কিন্তু কোন পথে আসে, জানত না, রবিনের কথার রেশ ধরে বলল মুসা। চাকরি যাওয়ার পর পেছনে লাগল সে। বের করে ছাড়ল, কোন পথে মুক্তো আসে।
আকাশ পথে, চেয়ারে হেলান দিলেন পরিচালক। তাতেই মতলবটা মাথায় ঢুকল রিংকির, ওরা যদি কবুতর দিয়ে আনাতে পারে, সে কেন পারবে না। এর জন্যে তার নিজস্ব কয়েকটা রেসিং হোমার দরকার শুধু তাই না, কিশোর?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। দুটো সুবিধে ছিল রিংকির। এক, রিচার্ড হ্যারিস একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী, বেশি তাড়াহুড়ো করতে গেলে যে বিপদ হয়, এটা তার জানা, ফলে ধীরে সুস্থে এগোচ্ছিল সে। হপ্তার নির্দিষ্ট কয়েকটা দিনে কেবল কবুতর রেখে আসত হ্যারিকিরির ভ্যানে, কখনও সকালে, কখনও আগের দিন বিকেলে। হ্যারিকিরির সঙ্গে দেখা করত না সে, খুব হুশিয়ার লোক, টাকা দিত মাসে একবার। তা-ও হাতে হাতে নয়, খামে টাকা ভরে খাঁচার সঙ্গে টেপ দিয়ে আটকে চীজকুথ মুড়ে রেখে আসত ভ্যানে, কবুতরের সঙ্গে।
তবে জরুরী দরকার পড়লে দেখা করতেই হত, যোগ করল কিশোর। তেমন একটা জরুরী অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলাম আমরা, টমকে নিয়ে তার কাছে গিয়ে। ভয় পেয়ে যায় হ্যারিস, ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করার জন্যে ছোটে হ্যারিকিরির বাড়িতে। আমাদের সঙ্গে সেদিনই দেখা হয়েছিল তার।
তোমাদেরকে লাঞ্চ খাইয়েছে যেদিন, মাথা নোয়ালেন পরিচালক। কিশোর, দ্বিতীয় সুবিধেটা কি?
হ্যারিকিরি জাপানী, বলল কিশোর। মাঝারি উচ্চতা, মুখ ভর্তি দাড়িগোঁফওয়ালা যে কোন আমেরিকানের চেহারা তার কাছে একরকম। দূর থেকে পোর্টিকোর ম্লান আলোয় আলাদা করে চিনতেই পারে না। অয়েলস্কিন পরে, নকল দাড়িগোঁফ লাগিয়ে যখন যেত রিংকি, ভ্যানে কবুতর রাখতে, বুঝতেই পারত না হ্যারিকিরিযে লোকটা হ্যারিস নয়। আড়ালে থেকে লক্ষ রাখত ব্লিংকি, হ্যারিস আসে কিনা, যদি না আসত, খাঁচায় ভরা নিজের কবুতর নিয়ে গিয়ে রেখে আসত ভ্যানে।
হুঁ, বুদ্ধিটা ভালই, বললেন পরিচালক।
হ্যাঁ, ভালই চলছিল বেশ কিছুদিন। হ্যারিকিরি টের পাচ্ছিল না, ফলে ব্রংকিও মুক্তো পাচ্ছিল। বাধ সাধল মিস কারমাইকেলের শিকারী বাজ।
রিংকিকে নিশ্চয় চেনেন মিস কারমাইকেল, না? জিজ্ঞেস করলেন পরিচালক। অনেক দিন হ্যারিসের ওখানে চাকরি করেছে লোকটা, মহিলাও দামী কাস্টোমার, পরিচয় হয়ে যাওয়ার কথা। তারমানে মহিলার বাড়িও চেনে। কবুতর যখন ফিরল না একদিন, নিশ্চয় খোঁজখবর নিতে শুরু করল। সন্দেহ করল, মিস কারমাইকেলের বাজপাখিই এজন্যে দায়ী। ব্যস, গিয়ে শুরু করল বাজগুলোকে বিষ খাওয়ানো, ঠিক বলিনি?
