মাথা নাড়ল সে, নিজের কথাই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। তারপর মিস কারমাইকেলের কাছে শুনল, আমরা তাঁকে সাহায্য করছি। তখন খাতির করার চেষ্টা করল আমাদের সঙ্গে। ডেকে নিয়ে গিয়ে খাওয়াল, পাখির খুনীকে ধরে দেয়ার জন্যে উৎসাহিত করল। ধরে নিতে হয়, সে চাইছিল, মিস কারমাইকেলের পাখি খুনের তদন্ত করতে গিয়ে রিংকির কবুতর কিভাবে মারা গেছে সেটা বের করি আমরা। আবার মাথা নাড়ল সে। কিন্তু রিংকি আর হ্যারিস বন্ধু হতে পারে না।
কেন? সঙ্গে সঙ্গে কথাটা ধরল রবিন। পারে না কেন?
ঠোঁট কামড়াল কিশোর। পারে না এই জন্যে, রিংকি আর হ্যারিকিরিকেও তাহলে পার্টনার হতে হয়। তাহলে রিংকির জানার কথা হ্যারিকিরির নতুন বাসার খবর। জানা থাকার কথা, হ্যারিকিরি নতুন বাড়ি নিয়েছে। স্ন্যাকস রেস্টুরেন্টে বসে থেকে অনুসরণ করার দরকার পড়ত না। সবুজ ভ্যানের পিছু নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে দেখে আসার দরকার পড়ত না কোথায় বাড়ি নিয়েছে হ্যারিকিরি।
উঠে দাঁড়াল কিশোর। বাড়ি যাও তোমরা। রাতে বাইরে কাটানোর অনুমতি নিয়ে এসো। দু-ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসবে। স্লীপিং ব্যাগ নিয়ে আসবে সঙ্গে করে।
কেন? রবিন আর মুসা, দুজনেই জানতে চাইল।
কাল সকালে হ্যারিকিরির জন্যে তৈরি থাকতে পারব আমরা।
আবার কি করতে হবে, প্রশ্ন করল মুসা। অনুসরণ?
না, মাথা নাড়ল কিশোর। কেসটার সমাধান করব। খুব সহজ উপায়ে। খাঁচার দিকে তাকাল সে। টমকে দিয়ে ফাদে ফেলব রিংকিকে।
১২
ব্যাগের ভেতরে নড়েচড়ে উঠল কিশোর। সারারাত খোলা আকাশের নিচে শক্ত মাটিতে পড়ে থেকে পিঠ ব্যথা হয়ে গেছে। দূর, সৈকত না কচু, বালি এত শক্ত! চোখ মিটমিট করল, পাতার ওপর থেকে ঝরে পড়ল কয়েক কণা বালি, বাতাসে উড়িয়ে এনে ফেলেছে। শুকনো ঠেট চাটতেই জিভের সঙ্গে মুখের ভেতরে চলে গেল ঠোঁটের বালি। বিরক্ত ভঙ্গিতে মুখ বাঁকাল।
ঘড়ি দেখল সে, ছটা বাজে। যাওয়ার সময় হয়েছে। হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এল ব্যাগের ভেতর থেকে।
অন্য দুই গোয়েন্দা আগেই উঠেছে। টমকে দানা খাওয়াচ্ছে মুসা। রবিন নাস্তা সাজাচ্ছে। কয়েকটা কেক ও এক ব্যাগ দুধ ঠেলে দিল কিশোরের দিকে।
কেকে কামড় দিয়েই আবার মুখ বকাল কিশোর। দাঁতে কিচকিচ করছে বালি। দুধের ব্যাগের কোণা ছিড়ে পাইপ ঢুকিয়ে চুমুক দিল, আস্তে আস্তে টেনে তুলে দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেলল মুখের ভেতরটা, বালি সব পেটে চলে গেল। এইবার কেক খেতে আর কোন অসুবিধে নেই।
দশ মিনিটেই মালপত্র গুছিয়ে তৈরি হয়ে গেল ওরা। টমের খাঁচা চীজকুথ দিয়ে মোড়াতে মুসাকে সাহায্য করল কিশোর। নিজের সাইকেলের ক্যারিয়ারে খাঁচাটা বেঁধে নিল সে। ক্যারিয়ারে মালপত্র বেঁধে নিল মুসা, হ্যাণ্ডেলে ঝুলিয়ে নিল প্ল্যাসটিকের একটা শপিং ব্যাগ!
