তাতে কি লাভ?
খুলে বলল কিশোর।
মন দিয়ে শুনল টিনহা। তারপর বলল, তারিখের ব্যাপারে তুমি শিওর?
শিওর। মেকসিকান ইমিগ্রেশন অফিসে খোজ নিয়েছি। লাপাজ থেকেই বোট ছেড়েছিল।
চুপচাপ ভাল কিছুক্ষণ টিনহা। ওকে, গগলসটা পরে নিল চোখে। রবিনকে ছাড়াই পারব আমরা। রোভার, এসো যাই।
দ্রুত সাঁতরে চলল টিনহা। পাশে রোভার। পেছনে কিশোর, টিনহা আর তিমিটার সঙ্গে তাল রাখতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।
সৈকতে এসে উঠল মুসা। একটা প্লাসটিকের ব্যাগে করে ছোট একটা ওয়াকিটকি নিয়ে এসেছে কিশোর, খাঁড়ির কাছে ফেলে রেখে গেছে, ওটা ঝুলিয়ে নিল কোমরে।
এটা নিয়ে সাঁতরাতে পারবে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
পারব, বলল মুসা। যথেষ্ট ভারি, কিন্তু পানিতে নামলে ভার কমে যাবে।
মূসাকে নেমে যেতে দেখল রবিন। গলা পানিতে নেমে সাঁতরাতে শুরু করেছে। পানি নিরোধক ব্যাগে রয়েছে ওয়াকি টকি, পানি ঢুকবে না। ভেতরে বাতাস রয়ে গেছে, ভেসে উঠেছে ব্যাগটা। সাঁতরাতে অসুবিধে হচ্ছে না মুসার, অল্পক্ষণেই ধরে ফেলল কিশোরকে।
পানির কিনার থেকে উঠে এল রবিন। আগের বাক্সটাতেই রয়েছে টেপরেকর্ডার, ওটা তুলে নিয়ে চলে এল তোর সাইকেলের কাছে। পেছনের ক্যারিয়ারে পুটুলি করে রেখেছে তার সোয়েটার, ওটার ভেতর থেকে বের করল। আরেকটা ওয়াকিটকি। আনটেনা তুলে দিয়ে সুইচ টিপে অন করল যন্ত্রটা। শব্দ গ্রহণের জন্যে তৈরি।
শুকনো একটা জুতসই পাথর খুঁজে নিল রবিন, সোয়েটারটা তার ওপর বিছিয়ে আরাম করে বসল, ওয়াকি টকিটা রাখল কোলে। পাশে রাখল রেকর্ডারের বাক্স। উলফের বোটের কাছে প্রায় পৌঁছে গেছে টিনহা আর রোভার, দেখা যাচ্ছে।
স্বাগত জানাল উলফ। টিনহাকে টেনে তোলার জন্যে একটা হাত বাড়িয়ে দিল।
চাইলও না টিনহা। রোভার, থাকো এখানে, বলে কাঠের নিচু রেলিঙ ধরে এক ঝটকায় উঠে পড়ল, স্বচ্ছন্দে।
টিনহার মত এত সহজে উঠতে পারল না কিশোর, বেগ পেতে হলো। পেছনে কয়েক গজ দূরে চুপ করে ভেসে রয়েছে মুসা।
যন্ত্রপাতিগুলো পরীক্ষা করব, মিস্টার উলফ? কিশোর বলল।
হ্যাঁ হ্যাঁ, এসে, কিশোরকে ককপিটে নিয়ে এল উলফ। ছোট্ট ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরাটা দেখাল।
পরীক্ষা করে দেখল ওটা কিশোর, হুইলের ওপরে বালক হেডের সঙ্গে আটকানো মনিটর স্ক্রীনটাও দেখল।
পানির নিচে কাজ করবে ক্যামেরাটা? শিওর? জিজ্ঞেস করল।
নিশ্চয়। ওশন ওয়াল্ড থেকে ধার নিয়েছে টিনহা। ওখানে প্রায় সারাক্ষণই কাজ চলে এটা দিয়ে, সারাক্ষণকে উচ্চারণ করল সারা-কখণ। আর কোন প্রশ্ন আছে?