হ্যাঁ। আরেকটা গোলমাল হলো, হঠাৎ করে বাড়ি বদল করল হ্যারিকিরি। ওদিকে পাওনাদারেরা চাপ দিতে শুরু করেছে। টাকার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠল রংকি। হ্যারিকিরিকে অনুসরণ করে তার বাড়ির খোঁজ বের করা ছাড়া আর কোন উপায় দেখল না সে। সেদিন সেজন্যেই বসেছিল সে স্ন্যাকস রেস্টুরেন্টে। তাড়াহুড়োয় ভুলে দু-আঙুলার খাঁচাটা ফেলে যায়।
হুঁ, এই প্রশ্নটারই জবাব পাচ্ছিলাম না, ওপরে নিচে মাথা দোলালেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। তারপর কি করল? দু-আঙুলাটাকে বদলে আনল কেন আবার?
হ্যারিকিরির পিছু নিয়ে তার নূতন বাড়িতে চলে গেল রিংকি, বলে গেল কিশোর। লুকিয়ে রইল দূরে, চোখ রাখল বাড়ির ওপর। সেদিন বিকেলেই এল হ্যারিস, কবুতর নিয়ে। আগের দিন বাড়ি বদলেছে হ্যারিকিরি, ঝামেলা ছিল, ফলে ছুটি নিতে হয়েছে, তাই পরের দিন ছুটির মধ্যে কাজ করে দেয়ার কথা। দুদিন মুক্তো পায়নি, তাই হ্যারিসও সেদিন কবুতর নিয়ে এসেছে। ভ্যানের পেছনে খাঁচা রেখে সে চলে গেল। ব্লিংকির তখন টাকার খুব দরকার। সে গিয়ে খাঁচাটা বের করে নিয়ে এল, তার নিজের কবুতর রাখবে তার জায়গায়। কিন্তু রেস্টুরেন্টে ফোন করে করে জানল, তার খাঁচা নিয়ে গেছি আমরা। ফলে আমাদের খুঁজে বের করতে হলো তাকে। হ্যারিসের কবুতরটা ছাড়তে সাহস হয়নি তার, ওটা ফিরে যাবে বাড়িতে, তাহলে গণ্ডগোল লাগবে। তাই তারটা খাঁচা থেকে বের করে নিয়ে হ্যারিসেরটা ভরে রেখে গেল।
কিন্তু পরদিন দুপুরে তার কবুতর মুক্তো নিয়ে ফেরেনি, বললেন পরিচালক।
না, মাথা নাড়ল কিশোর। এর আগেও দুটো কবুতর আর মুক্তো খুইয়েছে রিংকি। তিন নম্বরটা হারিয়ে ভীষণ রেগে গেল সে। মিস কারমাইকেলের বাড়ি গিয়ে বাজপাখিকে বিষ খাওয়াতে শুরু করল। আমাদেরকে ঢুকতে দেখেছে সে। দোয়েলটা যে তার মুক্তো চুরি করেছে, এটাও নিশ্চয় দেখেছে।
তাই মাথা আর ঠিক রাখতে পারেনি, মুচকি হাসলেন পরিচালক। রাগের মাথায় পিটিয়ে মেরেছে দোয়েলটাকে।
আমাদেরকে বেরোতেও দেখেছে সে, আবার বলল কিশোর, টমকে দেখেছে আমাদের সঙ্গে। পিছু নিয়েছে। আমাদেরকে হ্যারিসের দোকানে ঢুকতে দেখে সাংঘাতিক ভয় পেয়েছে।
ফুটপাথে বেরিয়ে দেখেছি আমরা কালো গাড়িটাকে, প্রমাণ দিল রবিন।
নিশ্চয় দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল রিংকি, বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। হ্যারিসের সঙ্গে তোমাদের কি কথাবার্তা হয়েছে, জানার কথা নয় তার।
নহ্যাঁ, হেলান দিল কিশোর। খুব বেশি চালাকি করেছে হ্যারিস আমাদের সঙ্গে। টমকে যেন চিনতেই পারেনি, এমন ভাব দেখিয়েছে। মেয়ে রেসিং হোমার রেস দেয় না, একথা বলে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে আমাদেরকে।