কিন্তু বলতে গিয়েও কি ভেবে থেমে গেল রবিন। চুপ হয়ে গেল!
তাহলে বলতে পারছেন না এটা কার? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না, আবার মাথা নাড়ল হ্যারিস। মনে হলো, হাসছে।
ঠোঁট পুরোপুরি দেখা যায় না তো, ঠিক বোঝা গেল না। সরি, তোমাদের সাহায্য করতে পারলাম না। মিস কারমাইকেলকে আমার সালাম জানিও।
জানাবে, বলল কিশোর। মূল্যবান সময় নষ্ট করে তাদের কথা শোনার জন্যে বার বার ধন্যবাদ দিল মিস্টার হ্যারিসকে।
দোকান থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
ফুটপাথে তুলে রাখা সাইকেলগুলো স্ট্যাণ্ড থেকে নামাল। সাইকেলের ক্যারিয়ারে খাঁচাটা বসিয়ে বাধছে মুসা। মোড়ের ওপাশ থেকে বেরোল একটা কালো গাড়ি, ওদের পাশ দিয়ে গেল।
সাইকেলে চড়তে যাচ্ছিল মুসা আর কিশোর, থামাল রবিন ইশারা করল অলঙ্কারের দোকানের দিকে!
কি? ভুরু কোচকাল কিশোর।
ওই লোকটা, আবার দোকানের দিকে হাত তুলল রবিন, রিচার্ড হ্যারিস। হয় কবুতরের ক-ও জানে না সে, কিংবা মিছে কথা বলেছে।
কেন? মিছে বলবে কেন? মুসা বলল।
জানি না। সকালে লাইব্রেরি থেকে যে বইটা এনেছি, তাতে লেখা আছে, পুরুষ-মেয়ে নিয়ে কোন কথা নেই, ট্রেনিং পেলে সব হোমারই রেসার হতে পারে। বেশ কয়েকবার ওয়ার্ল্ড চ্যামপিয়ন হয়েছে মেয়ে কবুতর।
ঘড়ি দেখল কিশোর। ডিনারের সময় হয়ে গেছে। চলো বাড়ি যাই। খাওয়ার পর হেডকোয়ার্টারে বসে আলোচনা করব।
ঠিক বলেছ, মাথা দোলাল মুসা, আগে খাওয়া, তারপর অন্য সব। কিন্তু এই টমকে যদি রাখতেই হয়…
মেয়ে তো, হেসে বলল রবিন, টম আর হয় কি করে? টমনী রাখো।
ছেলে হোক মেয়ে হোক, নাম একবার রেখে ফেলেছি, ব্যস। টমই সই। অনেকেই ছেলের নাম রাখে মেয়েদের, মেয়ের নাম ছেলেদের। আমাদের জরজিনা বেগমের কথাই ধরো না, জিনা:শুনতে নাকি তার ভাল লাগে না, বলে জর্জ।
ঠিক আছে, বাবা টমই, যাও, হাত তুলল রবিন।
যা বলছিলাম, টমকে যদি রাখতেই হয়, নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। হেডকোয়ার্টারের ভেতর বড় খাঁচাটা নিয়ে গিয়ে তাতে রাখব। আরামেও থাকবে, নিরাপদও।
রেখো, ফুটপাথ থেকে সাইকেল নামাল কিশোর।
খাওয়ার পর তাদের ব্যক্তিগত ওয়ার্কশপে চলে এল তিন গোয়েন্দা। প্রথমেই কবুতরের বড় খাঁচাটা হেডকোয়ার্টারে ঢোকানোর পালা। দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকবে না। কিন্তু অসুবিধে নেই। আরও অনেক গোপন পথ আছে। মোবাইল হোমের ছাতের স্কাইলাইটের ঢাকনা সরিয়ে সে-পথে ঢোকানো যাবে।
