বলেছে, মাথা ঝাঁকাল মুসা। কিন্তু এতে রহস্য কোথায়?
যেভাবে বলেছে সেটাই রহস্য, বলল কিশোর। ইচ্ছে করেই উখে করেছে। আমাদের জানিয়েছে আসলে। কিন্তু টিনহার বাবা সাজতে গেল কেন? লোকটা কিভাবে বেরিয়ে এসেছিল, দেখেছ। দরজা বন্ধ করে তালা আটকাল, আমাদের দেখেই চমকে গেল, কেন? একটাই কারণ হতে পারে, চুরি করে ক্যাপটেনের অফিসে ঢুকেছিল সে, কিছু খুঁজছিল। শুধু অফিস না, হয়তো পুরো বাড়িই খুঁজেছে। – কি? রবিন প্রশ্ন করল। লোকটাকে দেখে তো চোর মনে হলো না। কি খুঁজেছে?
তথ্য, ভাবনার জগত থেকে ফিরে এল কিশোর। আমরা যে কারণে স্যান পেড্রো গিয়েছি, হয়তো একই কারণে সে-ও গিয়েছে—টিনহা আর ক্যাপটেন শ্যাটানোগা সম্পর্কে জানতে চায়। তারপর বেরিয়ে এসে আমাদের দেখে চমকে গিয়ে যা মুখে এসেছে বলেছে, নিজেকে ক্যাপটেন বলে চালিয়েছে, নইলে যদি প্রশ্ন করি ও কি করছিল ওখানে।
উঠে দাঁড়াল কিশোর? হয়েছে, চলো। ঘোড়া ছোটাইগে। মুসাও উঠে দাঁড়াল, হাঁ করে চেয়ে আছে কিশোরের দিকে, বুঝতে পারছে না।
রবিন বলল, উলফের বাড়ি যাচ্ছি?
আরি সব্বোনাশ, এখন? আঁতকে উঠল মুসা। কিশোরের মুখের দিকে চেয়ে মত পরিবর্তন করে বলল, ঠিক আছে, যেতে আপত্তি নেই, তবে আগে পেটে কিছু পড়া দরকার। কিংবা আরেক কাজ করতে পারি, মেরিচাচীর কাছ থেকে কয়েকটা স্যাণ্ডউইচ চেয়ে আনতে পারি, সাইকেল চালাতে চালাতে খাব। কয়েক টুকরো ভাজা মাংসও দেবেন চাচী যদি চাই, আর সকালে দেখলাম সুইস পনির বানাচ্ছেন…
ওশন ওয়ার বন্ধু হতে দেরি আছে। তাড়াহুড়ো করল না ছেলেরা, শান্ত ভাবেই সাইকেল চালাল। পার্কিং লটে এসে সাদা পিকআপটার কাছে অপেক্ষা করতে লাগল। অবশেষে আসতে দেখা গেল টিনহা শ্যাটানোগাকে।
শীতটা যেতে চাইছে না, এই বিকেলেও বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। তবে টিনহার পোশাক দেখে মনে হলো না তার শীত লাগছে। হাতে একটা টেরিকুথের তৈরি আলখেল্লা ধরনের পোশাক অবহেলায় ঝলছে। মনে মনে তাকে পেইনের সঙ্গে তুলনা করল কিশোর। সেই টু-পীস সাঁতারের পোশাক পরনে, পায়ে সাধারণ স্যাঙাল।
আরে, তোমরা, তিন গোয়েন্দাকে দেখে বলে উঠল সে, আমাকে খুজছ?
মিস শ্যাটানোগা, সামনে এগোল কিশোর, বুঝতে পারছি, অসময়ে এসে পড়েছি। সারাদিন কাজ করে নিশ্চয় ক্লান্ত এখন আপনি। তবু যদি কয়েক মিনিট সময় দেন…
আমি ক্লান্ত নই, কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল টিনহা, তবে খুব ব্যস্ত। তোমরা কাল এসো।
আসলে, এখুনি বলা দরকার, আরেক পা সামনে বাড়ল কিশোর। ব্যাপারটা
কাল, আবার বলল টিনহা। এই দুপুর নাগাদ, সামনে পা বাড়াল, আশা করছে কিশোর পথ ছেড়ে দেবে।
কিন্তু কিশোর সরল না, আগের জায়গায়ই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। টিনহার মুখের দিকে চেয়ে লম্বা দম নিল। তারপর নিঃশ্বাস ফেলে একটা মাত্র শব্দ উচ্চারণ করল, রোভার।
থমকে গেল টিনহা। আলখেল্লাটা কাঁধে ফেলে কোমরে দুই হাত রেখে দাঁড়াল, বদলে গেল কণ্ঠস্বর, রোভারের পেছনে লেগেছ কেন?