রওনা হলো, ওরা। মাইলখানেক দূরের পেট্রল স্টেশনে এসে থামল। সেই অ্যাটেনডেন্ট ছেলেটাই ডিউটিতে আছে, মালপত্রগুলো সেখানে রাখার অনুরোধ জানাল মুসা। ঘন্টা দুয়েকের জন্যে মাল পাহারা দিতে রাজি হলো ছেলেটা।…
বেশির ভাগ মাল পেট্রল স্টেশনে রেখে আবার সাইকেলে চাপল তিন গোয়েন্দা। পাহাড়ী পথ ধরে উঠে গেল আধ মাইল, ঝিনুকের ফার্মের দিকে। আগের দিনেই সুবিধেমত একটা জায়গা বেছে রেখেছে কিশোর। বড় রাস্তাটা যেখানে মোড় নিয়েছে, তার পাশে ঘাসে ঢাকা চওড়া এক ফালি জমি আছে, তাতে তুলসী গাছের বড় বড় ঝোপঝাড়।
ঝোপের ভেতরে সাইকেল শুইয়ে রাখলে রাস্তা থেকে দেখা যাবে না। লুকিয়ে ফেলল মুসা আর রবিন। ক্যারিয়ার থেকে খাঁচাটা খুলে নিয়ে কিশোরও সাইকেল লুকাল। তিনজনে এসে বসল তুলসীবনে। সাইকেল পাম্প আছে সবার সাইকেলেই, খুলে নিয়েছে। মুসার হাত থেকে শপিং ব্যাগটা নিয়ে খুলল রবিন। মুঠো মুঠো বেলুন বের করে ভাগ করে দিতে লাগল। নানা আকারের উজ্জ্বল রঙের বেলুন—লাল, নীল, হলুদ, সবুজ। বেলুনের মুখ বেঁধে ফেলতে লাগল ওরা। দেখতে দেখতে পথের ধারে বেলুনের ছোটখাট একটা পাহাড় গড়ে উঠল।
খুব সকালে লোকজন বেরোয়নি, এতক্ষণে একটা গাড়িকেও যেতে দেখা যায়নি.ওপথে। খুশিই হলো কিশোর, নিরাপদে কাজ করা যাচ্ছে। বাতাসও নেই আজ, ভালই হয়েছে, বেলুন উড়িয়ে নিচ্ছে না। দিনের শুরুটা বেশ ভালই।
ব্যাগ খুলে ভঁজ করা এক টুকরো সাদা কাপড় বের করল রবিন। গতরাতে কিশোরের নির্দেশে তৈরি করেছে ব্যানারটা। ভাজ খুলে ছড়িয়ে লম্বা করে দুটো গাছের সঙ্গে কাপড়ের কোণগুলো বেধে দিল ওরা। লাল কালিতে বড় বড় করে লেখা হয়েছেঃ
আমাদের ডানাওয়ালা বন্ধুদের
রক্ষা করুন।
একটা বেন কিনুন।
পথের তীক্ষ্ণ মোড়ের গজ বিশেক দূরে তাকাল কিশোর, খুদে একটা পাহাড় আছে ওখানে, মেসকিট আর তুলসী গাছের ঝোপঝাড়ে ঢাকা।
রবিন, নির্দেশ দিল কিশোর, ওখানে গিয়ে লুকাও। আমার আর মুসার ওপর চোখ রাখতে পারবে। রুমাল আছে তোমর কাছে?
আছে, জিনসের প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করল রবিন। মুসা, এভাবে নাড়ব, সামনে-পেছনে। তাহলে বুঝবে, কাজ হয়ে গেছে।
নীরবে মাথা ঝুকিয়ে সায় জানাল মুসা। এসব ভাল লাগছে না তার। হ্যারিকিরিকে না রাগিয়ে পারবে তো কাজ সারতে? এখন তার মনে হচ্ছে, কারাতে ফাইটে নিশ্চয় ব্ল্যাক বেল্ট আছে জাপানীটার। যদি মুসাকে চিনে ফেলে, সঙ্গে সঙ্গে দুহাত দিয়ে কোপাতে শুরু করবে।