দাও, হাত বাড়াল টিনহা। ছুঁড়ে মারো।
বাসকেট বল খেলে মুসা, ভালই খেলে। ক্ষণিকের জন্যে ভুলে গেল উলফের কথা। ভুলে গেল, যে কোন মুহূর্তে গর্জে উঠতে পারে পিস্তল। বাক্সটাকে বাসকেট বলের মত করে ধরে দূর থেকে ছুঁড়ে দিল টিনহার দিকে, বল ছোড়ার কায়দায়।
লম্বা ধনুক সৃষ্টি করে উড়ে গেল বাক্সটা, কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে সেটা ধরল টিনহা।
বাক্সটা ছুঁড়ে দিয়েই আর দেরি করেনি মূসা, ঝাপ দিয়েছে পানিতে। ডুবে গেল সঙ্গে সঙ্গে। ভাসল না। পানির নিচ দিয়েই সাঁতরে চলল গভীর পানির দিকে। দম একেবারে ফুরিয়ে এলে, আসল।
বিশ গজ দূরে চলে গেছে টিনহা। তীরের দিকে চেয়ে আছে। বাক্সটা কামড়ে ধরে রেখেছে রোভার।
মাথা নিচু করে রেখে ফিরে চাইল মুসা।
পিস্তল নেই উলফের হাতে, বোধহয় পকেট ঢুকিয়ে রেখেছে। টেকো মাথাটা সামান্য ঝুঁকিয়ে তাকিয়ে আছে এদিকে। মূসার মনে হলো, ভয়ানক রেগে গিয়ে কুঁসছে একটা ষাড়, কি করবে বুঝতে পারছে না। তার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে কিশোর আর রবিন।
হাত নেড়ে মুসাকে ডাকল কিশোর।
পানি থেকে উঠে এল মুসা।
…আপনার জিনিস ডাকাতি করার কোন ইচ্ছেই নেই আমাদের, মিস্টার উলফ, কিশোর কাছে। বাক্সের জিনিস অর্ধেক আমাদের, মানে, মিস শাটানোগার প্রাপ্য। সেটা নিশ্চিত করার জন্যেই একাজ করেছি।
অনেকক্ষণ কোন কথা বলল না উলফ। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। ভুরু নাচাল, কি করতে চাইছ?
বাক্সটা শহরে নিয়ে যাব, বলল কিশোর। থানায়, ইয়ান ফ্লেচারের অফিসে। উনি এখানকার পুলিশ চীফ, জানেন বোধহয়। খুব ভাল লোক। পুলিশকে ভয়ের কিছু নেই, বেআইনী কিছু করেননি, আমাদেরকে পিস্তল দেখানো ছাড়া। সেকথা বলব না আমরা। সব খুলে বলবেন, তাঁকে। মিস্টার ফ্লেচার বাক্সের জিনিসগুলো ভাগাভাগি করে দেবেন আপনাকে আর টিনহাকে।
আবার দীর্ঘ নীরবতা। সাগরের দিকে তাকাল উল। পাশাপাশি ভাসছে টিনহা আর রোভার। ওদের কাছ থেকে বাক্সটা ফেরত নেয়ার কোন উপায় নেই। পিস্তল তাক করেও কোন লাভ হবে না, বিচ্ছ একেকটা, কেয়ারই করবে না। উল্টে আরও বেকায়দা অবস্থায় ফেলে দিতে পারে তাকে।
বেশ, তেঁতা গলায় বলল উলফ। বোটে করে যাব আমরা। রকি বীচের নৌকাঘাটায় বোট রেখে থানায় যাব। ঠিক আছে?
রাজি হলো না কিশোর, মাথা নাড়ল। উলফের চালাকি বুঝতে পারছে, কিন্তু সেকথা বলল না। নরম গলায় বলল, এত ঘুরে যাওয়ার দরকার কি? আসলে এখান থেকে যাওয়ারই দরকার নেই। চীফকেই ডেকে নিয়ে আসতে পারি আমরা।
ডেকে? কিভাবে? ষাড়ের মত ফোস ফোস করে উঠল উলফ। এখানে ফোন কোথায়? সব চেয়ে কাছেরটাও…
…আধ মাইল দূরে, কথাটা শেষ করে দিল কিশোর, কোস্ট রাডের ধারে একটা কাফেতে। সাইকেল নিয়ে পাঁচ-সাত মিনিটেই চলে যাবে রবিন। চীফকে ফোন করে আসবে। কি ররিন, পারবে না?
