এত হাসির কি হলো, ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল মুসা।
কোন কাজই তো হলো না।
কে বলল? পাল্টা প্রশ্ন করল কিশোর।
কে বলল মানে? তিমির খোজ পাওয়া গেছে?
পুরোপুরি নয়, তবে নিরাপদে আছে বোঝা গেছে, বলল কিশোর। বিশদ পর্যালোচনা করে দেখা যাক। ওশন ওয়ারল্ডের কথাই ধরো, সোমবারে বন্ধ থাকে। সেদিন কেউ ওখানে ফোন করলে জ্যান্ত মানুষের সাড়া পাবে না, শুনতে পাবে কতগুলো টেপ করা কথা। ও হ্যাঁ, আমার বিশ্বাস, কাল ফোনে যে কথাগুলো আমরা শুনেছি, সব টেপ করা বখা। সোমবারের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা। কেউ রিঙ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেশিন চালু হয়ে যায়, গড় গড় করে শ্রোতাকে শুনিয়ে দেয় একগাদা তথ্য। এর মানে কি? কোন মানুষ যদি ফোন না ধরে…
তাহলে তিমিটার কথা জানানো যাবে না, কিশোরের কথা শেষ করে দিল মুসা।
না। তবে টিনহা শ্যাটানোগাকে বাড়িতে ফোন করতে কোন বাধা নেই, যদি তার নম্বর জানা থাকে। এবং সেটাই কেউ করেছিল।
কে বলল তোমাকে? রবিনের প্রশ্ন। কেউ বলেনি, অনুমান করে নিয়েছি, টিনহার কথা থেকেই। তিমিটার চরায় আটকা পড়ার কথা শুনে অবাক হয়নি, গায়েব হওয়ার কথা শুনে হয়নি। আমি বলে গেছি, সে শুনেছে, যেন শোনা কথাই আরেকবার শুনছে। তাছাড়া সে জানল কি করে, গতকালের ঘটনা এটা? আমি তো একবারও বলিনি।
ওটা তো প্রশ্ন করেছে, তর্ক করল মুসা।
ওই প্রশ্নটাই জবাব! কবের ঘটনা, এটুকু বললেই তো পারত। আবার উল্লেখ করার কি দরকার ছিল। আসলে কথাটা ঘুরছিল তার মনে, ফলে বলে ফেলেছ। তারপর আরও একটা ব্যাপার, প্রথমে স্বীকারই করতে চায়নি তিমিটার কথা, গতকাল অফিসে আসেনি বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। শেষে রবিনের উৎকণ্ঠা দেখে বলেই ফেলেছে নিরাপদ আছে। কিছুই যদি না জানে নিরাপদে আছে, জানল কি করে?
ঠিকই বলেছ, মাথা দোলাল রবিন। আরেকটা ব্যাপার লক্ষ করেছ? বলল পাইলট কিংবা গ্রে হোয়েল। শুধু ওই দু-জাতের নাম কেন? আরও তো অনেক জাতের তিমি আছে। তাছাড়া পাইলটের নামই বা প্রথমে কেন…
তুমি জানো ওটা পাইলট? ভুরু কোচকাল মুসা।
জানি, বলল রবিন। গতকালই বুঝতে পেরেছি। বলার সুযোগ পাইনি, তারপর আর মনে ছিল না।
অ।…পাইলট আর গ্রে-র তফাতটা কি?
গ্রে-র ফোয়ারার ছিদ্র থাকে দুটো, নাকের ফুটোর মত পাশাপাশি পাইলটের থাকে একটা। আকারেও পাইলটের চেয়ে অনেক বড় হয়ে গেল যেটাকে বাঁচিয়েছি আমরা, ওটা শিশু নয়, যুবক পাইলট বলেই এত ছোট। রবিনের জ্ঞানের বহর দেখে অবাক হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল মুসা, তার আগেই কিশোর বলল, হুঁ, তা যা বলছিলাম। তিমিটার কথা ভালমতই জানে টিনহা। কিন্তু বুঝতে পারছি না, ওশর্ন ওয়ারন্ডের একজন ট্রেনার সাধারণ একটা তিমি হাইজ্যাক করতে যাবে কেন? কেন মিছে…।
গাড়ির হর্নের তীক্ষ্ণ শব্দে বাধা পড়ল কথায়।
ওশন ওয়ারল্ড থেকে বেরিয়ে তীব্র গতিতে ছুটে এল একটা সাদা পিকআপ, বড় রাস্তায় উঠে মোড় নিয়ে চলে গেল দ্রুত। চালাচ্ছে টিনহা শ্যাটানোগো।
হুঁ, খুব দ্রুত ঘটতে শুরু করেছে ঘটনা, বিড়বিড় করল কিশোর।
মানে? বুঝতে পারছে না মুসা।
কয় মিনিট আগে কি বলেছিল আমাদেরকে? ভুরু নাচাল কিশোর। একটা জরুরী শশা দেখাতে যাচ্ছে। শশা হলে তো অ্যাকোয়ারিয়ামের ভেতরে হবে, বাইরে কি? আর এত তাড়াহুড়ো কেন?
