বললে তো যাবেই, কিন্তু উচিত হবে না। ইয়ার্ডে অনেক কাজ, বোরিস আর রোভার দুজনেই খুব ব্যস্ত।
তাহলে?
রোলস রয়েসটার কথা একেবারেই ভুলে গেছ? চাইলেই তো পেতে পারি আমরা ওটা।
ঠিকই তো। অনেকদিন চড়ি না তো, ভুলেই গেছি। ফোন করব রেন্ট আ রাইড কোম্পানিতে, হ্যামসনকে?
করে দিয়েছি আমি। এসে পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যেই। চলো, বাইরে যাই।
ওরা বেরোনোর কয়েক মিনিট পরেই ইয়ার্ডের খোলা গেট দিয়ে ঢুকল বিশাল এক গাড়ি, রাজকীয় চেহারা। পুরানো মডেলের এক চকচকে কালো বোলস রয়েস, জায়গায় জায়গায় সোনালি কাজ করা। এক আরবী শেখের জন্যে তৈরি হয়েছিল, শেখের পছন্দ হয়নি, নেয়নি, তারপর রেন্ট আ রাইড কোম্পানি রেখে দিয়েছে গাড়িটা। বাজিতে জিতে তিরিশ দিন ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছিল একবার কিশোর, তিরিশ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর জোরজার করে আরও দুদিন ব্যবহার করতে পেরেছিল। তারপর আর পারবে না, কঠোর ভাবে বলে দিয়েছিলকোম্পানির ম্যানেজার। সেই সময় অগাস্ট নামে এক ইংরেজ কিশোরকে রক্তচক্ষু খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল তিন গোয়েন্দা। যাওয়ার সময় অগাস্ট ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছে, তিন গোয়েন্দা যখনই চাইবে, তখনই তাদেরকে গাড়িটা দিয়ে সাহায্য করতে হবে কোম্পানির, খরচ-খরচা যা লাগে; সব তার।
অগাস্ট চলে যাওয়ার পর গাড়িটা ব্যবহারের তেমন প্রয়োজন পড়েনি, আজ পড়েছে।
গাড়ি থেকে নামল ধােপদুরস্ত পোশাক পরা ইংরেজ শোফার হ্যানসন। বিনীত ভঙ্গিতে সালাম জানাল তিন কিশোরকে।
এই ব্যাপারটা কিশোরের পছন্দ নয়, কিন্তু হ্যানসনকে বললে শোনে না। কর্তব্য পালন থেকে বিরত করা যায় না খাটি ইংরেজ বলে অহঙ্কারী লোকটাকে।
প্রায় নিঃশব্দে ছুটে চলেছে রোলস বয়েস। তিরিশ মাইল পথ পাড়ি দেয়া কিছুই ওটার শক্তিশালী ইঞ্জিনের জন্যে। স্যান পেড্রোতে পৌঁছল গাড়ি। ফোন বুক লেখা ঠিকানা টুকে নিয়েছে কিশোর। সেইন্ট পিটার স্ট্রীট খুঁজে বের করল হ্যানসন।
ডকের ধারে পথ। দু-ধারে পুরানো ভাঙাচোরা মলিন বাড়িঘর, বেশিরভাগই কাঠের। কয়েকটা স্টোর আছে, মাছ ধরার সরঞ্জাম, বড়শিতে গাঁথার জ্যান্ত টোপ আর চকোলেট-লজেন্স থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসই পাওয়া যায় ওগুলোতে।
একটা স্টোরে খোঁজ নিতেই ম্যারিবুর বাড়ি চিনিয়ে দিল। আশপাশের অন্যান্য বাড়ির চেয়ে সুরক্ষিত মনে হলো এটা, তিন তলা বিল্ডি, মাটির নিচেও একটা তলা রয়েছে, তাতে অফিস। জানালায় লেখা রয়েছে? চার্টার বোট ফিশিং।
জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখল কিশোর, একটা ডেক্ষের ওপর একটা ফোন, আর আশেপাশে কয়েকটা কাঠের চেয়ার। একটা প্যাকে ঝুলছে কি সাঁতারের পোশাক আর ডুবুরীর সরঞ্জাম।
দরজার দিকে চলল তিন গোয়েন্দা। এই সময় দরজা খুলে বেরিয়ে এল একটা লোক। আবার লাগিয়ে দিয়ে তালা আটকে দিল। ফিরে কিশোরকে দেখেই চমকে গেল। পকেটে চাবি রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করল, কি চাই?
