হাসি ফিরিয়ে দিল কিশোর। রোভারের চেয়েও বেশি?
তার রসিকতায় আবার হাসল টিনহা। ওকে। এবার তোমার কথা বলো। রোভারের ব্যাপারে এত আগ্রহনে? কি তদন্ত করছ তোমরা?
ভাবল কিশোর। একশো ডলার পুরস্কার ঘোষণার কথা বলবে? সত্যি বলাই স্থির করল সে, টিনহা যখন তার সঙ্গে মিথ্যে বলেনি, সে-ও কলবে না। আমাদের এক মক্কেল-নাম বলতে পারব না, বলেনি সে-তিমিটাকে খুঁজে বের করে সাগরে কিরিয়ে দিতে পারলে একশো ডলার পুরস্কার দেবে বলেছে।
সাগরে ফিরিয়ে দিতে পারলে! কেন? কি লাভ তার?
জানি না, মাথা নাড়ল কিশোর।
হুঁ? তো অর্ধেক কাজ তো তোমরা সেরে ফেলেছ, উলফের বিরাট র্যঞ্চ হাউসের সামনে এনে গাড়ি রাখল টিনহা। বাকি কাজটা আমাকেই করতে দাও। পারলে সাহায্য কোনো আমাকে।
নিশ্চয় করব, এতক্ষণে মুখ খুলল রবিন। কিন্তু কিভাবে?
ডাইভিং জাননা?
কিশোর জানাল, জানে তিনজনেই। তবে এ-ব্যাপারে মুসা ওস্তাদ, দক্ষ সাঁতারু, একথাও বল।
দারুণ, বলল টিনহা, তোমাদের ওপর ভক্তি বাড়ছে আমার। তাহলে এক সঙ্গে কাজ করছি আমরা? যত তাড়াতাড়ি পারি রোভারকে সাগরে ছেড়ে দেব। তবে ছাড়লে চলে যাবে না এব্যাপারে শিওর হয়ে নিতে হবে। তারপর বাবার বোর্টটা খুঁজতে সাহায্য করবে তোমরা আমাকে। কি বলো?
রাজি, একই সঙ্গে জবাব দিল রবিন আর কিশোর। ওরা তো এইই চায়, রহস্য, রোমাঞ্চ, উত্তেজনা। খুশি হয়ে উঠেছে। ছুটিটা ভালই কাটবে। সাগরে ডুবন্ত একটা বোট উদ্ধার, তিমির সাহায্যে, চমৎকার!
এসো আমার সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে এক পাশের দরজা খুলে ফেলল টিনহা, রোভারের সঙ্গে দেখা করবে।
চোখ বুজে পানিতে চুপচাপ ভেসে রয়েছে রোভার, শরীরের অর্ধেক পানির নিচে। পূলের আলো জ্বেলে দিল টিনহা, সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেলল তিমিটা। নড়ে উঠল। সাঁতরে চলে এল কিনারে, প্রভু বাড়ি ফিরলে কুকুর যে চোখে তাকায়, সেই দৃষ্টি। পাখনা আর লেজ নেড়ে স্বাগত জানাল টিনহাকে।
মনে হলো, তিন গোয়েন্দাকেও চিনতে পেরেছে সে। ওরা পুলের কিনারে বসে পানিতে হাত রাখল। সবার হাতেই ঠোঁট দুইয়ে আনন্দ প্রকাশ করল রোভার।
খাইছে, দাঁত বেরিয়ে পড়েছে মুসার। ও আমাদের চিনতে পেরেছে।
চিনবে না মানে? টিনহা বলল। ওর প্রাণ বাঁচিয়েছ তোমরা। ও কি মানুষের মত অকৃতজ্ঞ যে ভুলে যাবে?
