পকেট থেকে বাক্সের চাৰি বের করে ক্যাপটেনকে দিল উলফ। টিনহা, বাক্সটা দাও ক্যাপটেনের কাছে।
মনে মনে স্বীকার না করে পারল না কিশোর, অভিনয় মোটামুটি ভালই করেছে উলফ। যেন নিরীহ একজন মানুষ। কারও সঙ্গে বেঈমানী করতে চায় না। মিস্টার স্ট্যাটানোগার প্রাপ্য ভাগ দিতে বিশেষ আগ্রহী।
তালা খুলে বাক্সের ডালা তুললেন ক্যাপটেন। কুঁচকে গেল ভুরু।
টিনহা চমকে গেল। রবিন আর মুসার চোখ দেখে মনে হলো, হঠাৎ সার্চ লাইটের তীব্র উজ্জ্বল আলো ফেলেছে কেউ তাদের চোখে।
ধীরে সুস্থে এগিয়ে এল কিশোর, উঁকি দিয়ে দেখল বাক্সের ভেতরে কি আছে। সামান্যতম অবাক মনে হলো না তাকে, যেন জানত এ-জিনিসই থাকবে।
দশ ডলারের কড়কড়ে নতুন নোটের বাণ্ডিলে ঠাসা বাটা।
রবার ব্যাও দিয়ে বেধে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিশোর অনুমান করল, দশ লাখ ডলারের কম হবে না।
তো, দেখলেন তো চীফ, স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল উলফ। লা পাজে এবারের ট্রিপে যা আয় হয়েছে, আছে এখানে। সেই সঙ্গে টেলিফোন বেজে ওঠায় থেমে গেল।
রিসিভার কানে ঠেকিয়ে কয়েক সেকেণ্ড চুপচাপ শুনলেন মিস্টার ফ্লেচার। নামিয়ে রেখে বললেন, আপনার আই ডি চেক করা হয়েছে। পরিষ্কার। আপনার নামে কোথাও কোন ওয়ারেন্ট নেই। হ্যাঁ, যা বলছিলেন, সেই সঙ্গে কি?
পকেট ক্যালকুলেটরগুলো লা পাজে বিক্রি করে দিয়েছিলাম, সেই টাকা আছে এখানে। সেই সঙ্গে রয়েছে আমার অন্য টাকা। লা পাজে আমার কিছু সম্পত্তি ছিল, একটা হোটেল ছিল, সব বিক্রি করে দিয়ে এসেছি। সেই টাকা। এখন টিনহা বলুক, তার বাবার ক্যালকুলেটরগুলোর জন্যে কত চায়।
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাকালেন ক্যাপটেন। আপনার বিরুদ্ধে কোন কেস দাড় করাতে পারছি না। ট্যাক্স যদি ক্লিয়ার থাকে… শ্রাগ করলেন তিনি। মিস শ্যাটানোগা, বলুন কত চান?
হাসল টিনহা। বুঝতে পারছি না। মিস্টার উলফ বলেছিলেন, বাক্সে ক্যালকুলেটর রয়েছে, পঁচিশ-তিরিশ হাজার ডলার দাম। মিছে কথা কেন বলেছিলেন, জানি না। যাক গে। বাবার অর্ধেক শেয়ার হয় সাড়ে বারো থেকে পনেরো হাজার কিন্তু তুলতে খরচাপাতি লেগেছে। হাসপাতালের বিল হাজার দশেক লাগবে, ওটা পেলেই আমি খুশি।
ঠিক আছে, দশ হাজারই দেব, বাক্সটা তুলে নেয়ার জন্যে সামনে ঝুঁকল উল। কাল সকালে চেক দিয়ে দেব তোমাকে। কালই টাকা তুলে নিতে পারবে ব্যাংক থেকে।
এখান থেকে নগদ নয় কেন জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করল না টিনহা, সঙ্কোচে।
বাক্সটা টেবিলের ওপর দিয়ে টেনে আনল উলফ। ডালা আটকাবে। তারপর বেরিয়ে যাবে এতগুলো টাকা নিয়ে।
এক কদম সামনে বাড়ল কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছিল, হাত সরিয়ে ক্যাপটেনকে বলল, স্যার, ছোট্ট একটা অনুরোধ আছে।
চাবিটা উলফকে দিতে গিয়েও থেমে গেল ক্যাপটেনের হাত। কি?
বাক্সটা আবার খুলুন। নোটের সিরিয়াল নাম্বার মেলান।
সিরিয়াল?