পেছনে লাগিনি, হাসার চেষ্টা করল কিশোর। মিটার উলফের পূলে ও আছে জেনে খুশি হয়েছি। এ-ও জানি, ওর যত্ন নিচ্ছেন আপনি। কয়েকটা কথা জানতে চাই আপনার কাছে।
আপনাকে সাহায্য করতে চাই আমরা, মিস শ্যাটানোগা, নরম গলায় বলল রবিন। বিশ্বাস করুন।
কিভাবে? রবিনের দিকে ঘুরে চাইল টিনহা, কোমর থেকে হাত সরায়নি। কিভাবে সাহায্য করবে?
আমাদের সন্দেহ, কেউ আপনার ওপর গুপ্তচরগিরি করছে, মুসা বলল। আজ স্যান পেড্রোতে গিয়েছিলাম। ক্যাপটেন শ্যাটানোগার অফিস থেকে একটা লোককে বেরোতে দেখলাম। আমাদের দেখে চমকে গেল। আপনার বাবা বলে নিজেকে চালানোর চেষ্টা করল।
ও আপনার বাবা হতেই পারে না, তাই না? মুসার কথা পিঠে বলল কিশোর। আপনার বাবা জাহাজডুবিতে অসুস্থ হয়ে এখন হাসপাতালে।
দ্বিধা করছে টিনহা, চোখের কড়া দৃষ্টি দূর হয়ে গেছে। ভাবছে কি করবে। হাসল সে। বুঝতে পারছি তোমরা সত্যিই গোয়েন্দা।
এক্কেবারে, মুসাও হেসে জবাব দিল। আমাদের কার্ডেই তো লেখা রয়েছে।
ও-কে, আলখেল্লার পকেট হাতড়ে গাড়ির চাবি বের করল টিনহা। চলো না, গাড়িতে বসেই কথা হবে।
থ্যাংক ইউ, মিস শ্যাটানোগ, রাজি হলো কিশোর। ভালই হয় তাহলে।
পাশা, গাড়ির দরজার তালা খুলতে খুলতে বলল টিনহা, তোমাকে শুধু পাশা বলেই ডাকব।
কিশোর।
ও-কে, কিশোর।…তোমাকে শুধু মুসা, আর তোমাকে রবিন। আপত্তি নেই তো?
না, আপত্তি কিসের? তাড়াতাড়ি বলল রবিন।
ওদের দিকে চেয়ে হাসল টিনহা। এসো, ওঠো।
ড্রাইভারের পাশে দুজনের জায়গা হয়। নিজে থেকেই বলল মুসা, তোমরা বসো, আমি পেছনে গিয়ে বসছি। কিশোর, যা যা কথা হয়, পরে আমাকে সব বোলো।
টিনহার পাশে বসেছে কিশোর, তার পাশে রবিন। হাইওয়ের দিকে চেয়ে কি ভাবছে টিনহা। সামনের একটা ট্রাফিক পোস্টে লাল আলো। গাড়ি থামিয়ে সবুজের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে বলল, ওই যে লোকটা, যে বাবার অফিসে ঢুকেছিল, চেহারা কেমন তার?
নিখুঁত বর্ণনা দিল কিশোর।
মাথা নাড়ল টিনহা। চিনলাম না। হতে পারে বাবার কোন বন্ধু…কিংবা তার বিরুদ্ধে গোলমাল পাকাতে চায় এমন কেউ।
সবুজ আলো জ্বলছে।
ওকে, গাড়ি চালাতে চালাতে বলল টিনহা, তো বলল কি বলবে। কি জানতে চাও?
গোড়া থেকে সব, বলল কিশোর। সোমবার সকালে স্যান পেড্রোতে উলফ আপনাকে টেলিফোন করার পর যা ঘটেছে সব। চরায় আটকা পড়া তিমিটা বিনকিউলার দিয়ে ও-ইতো দেখেছে, নাকি?
৬
সেদিন সকালে হাসপাতালে বাবাকে দেখে সবে ফিরে এসেছি, শুরু করল টিনহা, ওর অফিসে ফোন বাজল। ধরলাম। বিংগো উলফ। দক্ষিণ অঞ্চলের লোক, বড়ি খুব সম্ভব অ্যালাবামায়। এর আগেও দু-তিনবার দেখেছি ওকে, বাবার সঙ্গে মাছ। ধরতে গেছে। ফোনে উলফ বলল, সৈকতে আটকে পড়া একটা তিমি দেখেছে সে।