বানাতে গেল কেন তাহলে? মানা করে দিলেই পারত।
ভয়ে। মুখের ওপর উলফকে না করতে পারেনি, কিন্তু বোটটা ডুবে যাওয়ার পরু ওগুলো যাতে আর তোলা না যায়, সে ব্যবস্থা করতে চেয়েছে। শেষ দিকে মরিয়া হয়ে উঠেছিল সে।
হুঁ। অপরাধবোধ সঠিক চিন্তা করতে দেয় না মানুষকে। দ্বিধাগ্রস্ত করে ফেলে। কিন্তু বনেটেই বাধা দিচ্ছে তোমাদেরকে, শিওর হলে কি করে?
অনেক সময় লেগেছে, স্যার। তিনজনকে সন্দেহ করলাম। বিংগো উলফ, নীল বনেট, আর যে লোকটা একশো ডলার পুরস্কার দেবে বলেছে তাকে। রবিনের দিকে তাকাল সে। বনেটের মাথা থেকে সেদিন সৈকত মোজা খোলার আগেতক বুঝতে পারিনি, সে-ই বাধা দিয়েছে।
মাথা দোলালেন চিত্রপরিচালক, ই উলফের ওপর তোমাদের নজর ঘুরিয়ে দেয়ার জন্যেই ওভাবে কথা বলেছে বনেট। টেনে টেনে ভেঙে ভেঙে বলেছে, গোয়ে-নদা, কেই-আস…
বেই-অ্যাণ্ড, হাসল কিশোর। পাকা জালিয়াত লোকটা, অভিনয়ও ভাল করে। যেভাবে উলফের কথা নকল করল, বেশ দ্বিধায় ফেলে দিয়েছিল আমাদেরকে।
বোমরা তিন গোয়েন্দা, সেটা জানল কিভাবে? জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। স্যান পেড্রোতে দেখেই নাকি চিনেছিল?
রোভারকে যেদিন বাচালাম, সেদিন বোটে উলফের সঙ্গে ৰনেটও ছিল, বলল কিশোর। তিমিটাকে বাঁচিয়েছি, দেখেছে ওরা। তিমিটার সাহায্যে বোটের মাল তোলার কথা বলল তাকে উলফ, পুরো প্ল্যানটা বলল। তখনই ঠিক করে ফেলেছে বনেট, পরদিন ওশন ওয়ারন্ডে যাবে। ওখানে দেখল আমাদেরকে। আগের দিন সৈকত দেখেছিল, পরদিন ওশন ওয়ারন্ডে আমাদের দেখে ধরে নিল তিমিটার ব্যাপারে খোজখবর নিতেই গেছি আমরা। টিনহার অফিসে ঢুকতে দেখল, পরে টিনহার টেলি আমাদের কার্ডটা দেখল। তার ধারণা হলো, আমাদেরকে দিয়েই তার কাজ হবে, ঠেকাতে পারবে উলফকে। তিমিটা সাগরে ছেড়ে দিতে পারলেই আর বোটের মাল তোলা যাবে না।
তিমি ছেড়ে দিলেও হয়তো অন্য উপায় বের করত উলফ, বললেন চিত্রপরিচালক। এতগুলো টাকা, পুরো এক মিলিয়ন ডলার। আচ্ছা, ম্যারিবু শ্যাটানোগার অফিসে ঢুকেছিল কেন বনেট? নিশ্চয় একটা নকল চাবি বানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ঢুকল কেন?
শ্যাটানোগার স্কুবা যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট করতে। ওশন ওয়ারন্ড থেকে যন্ত্রপাতি ধার নিল টিনহা। বেকায়দায় পড়ে গেল বনেট। শেষে উলফের বোটে উঠে কোনমতে একটা যন্ত্র নষ্ট করতে পারল।
আর সেটা পড়ল মুসার ভাগে, মুচকি হাসলেন পরিচালক। মুসা, তোমার কপালই খারাপ।
হ্যাঁ, স্যার,মাথা ঝাঁকাল মুসা। আরেকটু হলেই দিয়েছিল শেষ করে।
ঘড়ির দিকে তাকালেন পরিচালক। আরিব্বাবা, অনেক বেজেছে। লাঞ্চের সময়। আরে বসো বসো, তোমাদের জন্যেও আনতে বলছি। এখানেই খেয়ে যাও। আড়চোখে তাকালেন মুসার হাসি হাসি মুখের দিকে একটু আগের গোমড়া কুচকুচে কালো মুখটা হাসিতে উজ্জ্বল।
বেল টিপে বেয়ারাকে ডেকে খাবার আনতে বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। রবিনের দিকে ফিরলেন। রবিন, টিনহার বাবার কি খবর? ভদ্রলোক সেরে উঠেছেন? হাসপাতালের টাকার কি ব্যবস্থা?