খুব পারব, হাসল রবিন।
মিস্টার উলফ, আপনার স্কিলটা যদি বোটে রেখে আসেন, মোলায়েম গলায় বলল কিশোর, টিনহাকে বাক্সটা আনতে বলতে পারি। তারপর রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে পারি পুলিশ আসার অপেক্ষায়। কি বলেন?
কি আর বলবে উলফ? কোঁকড়াচুলো, সাংঘাতিক পাজি, ইবলিসের দোসর ছেলেটাকে কষে দুই চড় লাগানোর ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে দমন করল সে। চোখ পাকিয়ে তাকাল অতি নীরিহের ভান করে থাকা মুখটার দিকে। কিন্তু কিছুই করার নেই।
পুলিশকে ফোন করতে গেল রবিন।
বোটের লকারে পিস্তলটা রেখে এল উলফ। মুসা আবার গিয়ে দেখে এল, সত্যিই রেখেছে কিনা।
তীরে এসে মাছের বালতিটা নিয়ে গেল টিনহা, রোভারকে খাওয়াল। তাকে বিদায় জানিয়ে ফিরে এল। সঙ্গে সঙ্গে এল তিমিটা, তীরের কাছে এসে মাথা তুলে চেয়ে রইল, টিনহাকে চলে যেতে দেখে খারাপ লাগছে তার।
এতক্ষণে খেয়াল করল কিশোর, বনেট নেই। কোথাও দেখা গেল না তাকে। কেটে পড়েছে কোন এক ফাঁকে।
পথের ধারে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না ওদের, রবিন ফিরে এল। কয়েক মিনিট পরেই পুলিশের গাড়ি। আরও পনেরো মিনিট পর থানায় পৌঁছল ওরা।
ওদের দিকে চেয়ে অবাকই হলেন ইয়ান ফ্লেচার। তাকে দোষ দিতে পারল না কিশোর, কাদা-পানিতে যা চেহারা হয়েছে ওদের একেকজনের, পোশাক-আশাকের যা অবস্থা, তাতে তিনি অবাক না হলেই বরং, অস্বাভাবিক লাগত।
কি ব্যাপার কিশোর? জানতে চাইলেন পুলিশ-প্রধান।
তিন গোয়েন্দাকে চেনেন তিনি। কয়েকবার পুলিশকে সাহায্য করেছে ওরা। বেশ কয়েকটা জটিল কেসের সমাধান করে দিয়েছে। কিশোরের বুদ্ধির ওপর যথেষ্ট আস্থা তাঁর।
উলকে দেখিয়ে বল কিশোর, উনি মিস্টার উক। উনিই বলুন সব, সেটাই ভাল হবে।
বলুন, মিস্টার উলফ, অনুরোধ করলেন ফ্লেচার।
উঠে দাঁড়াল উল। পকেট থেকে ভেজা কাগজপত্র বের করে তা থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সটা নিয়ে বাড়িয়ে ধরল।
লাইসেন্সটা একজন সহকারীকে দিলেন ক্যাপ্টেন, পরীক্ষা করে দেখার জন্যে।
সব খুলে বলল উলফ। মেকসিকোয় ক্যালকুলেটর চোরাচালান করতে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ফেরার পথে ঝড়ে বোট ভোলা, তারপর তিমির সাহায্যে বাক্সটা উদ্ধার, কিছুই বাদ দিল না। কিশোরকে দেখিয়ে বলল, আমার এই খুদে বন্ধুটি পরামর্শ দিল, বাক্সটা আপনার সামনে খুলতে। তাতে আমার আর মিস্টার শ্যাটানোগার ভাগ নিয়ে পরে কোন গোলমাল হবে না। ভেবে দেখলাম ঠিকই বলেছে। রাজি হয়ে গেলাম।