শেষবার যখন গিয়েছিলেন, হয়েছিল?
হ্যাঁ। লা পাজে ছোটখাট ছাপাখানার ব্যবসা করছে। পুরানো দোস্ত, মেকসিকো গেলেই ওর সঙ্গে দেখা না করে ফিরি না। তাতে দোষের কি?
নীরব রইল কিশোর, ভাবছে।
আর কিছু জিজ্ঞেস করবে, কিশোর? বলল টিনহা।
না। আর কিছু না।
শুড, টিনহার দিকে ফিরুল উলফ। আবার কাজ শুরু করা যেতে পারে?
পারে। তবে আগে ভালমত আবার ট্যাংক-ফ্যাংকগুলো চেক করে নিই। মরতে চাই না।
ডেকের ওপর নিজের যন্ত্রপাতিগুলো ফেলে রেখেছে টিনহা। গিয়ে ট্যাংকের ভালভ খুলল। এখান থেকেই বাতাসের হিসহিস শুনতে পেল কিশোর।
যে শয়তানী করেছে, সবগুলো যন্ত্র নষ্ট করার সময় পায়নি। কিংবা ইচ্ছে করেই করেনি। হয়তো ভেবেছে, মারাত্মক একটা দুর্ঘটনাই পুরো উদ্ধার কাজটা পর্যন্ত করে দেবে, ব্যর্থ করে দেবে।
টিনহার পাশে এসে দাঁড়াল কিশোর। ফিসফিস করে বলল, বাক্সটা উলককে দেব আগে ভেতরে কি আছে দেখতে চাই। আমার সন্দেহ হচ্ছে।
প্রস্তাবটা ভেবে দেখল টিনহা। ওকে চিন্তিত কণ্ঠে বলল, তাই হবে।
থ্যাংকস। তার ওপর টিনহার বিশ্বাস দেখে খুশি হলো কিশোর। তবে বিশ্বাস না করলে ভুল করত, কারণ এখন প্রায় সব প্রশ্নের জবাবই কিশোরের জানা।
জাম হওয়া প্রেসার গজ। উলফের পুরানো বন্ধু, নীল বনেট। লা পাজে ট্রিপ। বনেটের চোখের নিচের দাগ, কুঁচকানো চামড়া। ছড়ানো ছিটানো প্রতিটি টুকরো প্রশ্নের উত্তরই খাপে খাপে জোড়া লেগে গেছে গোয়েন্দাপ্রধানের মনে।
১৩
এত নিচে নামা সম্ভব না,ককপিটে উলফের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে টিনহা। ওই বোট পর্যন্ত যেতে পারব না।
তাহলে?
যা বলছি, শুনুন। রোভারকে দিয়ে কাজ করাতে হলে ফালতু একটা কথা বলবেন না। যা যা জিজ্ঞেস করব, বলবেন। সব ইনফরমেশন চাই। ওকে?
টিনহার চোখে চোখে চেয়ে রইল উলফ, লোকটার দৃষ্টিতে আগুন দেখতে পাচ্ছে কিশোর। আরও প্রশ্ন? বেশ, কি জানতে চাও?
ঠিক কোন জায়গায়? ক্যালকুলেটর ভরা বাক্সটা আছে কোথায়?
হুঁ… চোখ সরিয়ে নিল উলফ, টিনহার দিকে তাকাতে পারছে না। কেবিন। বাংকের তলায়।
বাধা? আই মিন, কোন কিছুর সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে?
না, উসখুস করছে উলফ। ভেলা ভাসাতে চেয়েছিল তোমার বাবা। তাহলে বাক্সটা সঙ্গে নিতে পারতাম। কিন্তু সময়ই পেলাম না। তার আগেই তলিয়ে গেল। বোট, তিক্ত হয়ে উঠল কণ্ঠস্বর। বাক্স আর নিতে পারলাম না, জান বাঁচানোই মুশকিল হয়ে উঠল।
কেবিনের দরজায় তালা আছে?
