- বইয়ের নামঃ ভূতের হাসি
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, অ্যাডভেঞ্চার, গোয়েন্দা কাহিনী
ভূতের হাসি
১
সাইকেলের লাইট জ্বেলে দিল মুসা আর রবিন। বাড়ি এখনও মাইল দুয়েক। শীতকালে ক্যালিফোর্নিয়ার এই পার্বত্য অঞ্চলে হঠাৎ করেই রাত নামে।
খাইছে! বলে উঠল সহকারী গোয়েন্দা। আরও আগে রওনা দেয়া উচিত ছিল।
হুঁ, অন্ধকারে হাসল রবিন মিলফোর্ড। খাইছে বলা মুদ্রাদোষ হয়ে গেছে তার বন্ধু মুসা আমানের।
পর্বতের ভেতরে পাহাড়ী নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়েছিল দুই গোয়েন্দা। চমৎকার কেটেছে দিন, আরও ভাল লাগত যদি কিশোর থাকত সঙ্গে। তাদের আরেক বন্ধু কিশোর পাশা, তিন গোয়েন্দার প্রধান। স্যালভিজ ইয়ার্ডে জরুরী কাজ ছিল, তাই যেতে পারেনি।
ধীরে ধীরে প্যাডাল ঘুরিয়ে চলেছে দুই ক্লান্ত কিশোর। পাহাড়ী পথ। এক পাশে পাথরের দেয়াল শুরু হলো।
রাতের অন্ধকার চিরে দিল তীক্ষ্ণ চিৎকার। সাহায্য চায়!
চমকে ব্রেক চাপল মুসা। দাঁড়িয়ে গেল সাইকেল। সামলাতে না পেরে তার গায়ের ওপর এসে পড়ল রবিন, উফ করে উঠল।
ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা, শুনেছ?
মুসার সাইডস্ট্যাণ্ডের ভেতর ঢুকে গেছে রবিনের সামনের চাকা, টেনে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল, শুনলাম তো। কেউ ব্যথা পেল বুঝি?
কান পেতে রয়েছে দুজনে।
দেয়ালের ওপাশে ঝোপের ভেতর কিসের নড়াচড়া।
আবার শোনা গেল চিৎকার।
হ্যাঁ, সাহায্যের আবেদনই। বিপদে পড়েছে লোকটা।
ওদের ঠিক সামনে ভারি একটা লোহার গেট, পাল্লার ওপর কাটা বসানো। দেয়ালের ওপাশে যাওয়ার পথ।
এক মুহূর্ত দ্বিধা করল না আর মুসা। সাইকেল রেখে দৌড় দিল গেটের দিকে।
পেছনে ছুটল রবিন। হাউফ করে কনুই চেপে ধরে দাঁড়িয়ে পড়ল হঠাৎ। ছোট্ট কি যেন জোরে বাড়ি খেয়ে উড়ে গিয়ে পড়ল মাটিতে।
এই যে, নিচু হয়ে জিনিসটা কুড়িয়ে নিল মুসা।
ইঞ্চি-তিনেক লম্বা ধাতব জিনিস, স্পষ্ট দেখা না গেলেও বুঝতে অসুবিধে হলো, পুতুল। তারার আলোয় মৃদু চকচক করছে।
কে ছুঁড়ল, মুসা?
জানি না। দেখো, গলায় ফাঁস লাগানো। বাধা ছিল কোন কিছুর সঙ্গে।
দেয়ালের ওপাশ থেকে ছুঁড়েছে মনে হলো, রবিন বলল। তোমার… থেমে গেল। দেয়ালের ওপাশে পায়ের শব্দ। ঝোপঝাড় মাড়িয়ে ছুটে আসছে।
কি যেন ছুঁড়ে ফেলেছে। দেখো দেখো, চাপা গলায় বলল কেউ।
দেখছি, বস, বলল দ্বিতীয়জন।
গেটের তালায় ঘষার শব্দ, খোলার চেষ্টা চলছে।
দ্রুত এদিক ওদিক তাকাল দুই গোয়েন্দা। বড় একটা ঝোপ দেখে তাড়াতাড়ি গিয়ে তার মধ্যে সাইকেল ঢোকাল, লুকিয়ে বসে রইল ভেতরে। দেয়ালের কাছাকাছি।
মরচে ধরা কব্জায় কিচকিচ শব্দ তুলে খুলে গেল লোহার ভারি পাল্লা, গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একটা আবছা মূর্তি, রাস্তার ধার ধরে দৌড় দিল।
ঝোপের ভেতর দম বন্ধ করে রয়েছে ছেলেরা, দুরুদুরু করছে বুক। তাদের পাশ দিয়ে ছুটে চলে গেল লোকটা।
চেহারা দেখেছ? ফিসফিস করল রবিন।
না। বেশি অন্ধকার।
আমিও না। পুতুলটা খুঁজছে বোধহয়। দিয়ে দেয়া উচিত।
চুপ!