বড় খাঁচাটা নিয়ে জঞ্জালের ওপর দিয়ে উঠে গেল মুসা। অনেক দিন একভাবে পড়ে থেকে থেকে একটার সঙ্গে আরেকটা শক্ত হয়ে আটকে গেছে আলগা জঞ্জাল, মুসার ভারে নড়লও না। কিশোর আর রবিন কবুতর সহ ছোট আঁচাটা নিয়ে দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেলারে ঢুকল। ছাতের ওপর থেকে স্কাইলাইটের ফোকর দিয়ে দড়িতে বেঁধে খাঁচা নামিয়ে দিল মুসা। নিজেও নেমে এল। ভেতর থেকেই আবার লাগিয়ে দিল টাকনা।
ছোট খাঁচা থেকে বড় খাঁচায় কবুতর সরানোয় ব্যস্ত হলো মুসা, রবিন তাকে সাহায্য করল। কিশোর এগোল ডেস্কের দিকে। মুখচোখ উজ্জল। ঢুকেই তাকিয়েছে আগে যন্ত্রটার দিকে। সিগন্যাল লাইট জ্বলছে। তারমানে মেসেজ টেপ করেছে যন্ত্রটা।
রিংকি, ভাবল কিশোর। ও-ই ফোন করেছিল। তাহলে সবুজ গাড়িওয়ালাই… ডেস্কে ঘুরে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসল সে।
শোনো, শোনো, টেপটা চালু করে দিয়ে দুই সঙ্গীকে ডাকল সে।
ফিরে তাকাল মুসা আর রবিন।
সাহায্য! মহিলা কণ্ঠ। সাহায্য চাই।
প্লীজ, সাহায্য করো আমাকে কেঁদে ফেলবেন যেন মিস কারমাইকেল। খুন! এই মাত্র দেখলাম ওর লাশ… কান্নায় রুদ্ধ হয়ে গেল কণ্ঠ। কয়েক মুহূর্ত কোপানোর পর আবার শোনা গেল, হীরা! হীরাকে পিটিয়ে মেরেছে। আরও একটা লাশ পেয়েছি। আমার সুন্দর একটা বাজ পাখি। প্লীজ, সাহায্য করো আমাকে। আমার পাখিগুলোকে খুন করছে কেউ।
৫
তোমাদের কার্ডটা পেয়ে মনে হলো হাতে চাঁদ পেয়েছি, বললেন মিস কারমাইকেল। ওই মুহূর্তে তোমাদের মতই কারও কথা ভাবছিলাম। গোয়েন্দা।
মেসেজ পাওয়ার পরই সাইকেল নিয়ে মিউজিক নেস্ট-এ চলে এসেছে তিন গোয়েন্দা। মিস কারমাইকেলের সাউণ্ডপ্রুফ ঘরে বসে কথা বলছে।
পুলিশকে জানাইনি, কাঁধে বসা তোতাটাকে আদর করলেন মিস কারমাইকেল। ইতিমধ্যেই বার কয়েক ঝামেলা করে গেছে। নালিশ জানিয়েছে, প্রতিবেশীরা নাকি আমার পাখিদের জ্বালায় অস্থির। ভেবেই পাই না, ওদের কি এমন জুালাচ্ছে পাখিগুলো।
আমি আপনার প্রতিবেশী হলে নালিশ জানাতাম না, বহু আগেই তল্লাট ছেড়ে পালাতাম, মনে মনে বলল মুসা।
মহিলার কথা কিশোরের কানে ঢুকছে বলে মনে হলো না। গভীর মনোযোগে লাশ পরীক্ষা করছে। টেবিলে বিছানো সাদা কাপড়ের ওপর রাখা হয়েছে মৃত পাখি দুটোকে। দোয়েলের মাথা থেঁতলে দেয়া হয়েছে, বোধহয় লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে। বাজটার গায়ে কোন ক্ষত নেই। বিষ খাইয়ে মেরেছে, মনে হয়।
বাজটাকে কি খাওয়ান? ফিরে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
মাংস, বললেন মিস কারমাইকেল। জানো নিশ্চয়, ওরা মাংসাশী। সাংঘাতিক ধূর্ত শিকারী। ইদুর, খরগোশ, ছোট ছোট পাখি, যা পায় ধরে খায়। খাওয়ার জন্যেই শিকার করে তো, দোষ দিতে পারি না। তবু একেক সময় মনে হয় বড় বেশি নিষ্ঠুর ওরা।
নিষ্ঠুর প্রতিধ্বনি করল কাঁধে বসা তোতা, নিষ্ঠুর নিষ্ঠুর! এই একটা শব্দই শিখেছে নাকি, ভাবল মুসা।