কিন্তু একটা…
কনুয়ের গুতো মেরে তাকে থামিয়ে দিল রবিন তাড়াতাড়ি, নইলে মুসা বলেই ফেলছিল একটা সাধারণ তিমি, তাতে মনঃক্ষুন্ন হত টিনহা। মুসাকে এক পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে যা যা কথা হয়েছে, সংক্ষেয়ে সব জানাল রবিন।
রোভারকে আগে খাওয়াল টিনহা। তারপর ফ্লিপার পরে নিল পায়ে। পানিতে পা নামাতে যাচ্ছিল, থেমে গেল একটা শব্দে। ঘুরে তাকাল। র্যঞ্চ, হাউস থেকে বেরিয়ে এদিকেই আসছে দুজন লোক।
মূসার কাছে চেহারার বর্ণনা শুনেছে, দেখেই উলফকে চিনতে পারল কিশোর। অন্য লোকটাকে চিনল তিনজনেই। সেই লম্বা লোকটা, যে নিজেকে টিনহার বাবা বলে পরিচয় দিয়েছিল।
আপনি এখানে আসবেন না বলেছিলেন, উলকে দেখে রেগে গেছে টিনহা। খবরদার আর আসবেন না। রোভারের ট্রেনিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসতে পারবেন না।
জবাব দিল না উলফ। তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা কারা? কারা উচ্চারণ করল ও কা-আরা।
আমার বন্ধু, বলল টিনহা। স্কুবা ডাইভার। আমাকে সাহায্য করতে রাজি হয়েছে।
মাথা ঝাঁকাল উলফ, যদিও বোঝা গেল, এসব পছন্দ করছে না সে। কিন্তু টিনহা বলেছে তার বন্ধু, তাই আর প্রতিবাদ করতে পারল না।
উলফের পাশে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখছে টিনহা। বন্ধুটি কে?
আমার নাম বনেট, নিজেই পরিচয় দিল লম্বা লোকটা। নীল বনেট। উলফের পুরানো বন্ধু। আপনার বাবার বন্ধু মিস। হেসে বলল, মেকসিকো থেকে এসেছি।
অ। ওকে।
কিশোর বুঝতে পারছে, নামটা টিনহার অপরিচিত, আগে কখনও দেখেনি লোকটাকে। কিন্তু তার মেকসিকো থেকে এসেছি কথাটা বলার পেছনে একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে!
তিন গোয়েন্দার দিকে চেয়ে বনেটের হাসি বিস্তৃত হলো। তাহলে তোমরা স্কুবা ডাইভার। ওশন ওয়ারল্ডে মিস শ্যাটানোগার সঙ্গে কাজ করো?
মাঝে মাঝে, চট করে জবাব দিল টিনহা, স্থায়ী কিছু না। ও, সরি, পরিচয় করিয়ে দিই। কিশোর, মুসা, রবিন।
পরিচিত হয়ে খুশি হলাম, আগে থেকেই যে চেনে এটা সামান্যতম প্রকাশ পেল না লোকটার দৃষ্টিতে, হাসিমুখে হাত মেলাল তিন গোয়েন্দার সঙ্গে।
হয় স্মরণশক্তি সাংঘাতিক খারাপ, নয়তো দিনের বেলায়ও ঘুমের ঘোরে হাঁটে ব্যাটা, লোকের সঙ্গে কথা বলে, ডাবল কিশোর। কিন্তু এর কোনটাই বিশ্বাস করতে পারল না সে। আসলে লোকটা একটা মস্ত ধড়িবাজ, তাদের সঙ্গে আগেই পরিচয় হয়েছে, এটা জানাতে চায় না টিনহাকে।
কেন? অবাক লাগছে কিশোরের। কি লুকাতে চায় নীল বনেট?
৭
নীল বনেটের, বলল কিশোর, এই রহস্যের সঙ্গে কি সম্পর্ক?
প্রশ্নটা করেছে সে নিজেকেই। মুখ ফুটে ভাবনা বলা যেতে পারে একে।
টিনহার সঙ্গে উলফের বাড়ি গেছে, তার পরের দিনের ঘটনা। স্যালভিজ ইয়ার্ডের গেটে অপেক্ষা করতে করতে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে তিন গোয়েন্দা, বা বার তাকাচ্ছে পথের দিকে। বিকেলে ওশন ওয়ারল্ড থেকে ছুটি নিয়ে লাঞ্চ খেয়ে সোজা এখানে চলে আসার কথা টিনহার, তিন গোয়েন্দাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা :