সে তো আর কল্পনা করেনি, কার পাল্লায় পড়েছে, হাসল মুসা।
তিন গোয়েন্দাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ভুলই করেছে সে, স্বীকার করলেন পরিচালক। তারপর?।
রিংকি গেল ভয় পেয়ে, আগের কথার খেই ধরল কিশোর! সে চাইল, আমাদের সন্দেহ হ্যারিসের ওপর পড়ুক, একই সঙ্গে টমকে ছেড়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে হ্যারিসকেও ঠাণ্ডা রাখতে চাইল, তাই ফোন করল আমাদেরকে। টমকে নিয়ে যেতে বলল। গেলাম। পাখিটা ছিনিয়ে নিল আমার কাছ থেকে।
থামল কিশোর। আমাকে বোকা প্রায় বানিয়েই ফেলেছিল। আবছা অন্ধকারে এক পলকের জন্যে চেহারা দেখেছি তার। তাছাড়া মিস কারমাইকেলের বাগানে যে চেহারা দেখেছি, ওটা সেই একই চেহারা।
সন্দেহ শুরু করলে কখন?।
বাগানেই সন্দেহ করেছি। সাইকেলের আলো মুখে পড়ায় যখন ঘাবড়ে পালাল। এক বাড়ি মেরে মিস করেছে, আরও তো মারতে পারত। তা না করে দৌড়, ভয় যে পেয়েছে সেটা প্রকাশ করে দিল। তারপর পেলাম পায়ের ছাপ। তবে স্পষ্ট করে দিয়েছে মুসা…
আমি? সহকারী গোয়েন্দা অবাক।
হ্যাঁ, তুমি, মানে তোমার বাবার কালো চশমা। সেদিন তুলসীবনে ওটা পরেই ঘুমিয়েছিলে, তোমার চোখ দেখতে পাইনি। শিওর হয়ে গেলাম, কেন চশমা না পরে সামনে আসে না রংকি। কারণ, তার চোখ মিটমিট করার মুদ্রাদোষ আছে। চশমা ছাড়া লুকায় কি করে?
হুঁ, চেয়ারের হাতলে আস্তে আস্তে চাপড় দিলেন পরিচালক। তা, মিস কারমাইকেল কেমন আছেন? তার পাখি খুনের রহস্য তো ভেদ হলো।
ভাল, হেসে বলল মুসা। তার বাজ পাখিকে বিষ খাওয়াবে না আর কেউ। তবে হীরার কথা তুললেই মন খারাপ হয়ে যায়।
দোয়েল তো আরেকটা আছে…কি যেন নাম…
পান্না। কিন্তু ওটা তো হীরার মত মুক্তো আনে না। আনে যত্তোসব চুলদাড়ি, ভাঙা কাচ…
তবে দাড়ি পেয়ে কিশোরের সুবিধে হয়েছে, বললেন পরিচালক। তাই না, কিশোর?
হ্যাঁ, স্যার। রিংকির দাড়িগোঁফ যে নকল, বুঝতে পেরেছি।
দরজায় নক করে ভেতরে ঢুকল মিস্টার ক্রিস্টোফারের বেয়ারা। এক হাতে কয়েকটা খাবারের বাক্স, আরেক হাতের তালুতে বসে আছে একটা হোেতা।
মুসার উজ্জ্বল চোখের দিকে চেয়ে ব্যাখ্যা করলেন পরিচালক, জানি তো, অনেক কথা থাকবে তোমাদের। তাই আসছ ফোন পেয়েই অর্ডার দিয়ে রেখেছি…বেয়ারার দিকে ফিরলেন! কার তোতা ওটা? কোথকে আনলে?
মুসা আমানের সাইকেলে বসা দেখলাম, জবাব দিল বেয়ারা। খালি চেঁচাচ্ছিল। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভাবলাম, ওনাদেরই কারও, তিন গোয়েন্দাকে দেখাল সে! আসবে নাকি জিজ্ঞেস করতেই উড়ে এসে বসল হাতে। রেখে আসতে পারলাম না।
এটাই মিস কারমাইকেলের সেই তো নাকি? মুসাকে জিজ্ঞেস করলেন পরিচালক।
হ্যাঁ, স্যার, বলল মূলা। তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম, তোতাটা কিছুঁতেই ছাড়ল, তাই সঙ্গে নিয়ে এসেছি। মিস কারমাইকেলকে বলেছি, সন্ধ্যায় ফিরিয়ে দিয়ে আসব।
জিম বলছে, কিছু নাকি বলছিল।
কি রে, কি বলছিলি? তোতাটাকে হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা।
যেন মুসার প্রশ্নের জবাবেই গেয়ে উঠল তোতা, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
ভুরু কুঁচকে মুসার দিকে তাকালেন পরিচালক। চোখ নাচালেন, অর্থাৎ মানে কি?
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, স্যার, বলল মুসা। সেদিন সন্ধ্যায় গেয়েছিলাম আমরা, শিখে নিয়েছে।
কি মিস্টার, খাবারের বাক্স খুলতে খুলতে তোরাটার দিকে ফিরে চাইল বেয়ারা, বাড়ি আমেরিকায়, থাকো আমেরিকায়, খাও এখানকার, গান বাংলাদেশের কেন? খুব খারাপ কথা। .
নিষ্ঠুর! চেঁচিয়ে উঠল তোতা। নিষ্ঠুর! নিষ্ঠুর!
হেসে উঠল তিন গোয়েন্দা। সদাগম্ভীর চিত্রপরিচালক পর্যন্ত সব কিছু ভুলে হেসে উঠলেন হো হো করে।