মেলান। আমার ধারণা, একই নাম্বারের অনেকগুলো পাবেন। বলতে বলতেই টান দিয়ে নিজেই নিয়ে এল বাক্সটা। ডালা তুলে একটা বালি বের করে ঠেলে দিল ক্যাপটেনের দিকে। আর, ট্রেজারিতে ফোন করুন, এক্সপার্ট পাঠাক। সব জাল নোট, আমি শিওর।
১৭
সহজেই নীল বনেটকে ধরে ফেলেছে পুলিশ, বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে তার বিশাল টেবিলের সামনে বসে কাছে কিশোর। ওর ঝরঝরে লিমোসিনে করে মেকসিকো পালাচ্ছিল। পথে খারাপ হয়ে যায় গাড়ি। স্যান ডিয়েগোর কাছে। পুলিশের কাছে সব বলে দিয়েছে ও।
চেয়ারে হেলান দিলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। বনেট স্বীকার করেছে জাল নোটগুলো সে বানিয়েছে?
করেছে, জবাব দিল রবিন। শুধু তাই না। মিস শাটানোগার গাড়ির ব্রেকের কানেকশন কেটেছে। যত ভাবে পেরেছে, ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে আমাদেরকে, যাতে বাক্সটা না তুলতে পারি। লোকটার জন্যে এখন আমার দুঃখই হচ্ছে। বেচারা।…আসলে উলফ তাকে বাধ্য করেছিল নোট জাল করতে। বনেট তার ব্ল্যাকমেলের শিকার।
ব্ল্যাকমেল? কিভাবে?
ইউরোপে কাজ করত বনেট। পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স আরও নানা রকম দরকারী কাগজপত্র জাল করত। সেটা জেনে ফেলল পুলিশ। উলফও জানল। বনেটের কাজকর্মের কিছু প্রমাণও জোগাড় করে ফেলল। পালাল বনেট। মেকসিকোতে গিয়ে ঢুকল। মনস্থির করল, আর বেআইনী কাজ করবে না। তার যা দক্ষতা, প্রেসের কাজে উন্নতি করতে পারবে। তা-ই করল.সে, লা পাজে প্রেস দিল। ভালই চলছিল, এই সময় একদিন সেখানে গিয়ে হাজির হলো উলক। দেখা হয়ে গেল বনেটের সঙ্গে। নোট জাল করতে বাধ্য করল তাকে। ভয় দেখাল, তার কথা না শুনলে পুলিশে ধরিয়ে দেবে।
হুঁ, মাথা নাড়লেন চিত্রপরিচালক। কিশোর, তুমি কি করে বুঝলে নোটগুলো জাল?
বনেটের চোখের নিচের দাগ, স্যার, বলল কিশোর। কারা কারা ঘড়ির মেকানিকের গ্লাস পরে, ভাবলাম। হঠাৎ মনে পড়ল, লেখা কিংবা নকশা জালিয়াতির কাজ যারা করে, তারাও পরে।
আমার হলে মনে পড়ত না, স্বীকার করলেন পরিচালক। অনেক তলিয়ে ভাব তুমি। যাক, বাক্সটা তুলতে বাধা দিল কেন বনেট, নিশ্চয় তার জাল করা সমস্ত নোট ছিল ওটাতে? ডুবে গিয়েছিল বলে খুব খুশিই হয়েছিল সে, না?
হ্যাঁ, বলল কিশোর। টাকাগুলো ছড়িয়ে পড়লে তার অপরাধ আরও বাড়ত। বোট ডুবে যাওয়ায় খুশি হয়েছিল সে, সেজন্যেই ওটা তুলতে বাধা দিচ্ছিল। উলফ জানত না। একজন তুলতে চাইছে, আরেকজন বাধা দিচ্ছে, ব্যাপারটায় প্রথমে খুব। অবাক হয়েছিলাম। থামল কিশোর। তারপর বলল, আপনার জানা আছে, স্যার, প্রতিটি জালিয়াতের কাজে কিছু না কিছু ফারাক থাকেই, বিশেষজ্ঞর চোখে ধরা পড়ে সেটা। বনেটও জানত, টাকাগুলো ব্যাংক থেকে পাবলিকের কাছে যাবে, সেখান থেকে কিছু যাবে ট্রেজারিতে, ট্রেজারির চোখে ধরা পড়ে যাবে ওগুলো জাল। জালিয়াতকে খুঁজতে শুরু করবে ওরা। এক সময় না এক সময় বনেটের কাছে পৌঁছে যাবেই।