নাহ্। তুমি তো জানোই…
মাথা ঝাঁকাল টিনহা। বোটটার প্রতিটি ইঞ্চি চেনা তার। দশ বছর বয়েস থেকেই ওই বোটে করে মাছ ধরতে গিয়েছে বাবার সঙ্গে। জানি দরজা খোলা। রাখত বাবা, যাতে ইচ্ছে হলেই চট করে গিয়ে ঢুকতে পারে। বীয়ারের প্রচণ্ড নেশা তো, দেরি সইতে পারে না।
হ্যাঁ, টিনহার দিকে তাকাতে পারল আবার উলফ।
বাক্সটা দেখতে কেমন?
সবুজ রঙের। ইস্পাতে তৈরি। দু-ফুট লম্বা, এক ফুট চওড়া, আর নয় ইঞ্চি পুরু।
হ্যানডেল আছে?
আছে।…বাক্সটাইয়ে, মানে, ক্যাশবক্সের মত দেখতে। ডালায় লাগানো হ্যাণ্ডেল।
হুঁ, বাক্সটা কি করে বের করে আনবে ভাবছে টিনহা। দড়ি লাগবে। সরু, শক্ত দড়ি। আর একটা তারের কাপড় ঝোলানোর হ্যাঙ্গার।
যাচ্ছি, বলল উলফ। কিশোর, হুইলটা ধরো তো।
দড়ি আর হ্যাঙ্গার আনতে দেরি হলো না।
হ্যাঙ্গারটাকে বাঁকা করে চৌকোনা করে নিল টিনহা। বকা হুকটা দাঁড়ানো রয়েছে একটা বাহুর ওপর। শক্ত মাইলনের দড়ির এক মাথা বাঁধল হ্যাঙ্গারের সঙ্গে।
ওকে, এবার যাওয়া যায়।
মুসা এগিয়ে এল। আমি আর যেতে চায় না সে, যা ঘটে গেছে খানিক আগে, এরপর আজ আর পানিতে ডুব দেয়ার ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু একেবারেই কিছু না বললে ভাল দেখায় না, কিছু যদি মনে করে বসে টিনহা, তাই বলছে। আমিও যাব…
হেসে তাকাল টিনহা। তুমি থাকো। দরকার হলে আসতে বলব।
মনে মনে হাপ ছেড়ে বাঁচল মুসা, হাসল। সরাসরি না বলে দিতে পারত টিনহা, তা না বলে ঘুরিয়ে বলেছে। এতে তার অনেকখানি হালকা হয়ে গেছে মূসার। অঘটনটা ঘটার পর থেকেই নিজেকে দোষী ভাবছে, যদিও দোষটা মোটেই তার নয়।
দড়ির বাণ্ডিল কাঁধে ঝুলাল টিনহা, মাস্ক ঠিক করল, তারপর নেমে গেল আবার সাগরে।
কয়েক গজ দূরে ঝিমোচ্ছিল রোভার, শব্দ শুনে চোখ মেলল। এগিয়ে এল টিনহার দিকে।
রোভারের পিঠে চাপড় দিল টিনহা, পুরো এক মিনিট তার গায়ে গাল ঠেকিয়ে রইল।
মুসা দেখছে। বুঝতে পারছে, তিমিটার সঙ্গে কথা বলছে টিনহা। কিন্তু কি বলছে, শোনা যাচ্ছে না।
পরে অনেক ভেবেছে মূসা। কিন্তু কিছুতেই তার মাথায় আসেনি, কিভাবে কি করতে হবে, তিমিটাকে কি করে বুঝিয়েছে টিনহা। মানুষের মনের ঘোরপ্যাঁচ কি করে বুঝল একটা জন্তু!
মনিটরের দিকে চেয়ে আছে কিশোর।
সাদা আলোর চক্র ফুটল পর্দায়, রোভারের মাথার লাইট জ্বেলে দিয়েছে টিনহা। তীব্র আলোয় পানিকে দেখাচ্ছে ধােয়াটে সাদা মেঘের মত। ফুটে উঠল এক আঁক রঙিন মাছ চোখে ভয়, দ্রুত সরে গেল ওগুলো।
আবার দেখা গেল সাগরের তলদেশ। নুড়ি আর বালিময় গোল একটুকরো জায়গার পাশে একটা পাথর, শামুক ছেয়ে আছে।, কিশোরের পেছনে হুইলে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে উলফ, তার চোখও পর্দার দিকে। উত্তেজনায় সোজা হয়ে গেছে সে, না চেয়েও টের পেল কিশোর।