তোমরা এসেই, খুশি হলাম, হেসে হাত বাড়িয়ে দিল ম্যারিবু। খাওয়ার সময় হয়েছে। চলো না কিছু খেয়ে নিই। কাছেই দোকান।
ধন্যবাদ জানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল মুস! খাওয়ার আমন্ত্রণে কোন সময় না করে না সে।
খেতে খেতেই প্রচণ্ড ঝড় আর বোট হারানোর গল্প শোনাল ম্যারিবু।
বিংগো উলফ নামের এক লোককে মাছ ধরতে নিয়ে গিয়েছিল বাজা ক্যালিফোর্নিয়ায়। উপকূলের কয়েক মাইল দূরে থাকতেই কোন রকম জানান না দিয়ে আঘাত হানে ঝড়। বোট বচানোর অপ্ৰণ চেষ্টা করেছে ম্যারিব, কিন্তু। ঢেউয়ের সঙ্গে কুলাতে পারেনি। কাত হয়ে ডুবে যায় বোেট। কোন রকমে টিকে ছিল দুজনে, ভেসে ছিল, পরনে লাইফ-জ্যাকেট ছিল তাই রক্ষা। অবশেষে কোস্ট গার্ডের জাহাজ ওদেরকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে।
শুনে খুব দুঃখ পেল দুই সহকারী গোয়েন্দা। রবিন জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল, বোটটা বীমা করানো আছে কিনা, কিন্তু তার আগেই বলে উঠল কিশোর, আপনার মেয়ে খুব ভাল সাঁতারু, ক্যাপ্টেন। তিমির সঙ্গে যা সাঁতারায় না। ভাল ট্রেনার।
উঁ!…হ্যাঁ হ্যাঁ, ওশন ওয়ারল্ডে।
অনেকদিন ধরেই একাজ করছে, না? জিজ্ঞেস করল রবিন। বুঝতে পেরেছে, টিনহার আলোচনা চালাতে চায় কিশোর।
বেশ কয়েক বছর।
অনেক দূরে যেতে হয় রোজ, ওশন ওয়ারল্ড তো কম দূরে না, কিশোর বলল। এখান থেকেই যায় বুঝি?
আনমনা হয়ে মাথা ঝাঁকাল ম্যারিবু। অন্য কিছু ভাবছে, বোঝা যায়। কফি শেষ করল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, আসলে হয়েছে কি, তিন গোয়েন্দাকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছে যেন সে, তিমিকে ট্রেনিং দেয়ার ব্যাপারে মিস্টার উলফের খুব আগ্রহ। সান্তা মনিকায় পাহাড়ের ওপর তার একটা বাড়ি আছে। বাড়িটার ঠিকানা দিল সে, যেটা আগের রাতেই চিনে এসেছে মুসা। একটা সুইমিং পুল আছে তার বাড়িতে। অনেক বড় পুল।
রাস্তায় বেরোনোর আগে আর কিছু বলল না ম্যারিবু। আবার তিন গোয়েন্দার সঙ্গে দেখা হবে, এই ইচ্ছে প্রকাশ করে, হাত মিলিয়ে বিদায় নিল।
ছেলেরা বার বার ধন্যবাদ দিল তাকে আতিথেয়তার জন্যে।
চলে যাচ্ছে লম্বা লোকটা। সেদিকে চেয়ে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর।
হুঁমম! মুসার কথার জবাবে, না এমনি বলল কিশোর, বোঝা গেল না। হাঁটতে শুরু করল। মোড়ের কাছে গাড়ি রেখে এসেছে।
গাড়ি ছাড়ল হ্যানসন। গলি থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, বাড়ি পাওয়া গেছে?