লম্বা-পাতলা লোক, ঢালু কাঁধ, মুখে বয়েসের রেখা। পরনে মলিন নীল সুট, সাদা শার্ট, খয়েরি টাই।
লোকের চেহারা, পোশাক, আচার-ব্যবহার খুব খুঁটিয়ে দেখা কিশোরের স্বভাব। এসব থেকে লোকটা কেমন স্বভাব-চরিত্রের, কি করে না করে, বোর চেষ্টা করে। তার অনুমান খুব কমই ভূল হয়। এই লোকটাকে দেখে তার মনে হলো, কোন ছোট দোকানে কেরানী কিংবা হিসাব রক্ষকের কাজ করে, কিংবা হয়তো ঘড়ির কারিগর। শেষ কথাটা মনে হলো লোকটার ডান চোখের দিকে চেয়ে।
ডান চোখের নিচেটায় অদ্ভুত ভাবে কুঁচকে গেছে চামড়া, অনেকটা কাটা দাগের মত মনে হয়। হয় মনোকল পরে লোকটা, নয়তো ঘন্টার পর ঘন্টা ম্যাগনিফাইং গ্লাস চোখে আটকে রাখে, ঘড়ির কারিগররা যে জিনিস ব্যবহার করে।
মিস্টার ম্যারিবু শ্যাটানোগাকে খুঁজছি, ভদ্রভাবে বলল কিশোর।
বলো।
আপনি মিস্টার শ্যাটানোগা?
হ্যাঁ। ক্যাপটেন শ্যাটানোগা।
অফিসে ফোন বাজল। দরজার দিকে ঘুরে তাকাল ম্যারিবু, খুলবে কিনা দ্বিধা করল, শেষে না খোলারই সিদ্ধান্ত নিল।
আমাকে দিয়ে আর কি হবে? ম্যারিবুর কণ্ঠে হতাশা। গত হপ্তায় ঝড়ে আমার বোট ডুবে গেছে। লোকে মাছ ধরার জন্যে ভাড়া নিতে আসে, বোট দিতে পারি না।
সরি, বলল রবিন। আমরা জানতাম না।
তোমরা কি মাছ ধরতে যেতে চাও?
শুদ্ধ ইংরেজি বলে, ম্যারিবু। কথায় তেমন কোন টান নেই, তবে বলার ধরনে বোঝা যায়, ইংরেজি তার মাতৃভাষা নয়। হয়তো মেকসিকো থেকে এসেছে, ডাবল রবিন, অনেকদিন আমেরিকায় আছে।
না না, মাছ নয়, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর, আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আপনার মেয়ের কাছ থেকে একটা খবর নিয়ে এসেছি।
আমার মেয়ে? একটু যেন অবাক হলো ম্যারিবু। ও, টিনহার কথা বলছ?
হ্যাঁ।
তা খবরটা কি? জিজ্ঞেস করল ম্যারিবু।
না, তেমন জরুরী কিছু নয়। ওশন ওয়ারল্টে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, এদিকে আসব বলেছিলাম। আপনাকে জানাতে বলল, আজ অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করবে সে।
অ, একে একে কিশোর, রবিন আর মুসার ওপর নজর বোলাল ম্যারিবু। তোমরা তিন গোয়েন্দা?
মাথা ঝাঁকাল মুসা। আবাক হয়েছে, কি করে ক্যাপটেন শ্যাটানোগা তাদের কথা জানল? তারপর মনে পড়ল, টিনহাকে একটা কার্ড দিয়েছিল কিশোর। তাদের কথা নিশ্চয় বাবাকে বলেছে টিনহা।