ছটায় বন্ধ হয় ওশন ওয়ার। তারপরেও নিশ্চয় অনেকক্ষণ থাকতে হয় টিনহাকে, কারণ সে ট্রেনার। দর্শক চলে যাওয়ার পরও তার কাজ থাকে। ঝট করে সোজা হলো সে। মুসা তোমাকে একটা দায়িত্ব দিতে চাই। আজ হবে না, দেরি হয়ে গেছে। কাল যাবে।
জোরে নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। কোথায়?
কাল বলব।
পরদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বোরিসকে পাকড়াও করল কিশোর, তাদেরকে ওশন ওয়ারন্ডে নামিয়ে দিয়ে আসতে হবে।
ইয়ার্ডের ছোট ট্রাকটা বের করল বোরিস, তাতে দুটো সাইকেল তোলা। হলো। তিন কিশোরের কাজেকর্মে আজকাল আর বিশেষ অবাক হয় না সে, তবু প্রশ্ন না করে পারল না, তোমরা মানুষ তিনজন, সাইকেল নিয়েছ দুটো। তৃতীয়জনকে কি দুই সাইকেলে ঝুলিয়ে নিয়ে ফিরবে?
মুসার সাইকেলের দরকার হবে না,বাোিকে আশ্বস্ত করুল কিশোর। বিনে পয়সায় গাড়িতে চড়বে সে।
হোকে (ও-কে), শ্রাগ করল বোরিস। আর কিছু না বলে ড্রাইভিং সীটে উঠে কল।
ওশন ওয়ারন্ডের পার্কিং লটে গাড়ি থামাল বোরিস। সাইকেল নিয়ে নেমে পড়ল তিন কিশোর।
জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দিল বোরি, আমাকে দরকার হলে ফোন কোরো ইয়ার্ডে। ট্রাক ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেল সে।
টিনহার গাড়িটা খুঁজতে শুরু করল ওরা। বেশি খোঁজাখুজি করতে হলো না, দড়ির বেড়া দেয়া, স্টাফ লেখা সাইনবোর্ড লাগানো একটা জায়গায় দেখা গেল সাদা পিকআপটা। ঘুরে গাড়ির পেছনে চলে গেল কিশোর আর মুসা, গেটে পাহারায় রইল রবিন। টিনহাকে আসতে দেখলেকদের হুঁশিয়ার করে দেবে।
ট্রাকের পেছনটা খালি নয়। নানারকম জিনিসপত্র ফোম রবারের লম্বা লম্বা ফালি, এলোমেলো দড়ি, আর বেশ বড়সড় এক টুকরো ক্যানভাস, ছড়িয়ে পড়ে আছে।
মেঝেতে শুয়ে পড়ল মুসা। ক্যানভাস দিয়ে তাকে ঢেকে দিল কিশোর। রবারের ফানি এমনভাবে গরণে আর ওপরে রেখে দিল যাতে বোঝ না যায় কিছু। তাছাড়া আরেকটু পরেই অন্ধকার হয়ে যাবে, গাড়ির পেছনে কেউ খুঁজে দেখতে আসবে বলেও মনে হয় না।
আমরা কেটে পড়ি,মুসাকে বলল কিশোর। ঘোরাঘুরি করতে দেখলে সন্দেহ করে কুৰে টিনহা। হেডকোয়ার্টারে অপেক্ষা করব তোমার জন্যে। ঠিক আছে?
ঠিক আছে,ক্যানভাসের তলা থেকে জবাব দিল ফুস। যত শীঘ্রি পারি ফোন করব।