বলে গেল টিনহা, কিভাবে উদ্ধার করেছে ওরা তিমিটাকে। তার দুজন মেকসিকান বন্ধুকে নিয়ে গেছে ট্রাকসহ। ক্রেনের সাহায্যে তিমিটাকে ট্রাকে তুলেছে, ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে জড়িয়ে বেঁধেছে সারা গা, যাতে ডিহাইড্রেটেড না হয়। তারপর তাড়াতাড়ি এনে ছেড়ে দিয়েছে উলফের সুইমিং পুলে, তারই অনুরোধে। টিনহা তিমিটার নাম রেখেছে রোভার, ওটার সঙ্গে সাঁতরেছে বণ্টার পর ঘণ্টা,ওটার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছে।
একটা স্টোর থেকে জ্যান্ত মাছ জোগাড় করে দিয়েছে উলফ, তিমিটার খাবার জন্যে। ভালই চলছিল সব কিছু। খুব দ্রুত শিখে নিচ্ছিল রোভার, বুদ্ধিমান জীব তো।
সব তিমিই বুদ্ধিমান, সান্তা মনিকার দিকে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল টিনহা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধির পরিচয় দেয়, হাজার, হোক, এতবড় একটা মগজ। কিন্তু রোভারের বুদ্ধি যেন আর সব তিমিকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেক বছর ধরে তিমিকে ট্রেনিং দিচ্ছি, কিন্তু ওর মত এত দ্রুত কেউ শিখতে পারেনি। বয়েস আর কত হবে, বড়জোর দুই-মানুষের তুলনায় অবশ্য পচ কিংবা ছয়, বাচে তো মানুষের তিন ভাগের এক ভাগ সময়-কিন্তু দশ বছরের বুদ্ধিমান ছেলেকে ছাড়িয়ে গেছে ওর বুদ্ধি।
তারপর উলফের বাড়িতে সেদিন কি হয়েছে, বলল টিনহা।
রোভারকে মাছ খাওয়ানো শেষ হলো। টিনহা ঠিক করল, স্যান পেড্রোতে যাওয়ার পথে হাসপাতালে নেমে বাবাকে আরেকবার দেখে যাবে। গাড়িতে করে তাকে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করল উলফকে। পুলের ধারে দাঁড়িয়েছিল উলফ, রোদে চকচক করছিল তার টাক।
হিসেবী ভঙ্গিতে টিনহার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ উলফ।
অস্বস্তি বোধ করতে লাগল টিনহা। বলল, আগামীকাল ওশন ওয়ারন্ডে লোক পাঠাব, ওরা তিমিটাকে সাগরে ছেড়ে দিয়ে আসবে, বলেই গাড়িপথের দিকে হাঁটতে শুরু করল।
থামাল তাকে উলফ। এক মিনিট, টিনহা। একটা কথা তোমার জানা দরকার, তোমার বাবা সম্পর্কে।
তোমার বাবা চোরাচালানী। টেপ রেকর্ডার, পকেট রেডিও, আরও নানারকম ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র মেকসিকোতে নিয়ে গিয়ে তিন-চার গুণ দামে বিক্রি করে। কয়েক বছর ধরে করছে একাজ।
চুপ করে রইল টিনহা। উলফের কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো না। তবে অবিশ্বাসও করতে পারল না। কি জানি, হতেও পারে। মাঝে মধ্যেই মুখ ফসকে বেশি কথা বলে ফেলে বাবা, উলফের কাছেও হয়তো বলেছিল। বাবাকে ভালবাসে টিনহা, আর দশটা মেয়ের চেয়ে বেশিই বাসে। ছোটবেলায় টিনহার মা মারা গেছে, তারপর আর বিয়ে করেনি বাবা, মা-বাবা দুজনের আদর দিয়েই মানুষ করেছে। এটাও অশ্য অস্বীকার করে না টিনহা, তার বাবা পুরোপুরি সৎ নাগরিক নয়।
গত ট্রিপে বেশ কিছু মাল নিয়ে চলেছিল, আবার বলল উলফ। বেশিরভাগই পকেট ক্যালকুলেটর, মেকসিকোয় খুব চাহিদা। ঝড়ে পড়ে বোট ডুবল, সেই সঙ্গে মালগুলোও।
তবুও কিছু বলল না টিনহা।
বিশ তিরিশ হাজার ডলারের কম দাম হবে না, আমেরিকাতেই, বলে চলল উলফ। তার অর্ধেক আমার। দুজনে শেয়ারে ব্যবসা করতাম আমরা। ওয়াটারপ্রুফ কনটেইনারে রয়েছে ক্যালকুলেটরগুলো, পানি ঢুকতে পারবে না, নষ্ট হবে না। আমার ইনভেস্টমেন্ট আমি হারাতে রাজি নই। বোটটা খুঁজে বের করে জিনিসগুলো তুলে আনা দরকার। তুমি আমাকে সাহায্য করবে, শেষ কথাটা বেশ জোর দিয়েই বলল সে। ভয় দেখানোর একটা ভঙ্গিও রয়েছে। টিনহার মুখের দিকে তাকাল উলফ। তুমি আর তোমার এই তিমি। করছ তত সাহায্য?