ফুট দশেক দূরে এসে দাঁড়িয়েছে আরেকটা ছায়ামূর্তি। লম্বা, চোখা নাক। পাখির মাথার মত খুদে একটা মাথা, পাখির মতই ঝটকা দিয়ে এদিক ওদিক নড়ছে।
দুজনকে চমকে দিয়ে অদ্ভুত কণ্ঠে হেসে উঠল মূর্তিটা। আতঙ্কে অবশ হয়ে এল মুসার শরীর।
তাদের আরও অবাক করে মানুষের কণ্ঠে কথা বলে উঠল আজব পক্ষীমানব, চলে এসো। এখন পাবে না।
হ্যাঁ, বস্। বেশি অন্ধকার, পথের ধার থেকে জবাব দিল দ্বিতীয় মূর্তিটা। কাল সকালে খুঁজে বের করব।
মাথার কাছে সামান্য কুঁজো কিম্ভুত ছায়াটার। অন্য ছায়াটা তার কাছাকাছি হলো। ঝোপ মাড়িয়ে গেটের দিকে এগোল দুটোই। ভেতরে ঢুকল, বিচিত্র শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল পাল্লা। তালা লাগল আবার। ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল পদশব্দ।
দেখেছ? গলা কাঁপছে রবিনের। মাথাটা দেখেছ? একেবারে পাখি! আর হাসিটা কি জঘন্য। পিলে চমকে যায়। কি ওটা?
আল্লা মালুম।
চলো, ইয়ার্ডে যাই। কিশোরকে বলব।
হ্যাঁ, চলো, মুসা একমত হলো।
সাইকেলে চাপল আবার দুই গোয়েন্দা। জোরে প্যাডাল ঘুরিয়ে চলল। যত তাড়াতাড়ি পারে সরে যেতে চায় ভূতুড়ে এলাকা থেকে। লা ক্যাসিটাস ধরে চলেছে ওরা। পেছনে আবার শোনা গেল অট্টহাসি, খান খান করে দিল যেন পাহাড়ী রাতের জমাট নিস্তব্ধতা।
গতি আরও বাড়াল ওরা। গিরিপথ পেরিয়ে এসে সামনে রকি বীচের পরিচিত আলো দেখার আগে কমাল না।
২
নিরেট, নিখাঁদ স্বর্ণ! বিড়বিড় করল কিশোর।
হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে পুতুলটা।
দামী? জিজ্ঞেস করল রবিন।
সোনার চেয়েও দামী, মাঝে মাঝে কঠিন শব্দ ব্যবহার, কিংবা দুর্বোধ করে কথা বলা কিশোরের স্বভাব।
সোনা আবার সোনার চেয়ে দামী হয় কিভাবে? বুঝতে পারছে না মুসা।
হাসিতে বিকশিত পুতুলটা ঠকাস করে টেবিলে নামিয়ে রাখল কিশোর। ঋষিদের মত আসন পেতে বসল সোনার পুতুল। দেখেছ, কি যত্ন করে খোদাই করেছে? দক্ষ শিল্পীর কাজ। মাথায় দেখো, যেন পালকের মুকুট। শিল্পী রেড ইনডিয়ান। অনেক পুরানো। এ-রকম জিনিস মিউজিয়ামে দেখেছি।
হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা।
পুরানো একটা মোবাইল হোম, ট্রেলার, বাতিলই কিনে এনেছেন কিশোরের চাচা রাশেদ পাশা। বিক্রি করা যায়নি ওটা। দিয়ে দিয়েছেন ছেলেদেরকে। লোহালক্কড় আর পুরানো জঞ্জালের তলায় চাপা পড়েছে ওটা এখন, বাইরে থেকে চোখে পড়ে না।