শো দেখাতেই তৈরি হচ্ছিল, মুসার কথায় বিশেষ কান দিল না কিশোর, কিন্তু বাধ সেধেছি আমরা। হয়তো কোন ভাবে চমকে দিয়েছি। তাই শো ফেলে রেখে আরও জরুরী কোন কাজ করতে চলে গেছে।
৩
না হয় ধরলামই মিছে কথা বলেছে টিনহা, বলল মুসা, কিন্তু তাতে কি প্রমাণ হয়?
শেষ বিকেল। সকালে ওশন ওয়ার থেকে রকি বীচে ফিরেই লাইব্রেরিতে কাজে চলে যায় রবিন। মুসা যায় বাড়ির লন পরিষ্কার করতে, মাকে কথা দিয়েছিল। আজ সাফ করে দেবে। ইয়ার্ডে বোরিস আর রোভারকে সাহায্য করেছে কিশোর। চাজ সারতে সারতে বিকেল হয়ে গেছে তিনজনেরই। হেডকোয়ার্টারে জমায়েত হয়েছে এখন। এর আগে আর আলোচনার সুযোগ হয়নি।
তাছাড়া মিথ্যে কথা বলা বড়দের স্বভাব, বলেই গেল মুসা, কোন কারণ ছাড়াই মিছে কথা বলবে। গিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করো, দশটা প্রশ্ন করে আগে তোমার মেজাজ বিগড়ে দেবে। তারপর যে জবাবটা দেবে সেটা হয় ঘোরানো-প্যাঁচাননা,
নয় স্রেফ মিছে কথা…
কথা শেষ করতে পারল না মুসা, টেলিফোন বেজে উঠল। রিসিভার তুলল কিশোর।
হালো, স্পীকারে শোনা গেল পুরুষের গলা। কিশোর পাশার সঙ্গে কথা বলতে চাই, প্লীজ।
বলছি।
আজ সকালে ওশন ওয়ারল্ডে একটা হারানো তিমির খোঁজ নিতে গিয়েছিলে, কথায় কেমন একটা অদ্ভুত টান, তাছাড়া কিছু কিছু শব্দ ভেঙে ভেঙে উচ্চারণ করে,
যেমন, ওয়ারল্ডকে বলছে ওয়া-রলড়।
হয়ত মিসিসিপির ওদিকের কোনখানের লোক, ভাবল রবিন, অ্যালবামার হতে পারে। ওই অঞ্চলের কারও সঙ্গে আগে কখনও পরিচয় হয়নি তার, তবে টেলিভিশনে দেখেছে, দক্ষিণাঞ্চলের লোকেরা ওরকম করেই টেনে টেনে কথা বলে, তবে এই লোকটা আরও এক কাটি বাড়া, শব্দও ভেঙে ফেলেছে।
হ্যাঁ, গিয়েছিলাম, জবাব দিল কিশোর। কেন?
আমি আরও জেনেছি তোমরা একধরনের শখের গোয়ে-নদা…
হ্যাঁ, আমরা গোয়ে-নদাই। নানা রকম সমস্যা…
কিশোরকে বলতে দিল না লোকটা। তাহলে নিশ্চয় একটা কেস নিতে আগ্রহী হবে, আগ্রহীকে বলল আগ-রহী, তিমিটাকে খুঁজে বের করে সাগরে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে পারলে একশো ডলার পুরস্কার দেব।