হ্যাঁ, জবাব দিল মূসা। খুব ভাল লোক। আমাদেরকে খাওয়াল।
তাই নাকি? ফিরে তাকাল একবার হ্যানসন, তারপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করল আবার পথের ওপর। ভুল হয়েছে আপনাদের। গাড়ি যেখানে রেখেছিলাম, তার পাশেই একটা গ্যারেজ আছে, দেখেছিলেন? চাকায় হাওয়া দিতে নিয়ে গিয়েছিলাম, দেখি পুরানো এক দোস্ত, মেকসিকান। সে বলল, ক্যাপটেন শ্যাটানোগার বোট ডুবে গেছে।
হ্যাঁ, বলেছে আমাদেরকে, বলল রবিন।
যে বলেছে, সে অন্য লোক, ক্যাপটেন শ্যাটানোগা নয়।
কেন নয়? লম্বা লোকটা চলে যাওয়ার পর এই প্রথম কথা বলল কিশোর। ভাবে মনে হলো না অবাক হয়েছে, এটাই যেন আশা করছিল সে।
কারণ, ক্যাপটেন শ্যাটানোগা এখন হাসপাতালে। খুব অসুস্থ। কড়া নিউমোনিয়া বাধিয়েছে। এতক্ষণ পানিতে থাকা, হবেই তো। কারও সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা নেই বেচারার।
৫
লোকটা ক্যাপটেন শ্যাটানোগা সাজতে গেল কেন? প্রশ্ন করল মুসা।
রকি বীচে ফিরে এসেছে তিন গোয়েন্দা, হেডকোয়ার্টারে বসেছে।
লম্বা লোকটা আসলে কে? রবিনের প্রশ্ন।
সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল না কিশোর। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছে, চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। হাতের তালুর দিকে চেয়ে বলল, আমি একটা আস্ত গাধা, বোকার সম্রাট, মাথামোটা বলদ।
কেন, জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করল না রবিন, কিশোরের এই ধরনের কথার সঙ্গে সে পরিচিত। মুসাও চেয়ে আছে কিশোরের মুখের দিকে।
কেন জানো? নিজেই ব্যাখ্যা করল গোয়েন্দাপ্রধান।
আমি আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করিনি। অফিসের বাইরে তখন লোকটাকে দেখেই বুঝেছি, ও ক্যাপটেন শ্যাটানোগা নয়, হতে পারে না। নাবিকের মত পোশাক পরেনি, হাত আর কাঁধের গঠন নাবিকের মত নয়। ওর ডান চোখের নিচে লক্ষ করেছ?
কুঁচকানো চামড়া? রবিন বলল। করেছি। আমি দেখে ভেবেছিলাম স্বর্ণকার বা ঘড়ির কারিগর। কিন্তু এমন আন্তরিক হয়ে গেল লোকটা, হ্যামবারগার কিনে খাওয়াল, ভুলেই গেলাম সব কিছু। হুতোম পেঁচার মত জমিয়ে বসে শুনে যাচ্ছিলাম ওর কথা… কিবোকামিই না করে ফেলেছে ভেবে লাল হয়ে উঠল তার গাল।
তখন আমিও বিশ্বাস করেছি তার কথা, কিশোর বলল। শানকিতে ফেন দিয়ে চুচু করে ডাক দিল আর অমনি খেতে চলে গেলাম। ছি…।
তুমি একা না, আমরাও গেছি, কিশোর নিজেকে এত বেশি দোষারোপ করছে দেখে কষ্ট হলো রবিনের। একটা কথা কিন্তু ঠিক, নিজের পরিচয় ছাড়া আর কোন মিথ্যে বলেনি লোকটা…
হ্যাঁ, কয়েকটা সত্যি কথা বলেছে অবশ্য। ঝড়ে ক্যাপটেন শ্যাটানোগার বোট ডুবে যাওয়ার কথা বলেছে। বিংগো উলফের র্যাঞ্চের ঠিকানা দিয়েছে, সত্যিকার ঠিকানা। তারপর
কিশোরের মত সয় বিচার ক্ষমতা নেই রবিনের, তবে স্মরণ শক্তি খুব ভাল। তারপর, বলেছে, তিমি ট্রেনিং দেয়ার ব্যাপারে খুব উৎসাহ উলফের-তার বাড়িতে যে ম বড় একটা সুইমিং পুল আছে সেকথাও বলল।