আরও অনেক প্রশ্ন তৈরি করে ফেলেছে কিশোর, করেই যাবে একের পর এক, যতক্ষণ না মুসা কাজ সারে। জাহাজে উঠে কোমর থেকে প্রাসটিকের ব্যাগ খুলে জাহাজের পেছনের অংশে লুকাতে হবে, উলফকে না দেখিয়ে।
কিশোর ভাল অভিনেতা, তবে বোকর ভান করার মত এত ভাল কোন অভিনয় করতে পারে না। বোকা বোকা ভাব দেখিয়ে বলল, আমি ভাবছি, পানির নিচ থেকে রেঞ্জ কতখানি দেবে? বোটের কত কাছে থাকা লাগবে রোভারের?
পঞ্চাশ গজ দুরে থাকলেও স্পষ্ট ছবি আসবে, চকচক করে বিরক্ত প্রকাশ করছে যেন উলফের টাক। টিনহা তোমাকে এসব বলেনি?
হ্যাঁ, মনে হয় বলেছে। কিন্তু রোভারের মাথায় সার্চলাইট বেঁধে… আর বলার দরকার নেই, থেমে গেল কিশোর। মুসা এসে দাঁড়িয়েছে পেছনের ডেকে। কিশোরের চোখে চোখ পড়তেই ভেজা চুলে আঙুল চালাল–সংকেত : নিরাপদে লুকিয়ে রাখা হয়েছে ব্যাগটা।
ও, হ্যাঁ, খুব শক্তিশালী লাইট তো, হবে মনে হয়, আগের কথাটা শেষ করল কিশোর, হঠাৎফেন বুঝতে পেরেছে সব কিছু।
চলো তাহলে, কাজ সারা যাক। ডেকে বেরিয়ে এল উলফ।
রেলিঙে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রোভারের সঙ্গে কথা বলেছে টিনহা, তাকে বলল উলক, আরেকটা ছেলে কোথায়? তিনজন ছিল না?
ঠাণ্ডা লেগেছে, পেছন থেকে চট করে জবাব দিল মুসা! খাঁড়ির কাছে বসিয়ে রেখে এসেছি। ভাবলাম
থাকুক, আউটবোর্ড মোটরের থ্রটলে গিয়ে হাত রেখে টিনহার দিকে ফিরল উলফ, কত জোরে সাঁতরাতে পারবে মাছটা?
ও মাছ নয়, রেগে উঠল টিনহা। অত্যন্ত ভদ্র, সত্য, বুদ্ধিমান, স্তন্যপায়ী প্রাণী।…হ্যাঁ, চাইলে ঘণ্টায় পনেরো মাইল বেগে ছুটতে পারবে। কিন্তু আপনি বেশি জোরে চালাবেন না বোট। আট নটের নিচে রাখবেন। নইলে ও তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে যাবে।
জো হুকুম, থ্রটল ঠেলে দিয়ে হুইল ধরল উলফ। খোল সাগরের দিকে বোটের নাক ঘোরাল।
টিনহা আগের জায়গায়ই রইল। খেলতে খেলতে বোটের সঙ্গে এগোচ্ছে রোভার, ওটার সঙ্গে কথা বলছে। তিমিট কখনও শাঁ করে ছুটে যাচ্ছে দূরে, পরক্ষণেই ডাইভ দিয়ে চলে আসছে আবার, ভুসস করে মাথা তুলছে বোটের পাশে।
জরুরী একটা কথা জানার জন্যে উসখুস করছে কিশোর, কিন্তু সে বোকা সেজে রয়েছে, তার জিজ্ঞেস করাটা উচিত হবে না। আপাতত বোকা থাকারই ইচ্ছে। মুসার কাছে এসে ফিসফিস করে বলল সে-কথা, কি জিজ্ঞেস করতে হবে শিখিয়ে দিল।
উলফের কাছে গিয়ে বলল মুসা, তীর থেকে কতদূরে পাওয়া গিয়েছিল আপনাদেরকে?।
মাইল পাঁচেক, সামনে সাগরের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল উলফ। কোস্টগার্ডরা তাই বলেছে।
মুসার দিকে চেয়ে নীরবে ঠোঁট নাড়ল কিশোর।
বুঝল মুসা। উলফকে আবার জিজ্ঞেস করল, কতক্ষণ ছিলেন পানিতে?
এই ঘণ্টা দুয়েক।
আবার ঠোঁট নাড়ল কিশোর।