ভালো, স্যার, রবিন জবাব দিল। তবে টাকার ব্যবস্থা পুরোপুরি হয়নি। এতবড় একটা জালিয়াতি পিরয়ে দেয়ার জন্যে আমাদেরকে ছোটখাটো একটা পুরস্কার দিয়েছে ট্রেজারি। আমাদের ভাগেরটাও টিনহাকে দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, তার বাবার চিকিৎসার জন্যে, নেয়নি। তার ভাগেরটাই শুধু নিয়েছে। আশা করছে, কেস করে ক্যালকুলেটর বিক্রির অর্ধেক টাকা আদায় কবরে উলফের কাছ থেকে।
ভাবছি, সামনে ঝুকলেন চিত্রপরিচালক, তোমাদের এবারের কেসটা নিয়ে ছবি করব। ভাল কাহিনী। নামটা কি দেয়া যায়?
লস্ট হোয়েল, সঙ্গে সঙ্গে বলল মূস।
নাহ, মাথা নাড়ল রবিন। লস্ট ওয়ারল্ড লস্ট ওয়ারল্ড মনে হয়। তাছাড়া তিমিটাকে তো আবার পাওয়া গেছে।
কিডন্যাপ হোয়েল, বিড় বিড় করল কিশোর। বাংলায় বলল, হারানো তিমি।
ঠিক, আঙুল তুললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। কিডন্যাপড় হোরেল। চমৎকার নাম।
খাবার এল। সাজিয়ে দিয়ে চলে গেল বেয়ারা।
নাও, শুরু করো, বলতে বলতে নিজের প্লেটটা টেনে নিলেন পরিচালক। খাওয়ার সময় আর বিশেষ কথা হলো না। শূন্য প্লেটটা ঠেলে সরিয়ে বললেন তিনি, কফি?
ঘাড় কাত করল কিশোর। মূসা আর রবিনও সায় দিল।
আচ্ছা, কাপে চুমুক দিয়ে নামিয়ে রাখতে রাখতে বললেন পরিচালক। রোভারের কি খবর? চলে গেছে?
নড়েওনি, হেসে বলল রবিন। তাকে যেখানে রেখে এসেছিল টিন, থানা থেকে ফিরে গিয়ে দেখল, ওখানেই রয়েছে। ঘোরাঘুরি করছে। টিনহার বড় বেশি ভক্ত হয়ে পড়েছে। ভেবেচিন্তে আবার নিয়ে এসেছে ওটাকে।
কোথায়? ওশন ওয়ারন্ডে?
হ্যাঁ।
শুড, চেয়ারে হেলান দিলেন আবার পরিচালক। টিনহার উপকার করা যায় কিভাবে, ভাবছিলাম। ছবিতে ওকে আর রোভারকে দিয়েই অভিনয় করাতে পারি। দুজনের বেশ কিছু সম্মানী পাওনা হয় তাহলে আমার কাছে।
তিনজনেই তাকিয়ে আছে পরিচালকের দিকে।
হাজার দশেক অগ্রিমও দিতে পারি, আবার বললেন তিনি।
টিনহার বাবার বিলের টাকা হয়ে যায় তাহলে! লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা। কিশোর, বসে আছ কেন? চলো জলদি, টিনহাকে খবরটা দিতে হবে না? চলো, চলো।
চিত্রপরিচালককে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে দরজার দিকে রওনা দিল তিন কিশোর।
হাসিতে ভরে উঠল মিস্টার ক্রিস্টোফারের কুৎসিত মুখ। হাসলে আর তত খারাপ দেখায় না তাকে।