জবাব দেয়ার আগে ভালমত ভেবে দেখেছে টিনহা। ও জানে, আমেরিকান সরকার ধরতে পারবে না তার বাবাকে বেআইনী কাজ বলতে পারবে না। পকেট ক্যালকুলেটর কিনে আমেরিকা থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার মাঝেও বেআইনী কিছু নেই। আর যাই করুক, আমেরিকান পুলিশের ভয় দেখিয়ে টিনহাকে ব্লেকমেল করতে পারবে না উলফ। মেকসিকান পুলিশের ভয় দেখিয়েও লাভ নেই। কারণ। হাতে-নাতে ধরতে না পারলে কোন চোরাচালানীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারবে না ওরাও।
তবে সমস্যা হলো তার বাবাকে নিয়ে। বোটের বীমা করায়নি, কাজেই গেছে ওটা। নিজেরও চিকিৎসা-বীমা নেই। অথচ হাসপাতালে রোজ শয়ে শয়ে ডলার খরচ, আসবে কোথা থেকে? যদি উলফকে সাহায্য করে টিনহা, বোর্টটা খুঁজে পায়, ক্যালকুলেটরগুলো তুলতে পারে, শেয়ারের অর্ধেক টাকা মিলবে। দশ পনেরো হাজার দিয়ে হাসপাতালের বিল তো মেটাতে পারবে।
ভেবে দেখেছে টিনহা, সে-ও কোন বেআইনী কাজ করছে না। বোটটা তাদের। সেটা খোঁজার মধ্যে দোষের কিছু নেই। বরং এটাই স্বাভাবিক।
কাজেই রাজি হয়ে গেলাম, পাহাড়ী পথের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বলল নিহা। ওপরের দিকে উঠছে এখন গাড়ি। বোটটা খুঁজে বের করার জন্যেই রোভারকে ট্রেনিং দিচ্ছি।
চুপচাপ সব শুনেছে এতক্ষণ কিশোর, একটি কথাও বলেনি। আরও এক মিনিট চুপ থেকেবলল, তাহলে এই ব্যাপার। রোভারকে কলার পরিয়েছেন এ-কারণেই। গলায় একটা টেলিভিশন ক্যামেরা বলিয়ে দেবেন, গভীর পানিতে ডুব দিয়ে ছবি তুলে আনবে। ভাল বুদ্ধি। দুনিয়ার যে কোন ভাল ডুবুরীর চেয়ে ভাল পারবে রোভার, ওর মত এত নিচে কোন ডুবুরীই নামতে পারবে না। অনেক কম সময়ে অনেক বেশি জায়গা ঘুরে দেখতে পারবে।
ঠিক বুঝেছে, হেসে প্রশসা করল টিনহা। তুমি আসলেই বুদ্ধিমান, তোমার বয়েসী অনেক কিশোরের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান।